বাবার সঙ্গে দেখা হল জগদীশনের। (বাঁ দিকে) আগে যেমন ছিলেন। — দেশকল্যাণ চৌধুরী
‘রজনীকান্ত’ বাবাকে ফিরে পেলেন। সৌজন্যে কলকাতা পুলিশ।
রজনীকান্তের ঠিকানা খোঁজার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বর থেকে। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে বাবা-ছেলের সাক্ষাৎ হল।
মাস তিনেক আগে বেলেঘাটার রাস্তায় বছর তিরিশের এক যুবকের দেখা মিলছিল। তিনি কখনও গাড়িতে ইট ছুঁড়ছিলেন, আবার কখনও পথচারীদের মারধর করছিলেন। কিন্তু চিৎকার করে তিনি কী বলছিলেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না এলাকাবাসীরা। তখন খবর পৌঁছয় বেলেঘাটা থানায়। পুলিশ এসে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। যুবক অবশ্য নাম, পরিচয় কিছুই বলতে পারেননি। তবে কৃষ্ণকায় ওই যুবক যে দক্ষিণী, তা মালুম হয় পুলিশকর্তাদের।
শুকনো মুখে বারবার কোনও রকমে বুঝিয়েছিলেন যে, ই়ডলি খেতে চান। থানার এক পুলিশকর্মী তাঁকে ইডলি কিনে দেন। খাওয়া শেষ হতেই আবার লাফ-ঝাঁপ শুরু করেন যুবক। পুলিশকর্তারা বুঝতে পারেন, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। ইতিমধ্যে তাঁর দক্ষিণী পরিচয় বুঝতে পেরে পুলিশকর্মীরা তাঁর নামকরণ করেন ‘রজনীকান্ত’। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে তো থানায় রাখা যায় না। তাই আদালতের অনুমতি নিয়ে ৪ ডিসেম্বর তাঁকে ভর্তি করা হয় পাভলভ হাসপাতালে। তার পরে দু’মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। আদালতের নির্দেশ মতো বেলেঘাটা থানার পুলিশ হাসপাতালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।
সপ্তাহ খানেক আগে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, আপাতত সুস্থ রজনীকান্ত। তখন পুলিশ তাঁর আসল নাম ও পরিচয় জানতে পারে। জানা যায়, ওই যুবক তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরাম জেলার বাসিন্দা। তাঁর নাম জগদীশন। তাঁর থেকে ঠিকানা জানার পরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ছেলের খোঁজ পাওয়ার পরেই ভিল্লুপুরামের মালান্ডার গ্রাম থেকে ওই যুবকের বাবা এক প্রতিবেশীর সঙ্গে রওনা দেন। শনিবার আদালতের নির্দেশে পাভলভ থেকে কলকাতা পুলিশ তাঁকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, আপাতত অনেকটা ভাল থাকলেও পুরোপুরি সুস্থ নন জগদীশন। তাঁর আরও কিছু দিন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এ দিন জগদীশনের বাবা সরভান্নান জানান, মালান্ডারে তিনি চাষ করেন। ছেলে দর্জির কাজ করতেন। কাজের জন্য ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন জগদীশন। ওখানে তাঁর পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। তার পরে ভারতীয় দূতাবাসের চেষ্টায় তিনি দেশে ফেরেন। তখন থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান। ভিল্লাপুরামে তাঁর চিকিৎসা হয়। সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দেন। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে আবার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ওই বছরের ১২ নভেম্বর থেকে জগদীশন নিখোঁজ। তাঁর থেকেই জানা যায়, ট্রেনে চড়ে তিনি হাওড়া চলে আসেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁর নিজের পরিচয় মনে পড়ছিল না।
এ দিন ছেলেকে কাছে পেয়ে সরভান্নান বলেন, ‘‘ওকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে, বোঝাতে পারব না।’’ সুস্থ জগদীশনকে দেখে পুলিশকর্মীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই যে রজনীকান্ত, কেমন আছো?’ এক গাল হেসে জিভ কেটে ‘রজনীকান্ত’ বললেন ‘‘আমি তো জগদীশন। এখন ভাল আছি, স্যার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy