ফাইল চিত্র।
গরম চপ বা বেগুনির সঙ্গে বালিতে ভাজা মুচমুচে মুড়ি। আমবাঙালির কদরের এই খাবার এ বার জায়গা করে নিয়েছিল ২১শে তৃণমূলের সমাবেশ-মঞ্চে। ভরা সভায় এককর্মীর থেকে মুড়ি চেয়ে মঞ্চে আনিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিএসটি চাপানোর প্রতিবাদে সেই মুড়ি হাতে বিজেপিকে নিশানা করে তোপ দাগেন তিনি। মুড়ি যে এ ভাবে রাতারাতি রাজনীতির আলোচনায় ভাগ বসাবে, তা ভাবতে পারছেন না ব্যবসায়ীরাও! মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি তাঁদের একাংশের মনে অন্য ভাবনাও উঁকি দিতে শুরু করেছে। তা হল, বাজার দখলের লড়াইয়ে প্যাকেটবন্দিমুড়ির নাম বদলে ‘মমতা মুড়ি’ করা যায় কি না।
সম্প্রতি প্যাকেটবন্দি মুড়ির উপরে পাঁচ শতাংশ জিএসটি চাপিয়েছে কেন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই নিত্য প্রয়োজনীয় এই খাবারের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাধারণমানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরে সমাবেশে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘মুড়িতেও জিএসটি, চিঁড়েতেও জিএসটি। লোকে খাবে কী?’’ এখানেই না থেমে স্লোগান তুলেছেন, ‘‘আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।’’ খোদ মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে সরব হওয়ায় বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন শহরের মুড়ি ব্যবসায়ীরা। কোলে মার্কেট থেকে পাইকারি হারে মুড়ি কেনা গড়িয়ার এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আমাদের মুড়ির নিজস্ব নাম আছে। জিএসটি চাপালে দাম তো বাড়াতেই হবে। কিন্তু দিদি যে ভাবে আওয়াজ তুলেছেন, সেটাভালই লেগেছে। মন্দার বাজারে মুড়ির সঙ্গে দিদির নাম জুড়লে মনে হয় কপাল খুলে যাবে।’’ বরাহনগরের এক ব্যবসায়ী আবার বললেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা তো প্রায় বাদের খাতাতেই চলে গিয়েছে। ২১ জুলাইয়ের সভার পরে সেই নামই লোকের মুখে ঘুরছে। আমার মনে হয়, দিদির নামে মুড়ি বাজারে আনলে অনেকেই সেটা কিনবেন।’’
সময়ে-অসময়ে খিদে মেটাতে মুড়িতে ভরসা রাখা কসবার রিম্পা হোড়ের সমর্থন রয়েছে ‘মমতা-মুড়ি’ নামে। মজা করে বললেন, ‘‘জনপ্রিয়তার নিরিখে এর চেয়ে ভাল নাম আর হতেই পারে না।’’ তবে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আবার মুড়ির গায়ে রাজনীতির রং লাগাতে নারাজ। ডায়মন্ড হারবারের ব্যবসায়ী সমরেন্দ্রনাথ হালদার কলকাতার বিভিন্ন দোকানে মুড়ি সরবরাহ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি যা করছেন সেটা ভাল। কিন্তু আমাদের মুড়িতে রাজনীতির রং লাগাতে চাই না। প্রতিবাদ যেমন চলছে চলুক, তাই বলে নিজের ব্যবসার নাম বদলাতে পারব না।’’ একই কথা বলছেন বরাহনগরের সুবীর কুণ্ডুও। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। প্যাকেটের উপরে আমাদের সংস্থার নাম দেখলেই সবাই ভরসা করে কিনে নিয়ে যান। নাম বদলে নতুন করে পরিচিতি তৈরির ঝুঁকি এই বয়সে নেব না।’’
তবে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জিএসটি বসলেও এখনও মুড়ির দাম বাড়েনি। চাহিদাও মোটামুটি এক আছে। পুরনো দাম বজায় রাখতে ডিলার এবং নিজেদের লভ্যাংশ কাটছাঁট করে আপাতত বাজার সচল রেখেছেন তাঁরা। কিন্তু মুড়ি তৈরির মূল উপাদান চালের লাগাতার দাম বৃদ্ধির সঙ্গে এই জিএসটির ‘গুঁতো’ মাসের পর মাস সহ্য করে দাম না বাড়িয়েই বা তাঁরা কত দিন চালাতে পারবেন, সে কথাও কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy