Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

শহরে জোড়া ধর্ষণ, শিকার বালিকা ও মনোরোগী

রানাঘাটের বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখনই ফের এ শহরে পরপর দু’টি গণধর্ষণের অভিযোগ। একটিতে লেকটাউনে আক্রান্ত এক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ তরুণী এবং অন্য ঘটনায় কসবার আনন্দপুরে এক কিশোরী। লেকটাউনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হলেও, আনন্দপুরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রোহিত দাস ওরফে শম্ভুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

রানাঘাটের বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখনই ফের এ শহরে পরপর দু’টি গণধর্ষণের অভিযোগ। একটিতে লেকটাউনে আক্রান্ত এক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ তরুণী এবং অন্য ঘটনায় কসবার আনন্দপুরে এক কিশোরী। লেকটাউনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হলেও, আনন্দপুরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রোহিত দাস ওরফে শম্ভুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

লেকটাউনে গত ৯ মার্চের ওই ঘটনায় অভিযোগ, পরদিন ওই তরুণী দু-দু’বার থানায় জানাতে গেলেও তাঁর অভিযোগ না নিয়ে উল্টে সেখানে তাঁকে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। শেষ পর্যন্ত সোমবার সল্টলেকের এডিসিপি-র অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই তরুণী। তার ভিত্তিতে এক জনকে আটক করলেও মূল অভিযুক্ত গুলশন কুমারকে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

লেকটাউনের গ্রিন পার্কের বাসিন্দা ওই তরুণীর পরিবার পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছে, গুলশন ও তার তিন বন্ধু মেয়েটির বাড়ির খুব কাছেই মেসে থাকত। সেই সুবাদে ওই যুবকদের সঙ্গে পরিচয় ছিল তরুণীর। সেই পরিচয়ের সূত্রেই গুলশন ওই তরুণীকে ফোন করে জানায়, তাঁর কিছু ছবি তাদের কাছে আছে। তিনি তাদের মেসে গিয়ে দেখা না করলে ছবিগুলি ইন্টারনেটের পর্নো সাইটে দেওয়া হবে। ওই তরুণী পুলিশকে জানান, ভয় পেয়ে গুলশনদের মেসে যান তিনি। অভিযোগ, সেখানে গুলশনদের দেওয়া পানীয় খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পরপর ধর্ষণ করে ওই যুবকেরা।

ওই তরুণীর দাবি, লেকটাউন থানা প্রথমে তাঁর অভিযোগ নেয়নি। যদিও ওই থানার এক অফিসারের দাবি, তরুণী অভিযোগ করার আগে তাঁর দাদা থানায় এসে লিখিত ভাবে জানিয়ে গিয়েছেন, তাঁর বোন কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। চিকিৎসার জন্য পাভলভে ভর্তিও ছিলেন। এর আগেও তিনি এই ধরনের অভিযোগ করেছেন। থানার অফিসারেরা ওই তরুণীকে তাঁর দাদার লেখা চিঠিটি দেখিয়েছেন বলেও ওই অফিসারের দাবি। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ওই তরুণীর দাদার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তারা প্রমাণও পেয়েছে। ওই তরুণীর কিছুদিন পাভলভ হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা জানা গিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।

প্রশ্ন উঠেছে, মানসিক ভারসাম্যহীনতার অজুহাতে কেন ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ নেওয়া হবে না? তরুণীরও প্রশ্ন, “কেন পুলিশ অভিযোগ পেয়েই সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে তদন্ত করবে না?”

এই ঘটনায় লেকটাউন থানার নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্নের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তরুণীর দাদাও। সোমবার তিনি এডিসিপি-র অফিসে গিয়ে জানান, বোনের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা বলে যে চিঠি লেকটাউন থানা দেখাচ্ছে, তা তিনি স্বেচ্ছায় লেখেননি। পুলিশ জোর করে লিখিয়েছে।

এ দিকে, অভিযুক্তদের খোঁজে গিয়ে পুলিশ মূল অভিযুক্ত গুলশনকে না পেলেও এক জনকে আটক করেছে। পুলিশের দাবি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, পেশায় ব্যবসায়ী গুলশন অসমের বাসিন্দা। বাকিরা কলেজে পড়ে।

বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ যাচাই করা হচ্ছে। দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুলশন ও অন্যদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।”

অন্য দিকে, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে বছর ষোলোর এক কিশোরী। ই এম বাইপাস সংলগ্ন রুবি পার্কের বাসিন্দা ওই মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, শনিবার ওই কিশোরী পরিবারের সঙ্গে আনন্দপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। সেখানে পৌঁছনোর পরে রোহিত দাস ওরফে শম্ভু নামে মেয়েটির এক বন্ধু তাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। শম্ভু কসবার বোসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছে, শম্ভু তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। তাই আত্মীয়ের বাড়িতে থাকাকালীন দেখা করতে চেয়ে সে ফোন করে। ওই কিশোরীর অভিযোগ, ফোন পেয়ে দেখা করতে গেলে শম্ভু তাকে একটি ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা পানীয় খেতে দেয়। সেটি খাওয়ার পরেই সে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তখনই ওই যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ঘটনার সময় ওই যুবকের সঙ্গে তার এক বন্ধুও ছিল। সে-ও মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। বাড়ি ফিরে এসে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং সকলকে পুরো ঘটনাটি জানালে পরিজনেরা থানায় শম্ভু ও তার বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। সোমবার শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে ওই নাবালিকাকে নেওয়া হলে মেয়েটিকে হোমে রাখার নির্দেশ দেয় সমিতি।

অন্য বিষয়গুলি:

mental patient minor rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE