আগুনের গ্রাসে আঠা তৈরির কারখানা। চলছে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ। সোমবার তপসিয়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মহানগরীতে ফের আগুন। নিউ মার্কেটের সিটি মার্টের পরে এ বার তপসিয়ায়।
সোমবার ভরসন্ধ্যায় আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে গেল তপসিয়ার একটি আঠা তৈরির কারখানা। মহেন্দ্র রায় লেনে ওই কারখানার আগুন পাশে একটি গাড়ি মেরামতির কারখানাতেও ছড়িয়ে পড়ে। আহত হন স্থানীয় দুই বাসিন্দা এবং এক জন দমকলকর্মী। দমকলের ১০টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় তিন ঘণ্টা পরে, রাত সওয়া ১০টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আগুন লাগে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। ওই আঠা কারখানার পাশের একটি কারখানার মালিক জাকির হোসেন মল্লিক বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। আতঙ্কে কারখানা থেকে বেরিয়ে দেখি, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আঠা কারখানার ভিতরে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে দেওয়াল, ছাউনি ভেঙে দু’টি গাড়ির উপরে এসে পড়ে। গাড়ি দু’টিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। কারখানার আগুন বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বাসিন্দারা দিশাহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। তার উপরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গোটা এলাকা অন্ধকার হয়ে আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। তার মধ্যেই আঠা কারখানার পাশের দু’টি পুকুর থেকে জল তুলে বাসিন্দারাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তখনই দু’জন বাসিন্দা জখম হন। পরে দমকলের ইঞ্জিন এসে ওই দু’টি পুকুর থেকে জল নিয়ে লড়াই চালায়।
এলাকার বাসিন্দা এবং একটি কারখানার মালিকের অভিযোগ, দমকল প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে এসেছে। তাদের দেরির জন্যই আগুন ভয়াবহ আকার নেয়। দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দমকলের গাড়ি ঠিক সময়েই পৌঁছেছে। তবে এলাকাটি ঘিঞ্জি। তার উপরে দু’পাশে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় দমকলের ইঞ্জিনের ঢুকতে সমস্যা হয়।’’ তিনি জানান, কারখানাটি বেআইনি ভাবে চালানো হচ্ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। সেটা প্রমাণিত হলে কারখানা-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কী ভাবে আগুন লাগল, বেশি রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে দমকলের ধারণা, কারখানায় শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল।
এ দিনই সন্ধ্যায় সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে একটি বহুতল অফিস ভবনের আটতলায় আগুন লাগে। দমকলের চারটি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। শর্ট সার্কিট থেকেই একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে আগুন লেগেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান।
দু’সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে মহানগর এবং লাগোয়া বিধাননগর উপনগরীতে চার-পাঁচটি অগ্নিকাণ্ড ঘটল। তার মধ্যে পোশাক বিপণি সিটি মার্টে আগুনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার না-হওয়ায় দমকলমন্ত্রী জাভেদ এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই বিষয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি দমকলের ডিজি-কে।’’ গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে নিউ মার্কেট চত্বরের সিটি মার্টে আগুন লাগে। তাতে কেউ হতাহত হননি ঠিকই। তবে চারতলা দোকানের উপরের দু’টি তলা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দমকল সূত্রের খবর, তারা নিউ মার্কেট থানায় ওই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল। লাইসেন্স ছাড়াই গুদাম তৈরির পাশাপাশি যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনও অভিযুক্তে গ্রেফতার করা হয়নি।
গ্রেফতারিতে গড়িমসি কেন?
লালবাজারের কর্তারা বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় খুন বা ডাকাতির মতো তড়িঘড়ি কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। তদন্ত শেষ হলে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করাই রীতি। সিটি মার্টে এখনও তদন্ত চলছে। প্রয়োজন হলে গ্রেফতারও করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy