ভোগান্তি: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফিরিয়ে দেওয়া হয় যশোদা মল্লিককে (বাঁদিকে), সেখান থেকে পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন আর এক অন্তঃসত্ত্বাবৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে প্রসবযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের পাপিয়া বিবি। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছেন ওই গৃহবধূ। আর জি করেই স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি বিভাগে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন। এ দিনই তাঁকে ভর্তি নেওয়ার কথা ছিল। মেয়েকে ভর্তি করার আর্জি জানিয়ে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাকুতি-মিনতি করছেন বৃদ্ধ বাবা আব্রাহার শেখ। কিন্তু কেউই কোনও কথা শুনছেন না। জুনিয়র ডাক্তারদের এক জন আব্রাহারকে বললেন, ‘‘ডাক্তারেরা মার খাচ্ছে। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কী করব বলুন? দয়া করে মেয়েকে নিয়ে অন্য কোথাও যান।’’ উপায়ান্তর না দেখে পাপিয়াকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে অন্য হাসপাতালে ছুটলেন পরিজনেরা।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার দুপুরের। এন আর এসে রোগীর পরিবারের হাতে এক জুনিয়র ডাক্তারের নিগ্রহের প্রতিবাদে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তিন দিনে পড়ল। এ দিনও শহরের এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন অসংখ্য সঙ্কটজনক রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজন। কিন্তু আউটডোর থেকে জরুরি বিভাগ, সব বন্ধ থাকায় তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
এ দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে এসে আন্দোলনরত চিকিৎসকের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, দ্রুত কাজে যোগ দিতে হবে। নচেৎ কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর এই মন্তব্য কার্যত ঘি ঢালে আন্দোলনের আগুনে। শহরের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এর পরেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল, আর জি কর, এন আর এস এবং কলকাতা মেডিক্যালে আন্দোলন আরও জোরদার করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে দুপুরে আর জি করের সিনিয়র ডাক্তারেরা জুনিয়রদের সমর্থনে হাসপাতাল চত্বরে বিশাল মিছিল করেন। পরে তাঁরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন। বিক্ষোভ ছড়ায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কলকাতা মেডিক্যাল এবং এন আর এসেও। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পদস্থ কর্তারা জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাঁরা রাজি হননি। কলকাতা মেডিক্যালে এ দিন মাত্র একটি গেট খোলা ছিল। বিকেল তিনটে নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে এক রোগী আসার পরে ডাক্তারদের তরফে ওই গেটেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন দুপুরে বনগাঁর ঠাকুরনগর থেকে আর জি করে নিয়ে আসা হয়েছিল দশরথ বৈদ্যকে। দিন কয়েক আগে কেব্ল বাঁধতে গিয়ে মই থেকে পড়ে বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে দশরথের। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। আগেও দশরথের বাঁ পায়ে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু এ দিন তাঁর বাড়ির লোকজন গোটা হাসপাতাল ছুটে বেড়ালেও ন্যূনতম চিকিৎসা মেলেনি। শেষমেশ নিরুপায় হয়ে বিকেলে তাঁরা বাড়ির পথ ধরেন। ন্যাশনাল মেডিক্যালে এ দিনই ভর্তি হতে এসেছিলেন মল্লিকবাজারের বাসিন্দা, অন্তঃসত্ত্বা যশোদা মল্লিক। দুপুর দেড়টা নাগাদ যখন যশোদাকে নিয়ে আসা হয়, হাসপাতালের মূল গেট বন্ধ। গেটের অন্য প্রান্ত থেকে এক মহিলা চিকিৎসক যশোদাকে বলে দেন, ‘‘এখন বাড়ি যান। খুব বেশি যন্ত্রণা উঠলে আসবেন।’’
দিন চারেক আগে বাড়িতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা রবীন দাসের। গত দু’দিন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার আশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু কোথাও ভর্তি হতে পারেননি। এ দিন ন্যাশনাল মেডিক্যালের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি। বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। পোস্তার মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের ফুটপাতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা এক রোগীকে এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু গেটেই অ্যাম্বুল্যান্স আটকে দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়।
আবার হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা অজয় দাস দিন দু’য়েক আগে খাতায়-কলমে ছুটি পেলেও কোনও ডাক্তার না থাকায় বাড়ি যেতে পারেননি। এ দিন অজয় বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ৮ জুন ভর্তি হয়েছিলাম। মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও ডাক্তারবাবু না থাকায় সমস্যা হয়। অনেক অনুরোধের পরে আজ ছুটি পেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy