অমান্য: ছটপুজোয় রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ঢোকা যাবে না, আদালতের এই নির্দেশ না মেনেই গত বছর পুজো হয় সেখানে। ফাইল চিত্র
ছটপুজোর পরে দুর্গাপুজো। পুজোকে কেন্দ্র করে আদালতের আর একটি নির্দেশের সম্মুখীন রাজ্য। কিন্তু সেখানেই শঙ্কা, গত বছরের ছটপুজোর পুনরাবৃত্তি এ বার দুর্গাপুজোতেও হবে না তো? বিশেষত দুর্গাপুজোর মতো বৃহৎ প্রেক্ষাপট যেখানে জড়িত, সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের সোমবারের নির্দেশ পালন কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন অনেকে।
আর এখানেই আসছে গত বছরের ছটপুজোর প্রসঙ্গ। যেখানে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকে পুজো করেছিলেন পুণ্যার্থীরা। পুলিশ-প্রশাসন ছিল দর্শকের ভূমিকায়। তাদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হওয়ায় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, ধর্ম নিয়ে এমন কোনও কাজ করা হবে না যা কোনও গোষ্ঠীর ভাবাবেগকে আঘাত করে। তাই চলতি বছরে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার অনুমতি পেতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করছে রাজ্য। সেই সূত্রেই দুর্গাপুজোয় কী হতে চলেছে, উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্ন। কারণ, ধর্মীয় ভাবাবেগের বিষয়টি এখানেও জড়িত।
যদিও করোনা-প্রেক্ষাপটে দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা-সহ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে কাজ এত দিনে করে উঠতে পারেনি, কলকাতা হাইকোর্ট শেষ মুহূর্তে সেটাই করল। কোভিড ১৯-এর মতো সংক্রামক রোগে নতুন করে মানুষের স্বাস্থ্য-বিপর্যয় এবং প্রাণ সংশয়ের মতো ঘটনা এড়াতে এই রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পুজো সম্পর্কে যা কিছু নিয়ন্ত্রণের কথা আমরা এত দিন ধরে বলছিলাম, তা পুরোটাই স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে। জনসাধারণের স্বাস্থ্য-বিপর্যয় এড়ানোর জন্য। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে আমরা খুশি।’’
জনস্বার্থ মামলার গুরুত্বের বিষয়টিও এ দিনের রায়ে আর এক বার প্রমাণিত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানান, পুজোগুলিকে অনুমতি দেওয়ার সময়েই রাজ্য সরকারের তরফে এই বিধিনিষেধ আরোপ করতে হত। কিন্তু সেটা তারা না করায় জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে হাইকোর্ট এগিয়ে এল। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘হাইকোর্ট বৈরিতা করে কোনও রায় দেয়নি। বরং সমাজের সব স্তরের মানুষ, বিশেষত চিকিৎসকেরা বার বার এ বছরের পুজো এবং তৎপরবর্তী স্বাস্থ্য-চিত্র নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, সেখানে হাইকোর্টের রায় শুধু ইতিবাচক নয়, জনস্বার্থবাহীও বটে।’’
কিন্তু তার পরেও সমাজের একাংশ গত বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে বলছেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকারের ‘প্রচ্ছন্ন মদতে’ ছটপুজো হয়েছিল। সেই ধর্মীয় ভাবাবেগের যুক্তি দেখিয়ে এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হবে না তো? পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্যের চিত্র কেউই ভুলিনি। ছটপুজোয় গেট ভাঙা হয়েছিল, পুজোয় কী হবে?— সেই প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।’’
যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা চেতলা অগ্রণী পুজোর কর্ণধার ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় মানা হবে।’’ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি কাজল সরকার বলছেন, ‘‘এখনও আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে পাইনি। তা দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে সংক্রমণ রুখতে উদ্যোক্তাদের তরফে এই নির্দেশের আগেই একাধিক ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy