দখল: মল্লিকঘাটে যাওয়ার সেতুর উপরেই বিকিকিনি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মল্লিকঘাটে আধুনিক ফুলবাজার তৈরির প্রকল্প এখনও অধরা। শুধু কলকাতা বা রাজ্যের নয়, পূর্ব ভারতের বৃহত্তম এই ফুলবাজারে লাইসেন্স রয়েছে এমন স্থায়ী স্টলের সংখ্যা ২৪৪। রোজ আরও হাজার দেড়েক ফুলচাষি, হকার আসেন সেখানে। মল্লিকঘাট থেকে ফুল যায় অন্য রাজ্যেও। কিন্তু সেই বাজারেই আতঙ্কে থাকেন ফুল ব্যবসায়ীরা। কেন?
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারের পরিকাঠামোর অবস্থা শোচনীয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্ট্র্যান্ড রোড থেকে ফুলবাজারে যেতে যে কংক্রিটের সেতু পেরোতে হয়, বেশি ভিড় হলেই সেটি কাঁপে। উৎসবের সময়ে ফুলের চাহিদা যখন বাড়ে, তখন সেতুর উপরেই বসে পড়েন হকারের দল। সেতুর নীচে দিয়ে আবার চক্ররেলের লাইন রয়েছে। দুর্বল ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত করার সময়ে তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা ভোগেন সকলেই। সেতু থেকে নামার জন্য রয়েছে ছোট ছোট ধাপের সিঁড়ি। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভাঙাচোরা সেই সিঁড়ির উপরের অংশ ভরে থাকে পচা ফুল-পাতা, কাগজ আর প্লাস্টিকে। তার উপর দিয়েই মাথায় ঝুড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন মালবাহকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সব সময়েই পা হড়কে যাওয়ার ভয় কাজ করে। বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। ফুলবাজারে নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় পাঁক আর কাদায় ভরে যায় সিঁড়ি-সহ পুরো বাজার চত্বর। বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে প্রতি পদেই। ফুলবাজার সমিতির সম্পাদক গৌতম সমাদ্দার জানান, সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই।
এই ফুলবাজার আধুনিকীকরণের কথা থাকলেও এখনও তা হয়ে ওঠেনি। রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ২০০৪ সালে ওই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ কোটি টাকা রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, মল্লিকঘাটে ৩৪০০ বর্গফুট জায়গায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের নকশাও তৈরি হয়েছিল। শুধু ফুল বিক্রি নয়, হিমঘর, প্যাকেজিং সেন্টার ও ক্যান্টিন গড়ার পরিকল্পনা ছিল। ফুল রফতানির পরিকাঠামোর উন্নতির কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো কাজ না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। বর্তমানে প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
ফুলবাজার সমিতি সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে ফুলবাজারে আগুন লেগে বহু স্টল পুড়ে যায়। সে সময়ে কলকাতা বন্দরের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়ার কথা হয়। স্থায়ী ফুলবাজার তৈরির ভাবনা বাম আমলে শুরু হলেও তা এখনও বিশ বাঁও জলে। মল্লিকঘাট ফুলবাজার কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার বক্তব্য, ‘‘বিক্রেতাদের পুনর্বাসন ছাড়াও খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এই প্রকল্প আপাতত স্থগিত। তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’
স্বভাবতই নতুন বাজার কবে হবে তা নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছে়ড়ে দিয়েছেন ফুলবাজারের অনেকেই। এখন তাঁরা বেশি চিন্তিত বর্তমান সমস্যা মেটানোয়। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সেতুর উপরে হকার বসতে না দেওয়ার বিষয়টি পুলিশকেও বলা হয়েছে। সেতুতে ওঠার মুখে দু’জন পুলিশ পাহারা দিলেও তাঁরা কেবল বিশেষ কয়েকটি দিনে কড়াকড়ি করেন।’’ তিনি জানান, দুর্গাপুজো, দীপাবলী, কোজাগরী লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজো-সহ কয়েকটি দিনে সেতুর উপরে কাউকে বসতে দেওয়া হয় না। তবে প্রতি বুধবার-সহ মাঝেমধ্যেই বেশ ভিড় হয় ফুলবাজারে। তখন সেতুর উপরে হকার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কোনও হেলদোল থাকে না বলে অভিযোগ গৌতমবাবুর। এ বিষয়ে পুলিশের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজনীতির কারণেই কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy