প্রতীকী ছবি।
কেউ পুরনো পাড়া ছেড়ে বছর চারেক আগেই অন্যত্র উঠে গিয়েছেন। কেউ জেলার শ্বশুরবাড়িতে ছ’বছর থাকার পরেও নিজের জরুরি কাগজপত্রে পুরনো ঠিকানা বদলাননি। কারও আবার বাড়িতে প্রোমোটিংয়ের কাজ চলায় অন্য বাসিন্দাদের মতো তিনিও গিয়ে উঠেছেন, অন্য পাড়ায় প্রোমোটারের দেওয়া ভাড়ার ঘরে।
পাড়া ছেড়ে যাওয়া এমন বাসিন্দাদের জন্যই করোনা পরিস্থিতিতে কলকাতার বহু এলাকার বাসিন্দাদের ঘুম উড়েছে। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেকে নিজেদের বর্তমান ঠিকানার বদলে পুরনো পাড়ার ঠিকানা বলছেন। তার ফলে করোনা রোগী না থাকা বাড়ি বা পাড়া রাতারাতি হয়ে উঠছে কন্টেনমেন্ট জ়োন। পরে পুর কোঅর্ডিনেটর রিপোর্ট করলে সমস্যা মিটছে। নয়তো দিনের পর দিন পাড়া পড়ে থাকছে গার্ডরেলে ঘেরা অবস্থাতেই। পুর-প্রশাসনের বড় অংশেরই দাবি, “অনেকে তথ্য গোপন করতে এই কাজ করছেন। অনেকেরই আবার বছরের পর বছর কেটে গেলেও নথিপত্রে নতুন ঠিকানা তোলা হয়নি।”
সম্প্রতি এমনই অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর প্রিন্স গোলাম হোসেন শাহ রোডের একটি ঠিকানা ঘিরে। সেখানকার বাসিন্দা এক মহিলার করোনা ধরা পড়েছে বলে স্থানীয় বরো অফিসে খবর যায় স্বাস্থ্য ভবন থেকে। বরো অফিসের লোকজন বাড়ি স্যানিটাইজ় করতে গিয়ে দেখেন সেখানে ওই নামে কেউই এখন আর থাকেন না। বাড়িটি যাঁর নামে ছিল তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর পালিতা কন্যা সেটি এক প্রোমোটারকে বিক্রি করে দিয়ে নিউ টাউনে ফ্ল্যাট কিনে চলে গিয়েছেন। ওই মহিলারই করোনা ধরা পড়েছে বুধবার।
একই ঘটনা ঘটেছে বিডন স্ট্রিটের এক আবাসনেও। সেখানকার একটি ফ্ল্যাট যাঁর নামে কেনা তিনি মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা। তাঁর একমাত্র পুত্র ওই ফ্ল্যাটটিতে থেকে কলকাতার কলেজে পড়াশোনা করতেন। বছরখানেক ধরে তিনি খড়্গপুরের একটি মেসে থেকে সেখানকার কলেজে পড়াশোনা করছেন। গত সপ্তাহে খড়্গপুরে ওই যুবকের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে কলকাতার ফ্ল্যাটিটি যে আবাসনে, সেটিকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানকার এক বাসিন্দার কথায়, “গ্যাসের ডেলিভারি বয় থেকে খাবার আনানোর সংস্থার লোক— কেউই ঢুকতে চাইছেন না। দু’দিন আগে এক বয়স্ক বাসিন্দার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডাকলেও চালক ঢুকতে চাননি। এ ভাবে চললে তো মুশকিল।”
উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট সংলগ্ন যুগলকিশোর দাস লেনে গোটা পাড়াই কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হয়েছে। যদিও এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “৮, ১৩, ১৭ এবং ১৯ নম্বর বাড়িতে করোনা ধরা পড়েছে বলা হচ্ছে। ৮ নম্বর বাড়ির এক বাসিন্দা চলতি মাসের শুরুতে করোনায় মারা গিয়েছেন এটা ঠিক। কিন্তু বাকি বাড়িগুলির করোনা রোগী এখানে থাকেন কোথায়?” স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর কোঅর্ডিনেটর মীনাক্ষী গুপ্তও বললেন, “এমন প্রচুর ঘটনা পাচ্ছি যেখানে বাড়িতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কোনও করোনা রোগীই নেই। এক কালে যাঁরা এখানে থাকতেন, এখনও তাঁরা পুরনো ঠিকানাই দিচ্ছেন।”
পুর-প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনা পরীক্ষার পরে রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে যেখানে পরীক্ষা হচ্ছে সেখান থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, ঠিকানা স্বাস্থ্য ভবনে জানানোর কথা। ওই ঠিকানা যে থানা এবং বরো এলাকায় সেখানে খবর পাঠানোর কথা স্বাস্থ্য ভবন থেকেই। তবে কি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্তরে গাফিলতি হচ্ছে?
পুর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, “আমি নিজে আক্রান্ত। তবে ঠিকঠাক তথ্য জানিয়ে প্রশাসনকে সাহায্য করা যে কোনও আক্রান্তের পরিবারের কর্তব্য।” যে ১০ নম্বর বরোয় অভিযোগ সব চেয়ে বেশি, সেখানকার কোঅর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্ত বললেন, “নতুন বাড়ির নথি যদি তৈরি না-ও হয়ে থাকে, ব্যাঙ্কের বই বা বিদ্যুতের বিল দেখালেই তো চলে! বদলে পুরনো ঠিকানা দিয়ে বিভ্রান্ত করা অপরাধ।”
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এ তো ভুল ঠিকানা দিয়ে রোগ গোপন করে মহামারি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। মহামারি প্রতিরোধ আইনে এ কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy