চিচিং ফাঁক: দরজা খোলা রেখেই (চিহ্নিত) যাত্রী নিয়ে ছুটছে মেট্রো। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
মেট্রোয় ক্রমেই বিভীষিকা হয়ে দেখা দিচ্ছে কামরার দরজা!
দরজা ঠিক মতো বন্ধ না হওয়ায় ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়াটা এত দিনে যাত্রীদের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। এ বার অবশ্য আর দেরি নয়। দরজা বন্ধই হল না একটি এসি রেকের। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে দমদম স্টেশনে। দরজা মেরামতির সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত দরজা খোলা রেখেই তার সামনে রীতিমতো ‘পাহারা’ বসিয়ে চালাতে হল ট্রেন। কোনও মতে কবি সুভাষ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ট্রেনটিকে কারশেডে তুলে দেওয়া হয় মেরামতির জন্য।
দরজা খুলে রেখে মেট্রো দৌড়নোয় বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন যাত্রীদের অনেকেই। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘ওই দরজা কিছুতেই বন্ধ না হওয়ায় সেখানে আরপিএফের সঙ্গে আরও দু’জন মেট্রোকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছিল, যাতে যাত্রীদের কেউ ওই দরজার কাছাকাছি না আসতে পারেন।’’
শেষ পর্যন্ত এই ঘটনার জেরে বড় কোনও বিপত্তি না ঘটলেও মেট্রোয় নিম্ন মানের রেকের বেহাল দশার দিকেই আঙুল তুলেছেন যাত্রীদের বড় অংশ। কেন কলকাতা মেট্রোয় আধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের রেক ব্যবহার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এ দিন বিকল হওয়া এসি রেকটি এর আগে পার্ক স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। ওই রেকটি একাধিক বার নানা সময়ে বিকল হয়েছে। কিন্তু তার পরেও তাপ্পি দিয়ে সারিয়ে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ দিন দমদম স্টেশনে মেট্রোযাত্রীদের মধ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ঠেকাতে সাময়িক ভাবে গেট বন্ধ করে দিতে হয় স্টেশন কর্তৃপক্ষকে। ঠিক কী ঘটেছিল?
সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে দমদম থেকে কবি সুভাষের দিকে রওনা হওয়ার কথা ছিল এসি-১ রেকটির। যাত্রীরা ট্রেনে উঠে পড়লেও দেখা যায়, বেলগাছিয়ার দিক থেকে ওই এসি রেকটির পাঁচ নম্বর কোচের প্রথম দরজাটি কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। মেট্রোর চালক বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মোটরম্যান ও ট্রেনের গার্ড সমস্যা বুঝতে ট্রেন থেকে নেমে আসেন। রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের এক কর্মীকেও ডেকে আনা হয়। এর পরে টানা মিনিট পনেরো ধরে দরজা বন্ধ করার সব রকম চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দরজা বন্ধ করা যায়নি। এ দিকে, স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে। পিছনের বহু ট্রেন আটকে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন বাধ্য হয়ে ওই দরজা খোলা রেখেই ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক জন আরপিএফ এবং দু’জন মেট্রোকর্মী দরজা আগলানোর দায়িত্ব নেন। পরে কারশেডে নিয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভিড়ের চাপে দরজার পাল্লা চ্যানেলের উপরে উঠে যাওয়াতেই সেটি আর বন্ধ করা যায়নি। দরজার সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে ঘোষণা হলেও যাত্রীদের অনেকেই তা ভাল করে শুনতে পাননি বলে অভিযোগ।
কারশেডে মেরামতির পরে বিকেলে ফের ওই রেকটি চালানো হয় বলে মেট্রো সূত্রের খবর। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দরজায় সমস্যা যখন ধরা পড়ে, তখন আর ওই ট্রেন পিছিয়ে আনার উপায় ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে দরজা আগলে ট্রেনটিকে রওনা করাতে হয়।’’ রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটির কথা তিনি মানতে চাননি।
এ দিকে, গত ৬ অগস্ট আত্রেয়ী ভট্টাচার্য নামে সেন্ট জেভিয়ার্সের যে ছাত্রী মেট্রোর দরজায় আটকে গিয়েছিলেন, এ দিনের ঘটনায় পরে রেল মন্ত্রকের উদ্দেশ্যে ফের টুইট করেছেন তিনি। তাতে তিনি লিখেছেন, ফের কলকাতা মেট্রোর গাফিলতি দেখা গেল। ওই তরুণীর প্রশ্ন, তাঁর ঘটনার পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, দরজা বন্ধ না হলে ট্রেন চলতে পারে না। তা হলে এ দিন দরজা খোলা রেখে মেট্রো চলল কী ভাবে? আত্রেয়ীর অভিযোগ, সেই ঘটনা নিয়ে টুইট করার পরে তাঁকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলা হয়েছিল। পরে যখন প্রমাণ হয় যে তিনি মিথ্যা বলেননি (মেট্রোর চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যা নিশ্চিত করেছিলেন), তখন দায়সারা ভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy