প্রতীকী ছবি।
আগুনের শিখা কত উঁচুতে উঠতে পারে? আর ঘটনার সময়ে তা কত উঁচুতে উঠেছিল?
এই দুই প্রশ্নের সূত্র ধরেই এখন একটি খুনের অভিযোগের তদন্ত করছে মানিকতলা থানা। ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেখা হচ্ছে, মৃত্যুর আগে মৃতের অবস্থান ঘরের কোথায় এবং কী ভাবে ছিল তা-ও। তবে খুনের ঘটনায় এ ভাবে আগুনের উচ্চতা মাপা অভিনব বলেই জানাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ব্যাপারটিকে অভিনব বলেছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা তুষার তালুকদারও। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে এ জিনিস শুনেছি কি না, আজ আর মনে পড়ে না। আগুনের উচ্চতা ধরে তদন্ত সত্যিই অভিনব। তবে ফরেন্সিক গবেষণাই এখন বহু তদন্তের মূল চাবিকাঠি।’’
এক সপ্তাহ আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় মানিকতলা মুরারিপুকুরের বাসিন্দা এক বৃদ্ধার। মৃত্যুর আগে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি পুত্রবধূর বিরুদ্ধে তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। তিনি পুলিশকে বলেন, ‘‘ছেলের বৌ আমার গায়ে আগুন দিয়েছে। আগেও আমায় ধরে মেরেছে।’’ বৃদ্ধার মৃত্যুর পরেই এর পরে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে মানিকতলা থানা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই বধূকেও। পুলিশ অবশ্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে দাবি করেছে, বৃদ্ধা অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সময়ে ওই ঘরে ছিলেন না তাঁর পুত্রবধূ। বৃদ্ধার অভিযোগটি সত্যি কি না, দেখতে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের পাশাপাশি লালবাজারের ফরেন্সিক বিভাগের সাহায্য নেয় থানা।
তাতেই তদন্তের মূল অংশ হয়ে দাঁড়ায় আগুনের শিখার উচ্চতা। লালবাজারের এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, যে ঘর থেকে অগ্নিদগ্ধ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেটির উচ্চতা খুব বেশি হলে ১০ ফুট। ঘরের মেঝে এবং এক দিকের দেওয়ালে আগুনে পোড়ার জন্য হওয়া কালো দাগ থাকলেও অন্য দেওয়াল এবং ছাদ পরিষ্কার। অথচ, মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, বৃদ্ধার দেহের অন্তত ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ওই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘বিজ্ঞান বলে, জীবন্ত কারও গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হলে তিনি বসে থাকবেন না। স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবেই তিনি উঠে দাঁড়াবেন। যাঁর ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে তিনি উঠে দাঁড়ালে ঘরের ছাদে আগুনের শিখার দাগ লাগত। তা ছাড়া কাউকে পোড়ানো হলে তিনি বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে ঘরের নানা জায়গায় দাগ ফেলবেন। এ ক্ষেত্রে সেই চিহ্নও মেলেনি।’’
মানিকতলা থানার এক আধিকারিকের দাবি, মৃতার উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুটের আশপাশে। ফলে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ালে গায়ের আগুন সিলিং পর্যন্ত পৌঁছতই। বৃদ্ধাকে এলাকার এক যুবক ঘরের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বসে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করেন। যদিও ওই পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এখনও চূড়ান্ত মতামত দেওয়ার সময় আসেনি। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত হলেও পরে ধারা বদল করা হতে পারে।’’
ওই এলাকারই বাসিন্দা স্বপন নস্কর বলেন, ‘‘বৃদ্ধা যখন পুড়ছিলেন তখন দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর পুত্রবধূ উপরের ঘরে ছিলেন। চিৎকার শুনে আমরা গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy