মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়ার পর সেই দৃশ্য।
শহরের বুক কাঁপিয়ে ফের ভেঙে পড়ল সেতু। এ বার দক্ষিণ শহরতলির মাঝেরহাট ব্রিজ। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই সেতুটি আচমকাই ধসে পড়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ। সেতুর ভাঙা অংশের সঙ্গে সঙ্গে নীচে পড়ে যায় একটি মিনি বাস, তিনটি প্রাইভেট কার, দুটি অ্যাপ ক্যাব এবং দুটি বাইক। তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকে। তবে ভাঙা সেতুর নীচে একটি টিনের ছাউনির ঘরে কয়েক জন এখনও আটকে আছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সেতু ভেঙে পড়ার পর পরই উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন স্থানীয় লোকজন। হতাহতদের নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতাল এবং সিএমআরআই-এ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকাজে নামে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সরকারি ভাবে ডাকা না হলেও, উদ্ধার কাজে হাত লাগান সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থল থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে এক জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। সিএমআরআই-এ ভর্তি করানো হয়েছে ১০ জনকে।
মাঝেরহাট সেতুর যে ভাঙা অংশের নীচে মেট্রো প্রকল্পের কর্মীরা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছিলেন, রাতে সে দিকে ড্রিল মেশিন দিয়ে কেটে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসতে শোনা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। তবে সেখানে ঠিক কত জন এখনও আটকে রয়েছেন, তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি।
গত ছ’ বছরের মধ্যে এই নিয়ে তিনটি সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটল শহর কলকাতায়। এবং তিনটিই শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলিতে। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ মধ্যরাতে ভেঙে পড়েছিল উল্টোডাঙার ওভারব্রিজ। এর পর ২০১৬-র ৩১ মার্চ ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ পোস্তা সেতু। প্রথম ঘটনায় কোনও মৃত্যু না হলেও, দ্বিতীয় ঘটনায় মারা যান ২৭ জন। আরও ৮০ জন জখম হয়েছিলেন।
দেখুন সেই ভয়ানক ভিডিয়ো
দুর্ঘটনাস্থলে এখনও যুদ্ধকালীন তত্পরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। পরিস্থিতির নিয়মিত আপডেট দেখতে নীচে নজর রাখুন:
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেতুর মাঝের অংশ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। সেতুর উপরে যানবাহনগুলি ছিটকে পড়ে। বাস এবং বিভিন্ন গাড়ি-বাইকের আরোহীরা গুরুতর আহত হন। ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে যান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশের ডিজি।
সেতু ভেঙে পড়ার পরের দৃশ্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে এখন দার্জিলিঙে। সেখান থেকেই তিনি উদ্ধার এবং আহতদের চিকিত্সার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন। আগামিকাল তাঁর শহরে ফেরার কথা। সন্ধ্যাবেলায় ঘটনাস্থলে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, “এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল পুর্ত দফতর এবং রেল। আমি জানি না তারা এই সেতুটির পরিস্থিতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল কি না। ঘটনার তদন্তে সব স্পষ্ট হবে।”
আরও পড়ুন: আগে উদ্ধার ও চিকিৎসা হোক, বাকিটা পরে দেখা যাবে: দার্জিলিং থেকে মুখ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন: দেখে নিন ভেঙে পড়া মাঝেরহাট ব্রিজের ছবি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট বার্তায় জানান, ‘কলকাতায় সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে মৃত শীলপাড়ার বাসিন্দা ২৭ বছরের সৌমেন বাগ।
All those who were trapped have been rescued: Firhad Hakim, West Bengal Minister on Majerhat bridge collapse. #Kolkata pic.twitter.com/YP19pgbhpZ
— ANI (@ANI) September 4, 2018
খিদিরপুর ও বেহালার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সেতুটি ৪০ বছর আগে তৈরি করেছিল পোর্ট ট্রাস্ট। পরে সেটি পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখন এই সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পূর্ত দফতর। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছেন, এটা ৪০ বছরের পুরনো সেতু। এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছে মৃত্যুর কোনও খবর নেই। যাঁরা আটকে ছিলেন, তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে।
#WATCH: Rescue teams and ambulances arrive at the spot where part of Majerhat bridge in South Kolkata has collapsed. #WestBengal pic.twitter.com/5pgpxSgwke
— ANI (@ANI) September 4, 2018
Traffic update:-
— DCP Traffic Kolkata (@KPTrafficDept) September 4, 2018
DH Road towards Majherhat Bridge is closed to traffic from NR Avenue. Necessary diversions are on.
বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, “এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকার দায়ী। তিনি শহরের সৌন্দর্যায়নের কথা বলছেন, অথচ পুরনো সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে কোনও নজর নেই।” এই ব্রিজের নীচ দিয়ে গিয়েছে রেললাইন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই ছিল একটি লোকাল ট্রেন। সেতুর যে অংশ ভেঙে পড়েছে, ট্রেনটি তার নীচে থাকলে আরও বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বজবজ-মাঝেরহাট লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে দুর্ঘটনাস্থলের অংশটুকু বাদ দিয়ে দু’দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
আড়াই বছর আগেই পোস্তায় ভেঙে পড়েছিল সেতু। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। আহত হয়েছিলেন অন্তত ৮০ জন।
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy