এ বছর শহরের প্রায় ৮৬টি পুজো কমিটি এমন ভুঁইফোড় শারদ সম্মান থেকে দূরে থাকতে চাইছে। ফাইল ছবি
কোনওটির নাম ‘ছদ্মবেশী শারদ সম্মান’। কোনওটির নাম ‘গোলাপজামুন শারদ সম্মান’। ‘মা নয় মাটি’ বা ‘এ বার বাঁচব’র মতো নামও নেহাত কম নেই। রয়েছে ‘রমেনকুমার থ্যাঙ্কস ক্লাব’ বা ‘মায়ের আদর’-এর মতো মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতিতে দেওয়া পুরস্কারও! কিন্তু এ সব পুরস্কার কারা, কিসের ভিত্তিতে দিচ্ছেন, বিচারকই বা কে— জানা যায় না কিছুই। বহু ক্ষেত্রে পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মেলে না পুরস্কারের স্মারক বা টাকা! অভিযোগ, এমন অদ্ভুত সব নামের শারদ সম্মানের প্রতিযোগিতার আড়ালেই চলে লক্ষ লক্ষ টাকার অসাধু ব্যবসা।
তাই এ বছর শহরের প্রায় ৮৬টি পুজো কমিটি এমন ভুঁইফোড় শারদ সম্মান থেকে দূরে থাকতে চাইছে। সম্প্রতি একটি বৈঠকে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সদস্য ওই সব পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে মোট ৩৫টি সংস্থাকে বেছেছে। ঠিক হয়েছে, ওই সব নামী সংস্থার প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কোনও শারদ সম্মান প্রতিযোগিতায় নাম দেবে না তারা। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত ফোরাম বলবৎ করেনি। এটা ৮৬টি পুজো কমিটির মিলিত সিদ্ধান্ত। ফোরামের সদস্য কোনও পুজো এই সিদ্ধান্ত মানতে পারে, না-ও পারে।’’
শাশ্বত জানান, ওই ৩৫টির মধ্যে রয়েছে বাছা বাছা কিছু সংবাদমাধ্যম, সমাজকল্যাণে কাজ করা সংস্থা এবং বহু বছর ধরে পুজোর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসা বড় কয়েকটি সংস্থা। তবে এই ৩৫টি সংস্থার জন্যও নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। তাদের ব্যানার লম্বায় আট ফুট ও চওড়ায় চার ফুটের বেশি হওয়া চলবে না। যে পুজোর পরিদর্শন হয়ে যাবে, প্রমাণ হিসেবে তাদের স্ট্যাম্প বা কর্মকর্তাদের সই নিয়ে রাখতে হবে।
টালা বারোয়ারির পুজোকর্তা অভিষেক ভট্টাচার্যের দাবি, এমন বহু পুরস্কারই ঘোষণা হয়ে যায় কোথাও না ঘুরে। তিনি জানান, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই পুজো কমিটিগুলির হয়ে প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে দেয় এজেন্সিগুলি। অভিষেক বলেন, ‘‘বেশির ভাগই ভুঁইফোড়। অন্তত ৫০০টি পুজোর নাম পেলেই স্পনসর করছে যারা, তাদের থেকে মোটা টাকা আদায় করে নেওয়া হয়। এর পরে পুজো শেষে কলেজ স্ট্রিট বা শিয়ালদহ থেকে সস্তায় স্মারক কিনে দিয়ে কাজ মিটিয়ে ফেলা হয়, নয়তো এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাথাদের আর দেখাই মেলে না। স্পনসর ভাবে, ৫০০টা পুজোয় ব্যানার লেগে গিয়েছে, আর কী চাই!’’
এক পুজোকর্তার আবার অভিযোগ, ‘‘বহু প্রতিযোগিতায় কোনও বিচারকই আসেন না। বিচারকের দলের বদলে কয়েকটি পরিবার ঘুরতে থাকে।’’ পুজোকর্তাদের বড় অংশেরই দাবি, এতেই শেষ নয়, কুমোরটুলির শিল্পী বা মণ্ডপশিল্পীর সঙ্গেও কথা বলে রাখা হয়। পুজো কমিটিকে বলা হয়, অমুক শিল্পীকে দিয়ে কাজ করালে তমুক পুরস্কার দেওয়া হবে। সব সেটিং রয়েছে।
কিন্তু এর পরেও ‘সিলেক্টেড পুজো কম্পিটিশন’ নামে এই উদ্যোগ থেকে অনেক পুজো কমিটিই বেরিয়ে এসেছে বলে খবর। যেমন, হিন্দুস্থান পার্ক। সেখানকার উদ্যোক্তা সুতপা দাস বললেন, ‘‘উদ্যোগটা ভাল হলেও এই ৩৫টির বাইরেও অনেকে ভাল প্রতিযোগিতা করে। মহিলা-পরিচালিত একটি পুজোও নাম তুলে নিয়েছে শুনছি। মহিলাদের নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার প্রতিযোগিতাও ওই ৩৫-এর তালিকায় নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy