Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গাফিলতি কেন, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

রিপোর্ট হাতে থাকা সত্ত্বেও মাঝেরহাট সেতু সংস্কারের কাজ কেন ফেলে  রাখা হয়েছিল— বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে জানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাবেভাবে তিনি এ-ও বুঝিয়েও দেন যে, এই ধরনের গাফিলতিতে সরকারের সম্মানহানি হয়। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

রিপোর্ট হাতে থাকা সত্ত্বেও মাঝেরহাট সেতু সংস্কারের কাজ কেন ফেলে রাখা হয়েছিল— বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে জানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাবেভাবে তিনি এ-ও বুঝিয়েও দেন যে, এই ধরনের গাফিলতিতে সরকারের সম্মানহানি হয়।

মঙ্গলবার সেতু ভাঙার দিনেই দার্জিলিং থেকে মুখ্যসচিব মলয় দে-র নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সেই কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে রাখা হয়েছে সেচ, নগরোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পূর্ত দফতরের সচিব, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাত-আট দিনের মধ্যেই রিপোর্ট দিতে হবে। সব কিছুই খতিয়ে দেখবে কমিটি। দোষী যেই হোক, তার শাস্তি হবে। তবে সেই তদন্তের আগে কে দোষী তা বলা ঠিক হবে না।’’ বস্তুত, এ দিনের বৈঠকেও সেতুভঙ্গের জন্য সরাসরি কাউকে দোষারোপ করা হয়নি।

তদন্ত কমিটির পাশাপাশি বিভিন্ন সেতু পর্যবেক্ষণ এবং নজরদারির জন্য তিনটি পৃথক কমিটি (ব্রিজ ইনস্পেকশন অ্যান্ড মনিটরিং সেল) গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ত, সেচ এবং কেএমডিএ-এর কাজ সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলি দেখভাল করবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বহু সেতু বহু বছর আগে তৈরি হয়েছে। সেগুলির কত বয়স হয়েছে, মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে কি না— ইত্যাদি দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করানো উচিত।’’ সেচ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার পরামর্শও এ দিন পূর্ত দফতরের কর্তাদের দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেএমডিএ এলাকার ৪৮টি সেতু, উড়ালপুল ও কালভার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু করতে বলেছেন তিনি।

তবে মাঝেরহাটে সেতু ভাঙার পরের দিন থেকেই কলকাতায় বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে পূর্ত দফতর। প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অন্তত ২০টি সেতু নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। সাঁতরাগাছি, উল্টোডাঙা, শিয়ালদহ, বেলগাছিয়া, টালা, ঢাকুরিয়া, চিংড়িঘাটার মতো সেতুগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ফলে সেগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যে কোনও সেতু তৈরির সময় তার একটি মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয়। সেই মেয়াদ ফুরনোর আগে সেতুটির কিছু সংস্কার করে ফের তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়।

মেয়াদ ফুরনো সেতুগুলির উপর যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে অবিলম্বে সেগুলির সংস্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্টোডাঙা সেতুর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই রেলের সঙ্গে যোগোযোগ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘অতি প্রয়োজনীয় এই কাজগুলির জন্য অর্থ কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু শিয়ালদহ উড়ালপুলের তলায় বাজার বসে গিয়েছে। তারা অন্য কোথাও যেতে চাইছে না। আমাদের তো কাজটা করতে দিতে হবে।’’ নতুন করে কোনও ব্রিজের তলায় যাতে লোকজনের বসবাস শুরু না হয়, তার দিকে পুলিশকে বাড়তি নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রয়োজনে সাধ্যমতো সেই সব মানুষদের জন্য থাকার জায়গা তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্রের খবর, একাধিক পুরনো সেতুর নকশা এবং কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE