উচ্ছ্বাস: মার্কশিট হাতে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর উদ্যাপন একদল ছাত্রীর। শুক্রবার, বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সামনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
করোনা অতিমারির কারণে চলতি বছরে বাতিল হয়েছিল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফল বেরোনোর পরে মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশের অসন্তোষ ছিল নবম শ্রেণিতে প্রাপ্ত নম্বর ঘিরে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও অনেকে জানাল, তারাও একাদশ শ্রেণির নম্বরে সন্তুষ্ট নয়। তাদের অনেকেরই মতে, পরীক্ষা হলে তারা এর চেয়ে বেশি নম্বর পেত। যেমন, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬২ পেয়েও খুশি হতে পারছে না হেয়ার স্কুলের ছাত্র সৌহার্দ্য বিশ্বাস। শুক্রবার স্কুলে মার্কশিট নিতে এসে সে জানাল, একাদশ শ্রেণিতে বেশ কিছু বিষয়ে কম নম্বর পেয়েছে। সৌহার্দ্যর বিশ্বাস, লিখিত পরীক্ষা হলে সে বেশি নম্বর পেত।
শুধু ওই ছাত্রই নয়। একই বক্তব্য শোনা গিয়েছে শহরের বিভিন্ন স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মুখে। তাদের মতে, মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা তা-ও নবম শ্রেণির পুরো পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা তো করোনার কারণে একাদশ শ্রেণির পুরো পরীক্ষাও দিতে পারেনি। ফলে, বেশ কিছু বিষয় তাঁরা গোটা দু’বছর পড়া সত্ত্বেও সেগুলিতে পরীক্ষা না দিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে চলেছে।
গত বছর করোনার কারণে মাঝপথে বাতিল হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক। একই ভাবে বাতিল হয়েছিল একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও। গত বছর যারা একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিল, তারাই ছিল এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তেমনই এক জন সৌতম সাহা জানাল, সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছিল। গত বছর একাদশের পরীক্ষা মাঝপথে বাতিল হওয়ায় পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। এই বছর আবার উচ্চ মাধ্যমিক বাতিল হল। সৌতমের কথায়, ‘‘কোন ভরসায় আমি পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় পড়তে যাব? পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের মতো বিষয়ে পরীক্ষা না হওয়ায় একাদশে সার্বিক ভাবে কম নম্বর পেয়েছি।’’
এর পাশাপাশি, স্নাতক স্তরে অনার্স নিয়ে পড়তে না পারার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে কোনও কোনও পড়ুয়া। তেমনই এক জন, বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র আবির চক্রবর্তী বলে, ‘‘ইচ্ছে ছিল হিসাবশাস্ত্র নিয়ে অনার্স পড়ার। কিন্তু আমি যা নম্বর পেয়েছি, তাতে ওই বিষয়ে অনার্স পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। গত বার একাদশ শ্রেণিতে হিসাবশাস্ত্র পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। ওই বিষয়েই তো আমি বেশি নম্বর পেতাম।’’
মাধ্যমিকের নম্বর, একাদশের নম্বর এবং প্র্যাক্টিক্যাল অথবা প্রজেক্টের নম্বর মিলিয়ে এ বারের মূল্যায়ন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকে। বেহালা এলাকার কিছু পড়ুরার অভিযোগ, যে ক’টি পরীক্ষা একাদশ শ্রেণিতে হয়েছিল, সেগুলির খাতা কড়া করে দেখার জন্য নম্বর কম উঠেছে। কলেজ স্ট্রিটের একটি স্কুলের কয়েক জন পড়ুয়ার আবার অভিযোগ, তাদের প্রতিবেশী স্কুলের কয়েক জন খুব সাধারণ মানের পড়ুয়া বেশি নম্বর পেয়েছে। কারণ, তাঁদের স্কুলের শিক্ষকেরা সে ভাবে কড়া করে খাতা দেখেননি। এক পরীক্ষার্থী সরাসরি অভিযোগ করে, ‘‘আমাদের প্রতিবেশী স্কুলের শিক্ষকেরা তাঁদের স্কুলের পড়ুয়াদের একাদশে বেশি করে নম্বর দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষকেরা তা করেননি। তাই কম নম্বর পেয়েছি।’’
বেশ কিছু স্কুল যে একাদশে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে গরমিল করেছে, ফল প্রকাশের দিনেই তা জানিয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। তিনি জানান, এমন স্কুলের সংখ্যা পাঁচশো থেকে এক হাজারের মতো। মহুয়াদেবী বলেন, ‘‘আমরা খতিয়ে দেখেছি, কিছু স্কুল পড়ুয়াদের একাদশে অতিরিক্ত বেশি নম্বর দিয়েছে। সেই সব স্কুলের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। পরে ওই নম্বরগুলির ঠিক মূল্যায়ন করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy