Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বিধাননগর পুর-নিগম

ঐক্যের কড়া বার্তা দিতে বৈঠক খোদ মুখ্যমন্ত্রীর

এক দিকে বিধাননগর থেকে রাজারহাট জুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্য দিকে সিপিএমের কিছুটা হলেও মাথাচাড়া দেওয়া এবং সর্বোপরি আসন্ন পুর-নির্বাচনের পরেই ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন।

সমাবেশে (বাঁদিক থেকে) তাপস চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সব্যসাচী দত্ত ও সুজিত বসু। মঙ্গলবার, কৈখালিতে। — নিজস্ব চিত্র।

সমাবেশে (বাঁদিক থেকে) তাপস চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সব্যসাচী দত্ত ও সুজিত বসু। মঙ্গলবার, কৈখালিতে। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

এক দিকে বিধাননগর থেকে রাজারহাট জুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্য দিকে সিপিএমের কিছুটা হলেও মাথাচাড়া দেওয়া এবং সর্বোপরি আসন্ন পুর-নির্বাচনের পরেই ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও এক বার বুঝিয়ে দিতে নিজের ঘরে ওই এলাকার তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার ওই বৈঠকে দুই বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, সুজিত বসু যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন রাজারহাটের প্রাক্তন পুর-চেয়ারম্যান সিপিএম ছেড়ে আসা তাপস চট্টোপাধ্যায়, দলের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রমুখ। এ দিন দুপুরে বিধানসভায় নিজের ঘরে মিনিট কুড়ির ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও গোলমাল নয়। একযোগে লড়তে হবে। বিধাননগর পুর-নিগম আমার চাই।’’ জয়ের পরে বিধাননগর পুর-নিগমের উন্নয়নের রূপরেখা কী হবে, তা-ও তিনি বৈঠকে জানিয়ে দেন বলে দলীয় সূত্রের দাবি।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা পরেই তার প্রতিফলন দেখা গেল কৈখালিতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে, তৃণমূলের নির্বাচনী সমাবেশে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের মতো শীর্ষ স্তরের নেতারা সমাবেশে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন সফল করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নম্র ভাবে বাসিন্দাদের কথা শুনতে হবে। লিপিবদ্ধ করতে হবে অভাব-অভিযোগ।’’

বিধাননগরের মতোই তৃণমূলের নেতারা কৈখালিতেও বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম-ই। এমনকী চার বছর চুপচাপ থাকার পরে ফের সিপিএম যে মাথাচাড়া দিয়েছে, তা-ও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। বামেদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি বিধাননগর পুর-নিগম এলাকায় গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নে শাসক দলের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন নেতারা।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুর-নিগমের অর্থ নতুন করে ওয়ার্ডের ভোল বদল হবে।’’ দলের ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তাপস, সব্যসাচী, পূর্ণেন্দু, সুজিত, দোলা— এরা সামনে থেকে লড়বে, আমরা ওদের পিছনে আছি।’’

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পুর-নিগমের নির্বাচনের পরে বোর্ড গঠন হলে তার ক্ষমতা বাড়বে। ফলে উন্নয়নও হবে দ্রুত।’’

পার্থবাবু এ দিন আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে আমরা লড়াই করি। পুর-নিগমেও তারই প্রতিফলন পড়বে। প্রতিটি আসনেই আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ পুরমন্ত্রীর ফিরহাদেরও দাবি, ‘‘দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সকলে একযোগে লড়বে।’’

বাম আমলে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান, সিপিএম ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে আসা তাপস চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই এ দিন তাঁর কিছু পুরনো কাজের সমালোচনা করেন এলাকার বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের নীতিকে সমর্থন করেই দলে এসেছেন তাপসবাবু।’’ এ ছাড়া, দলের ঐক্যের কথা বলতে গিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলে গোলমাল খুব কম হয়।’’

এত দিন তাপসবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত বিধায়ক সব্যসাচীবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে সফল করতে হবে। এলাকার আগামী রূপরেখাও তৈরি।’’

এ দিনের সভায় ভোটলুঠ-সন্ত্রাস নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা করেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভোট লড়ার উপর জোর দেন তিনি।

এ দিনের ওই সভা পরিচালনা করেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। সমাবেশে ফুটবল খেলোয়াড় হাবিবুর রহমান ও প্রাক্তন সিপিএম নেতা দেবাশিস মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেন।

এ দিকে, এ দিনের ওই সমাবেশকে ঘিরে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে ভিআইপি রোড ও লাগোয়া এলাকায়। যানজট হয় এক দিকে লেকটাউন, অন্য দিকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

তবে নেতারা যতই গোলমাল না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিন না কেন, ইতিমধ্যেই হোর্ডিং ছেঁড়া, বিরোধীদের দলীয় অফিস ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর অভিযোগের তির শাসক দলের দিকেই। এ দিনও সল্টলেকের ছয়নাভিতে সিপিএম প্রার্থী বেলপতি মুণ্ডার প্রচারকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বামেদের প্রচার করতে বাধা দেন, হেনস্থা করেন তাঁদের। পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন বাম নেতারা। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE