Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
পরমা উড়ালপুল

ঝুঁকি নিয়েই চলছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ

ফাঁকা পরমা উড়ালপুল ধরে বাইপাসের দিকে যাচ্ছিল একটি সেডান গাড়ি। চালক দেখলেন, রেলিং থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি বাঁশ। দ্রুত গতির গাড়িটিকে কোনও মতে বাঁক খাইয়ে বাঁশের গুঁতো এড়ালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রঙের কাজের জন্য বাঁশ বেরিয়েছিল। কিন্তু এর জন্য যে কোনও সময়ে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে।’’

চলছে মেরামতি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

চলছে মেরামতি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

শিবাজী দে সরকার ও কৌশিক ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৯
Share: Save:

ফাঁকা পরমা উড়ালপুল ধরে বাইপাসের দিকে যাচ্ছিল একটি সেডান গাড়ি। চালক দেখলেন, রেলিং থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি বাঁশ। দ্রুত গতির গাড়িটিকে কোনও মতে বাঁক খাইয়ে বাঁশের গুঁতো এড়ালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রঙের কাজের জন্য বাঁশ বেরিয়েছিল। কিন্তু এর জন্য যে কোনও সময়ে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে।’’

দুপুরে পরমা উড়ালপুল ধরে ইএম বাইপাসের দিকে যাচ্ছিলেন এক প্রবীণ। উড়ালপুল পেরিয়ে বাইপাসে পৌঁছতে তাঁর সময় লেগেছিল পাক্কা সাতাশ মিনিট! ওই ব্যক্তি জানান, রঙের কাজের জন্যে এই যানজট। কিন্তু যে ভাবে রং করা হচ্ছে তাতে শ্রমিক অথবা গাড়িচালক, যে কারও বিপদ ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে।

গত বুধবার বাগুইআটি উড়ালপুলে রং করার সময়েই বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলা শ্রমিকের। ১১ জানুয়ারি থেকে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। অথচ কোনও সর্তকতা ছাড়াই পরমা উড়ালপুলে কাজ চলছে। যাতায়াতের সময়ে দেখা যায়, উড়ালপুলে রং, বৈদ্যুতিক ও মেরামতির কাজ চলছে। বিপজ্জনক ভাবে বাঁশ রাখা রয়েছে। শ্রমিকদের গা ঘেঁষেই দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে যাচ্ছে। ছড়িয়ে রয়েছে যন্ত্রপাতি।

লম্বা এই উড়ালপুলে গাড়ির গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। অনেকগুলি বাঁকও রয়েছে এখানে। বছর দেড়েকের মধ্যে পরমা উড়ালপুলে ঘটে যাওয়া কয়েকটি দুর্ঘটনায় মারাও গিয়েছেন অনেকে। তাই ওই উড়ালপুলে রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি সূত্রের দাবি, রাস্তা এবং উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কাজে কিছু নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে নিরাপত্তাও একটি বড় দিক।

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-এর অধীন পরমা উড়ালপুল। কেএমডিএ কর্তারা জানান, রাস্তা বা উড়ালপুলে কাজের জন্য নিরাপত্তার নিয়ম অবশ্যই রয়েছে। শ্রমিক এবং কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য যানবাহনের উপরে নজরদারি চলে। গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেডও দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই কাজ করে কেএমডিএ। কিন্তু পরমা উড়ালপুলের ক্ষেত্রে গার্ডরেল বা নিরাপত্তার কড়াকড়ি সে ভাবে চোখে পড়েনি। কেএমডিএ-এর দাবি, পরমা উড়ালপুলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সেটা যদি না মানা হয়, তা হলে ভুল হচ্ছে। রাস্তা মেরামতির কাজে অভিজ্ঞ কলকাতা পুরসভার আধিকারিকেরাও জানাচ্ছেন, রাস্তার কোথাও কাজ করার সময়ে গার্ডরেল বা সেফটি টেপ দিয়ে জায়গাটা ঘিরে রাখা প্রয়োজন।

পুলিশ অফিসারদের যুক্তি ভিন্ন। তাঁরা বলছেন, উড়ালপুলের অনেক জায়গাই সঙ্কীর্ণ। রঙের কাজের জন্য মাঝেমধ্যে যানজট হচ্ছে। তার উপরে গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে কাজ করলে জায়গা আরও কমবে। তাই রাস্তা না আটকে শুধু গাড়িচালকদের সর্তক করতে গার্ডরেল বসানোর কথা ঠিকাদারি সংস্থার। কিন্তু কোনও গাড়ি যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শ্রমিকদের ধাক্কা দেয়? পুলিশের একাংশ এই যুক্তি মানছেন। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে উপায় নেই। তাই রাতে উড়ালপুল আটকে রাস্তা মেরামতি হচ্ছে। সতর্কীকরণ লেখা কিছু বোর্ডও রয়েছে। যন্ত্রপাতি পড়ে থাকা নিয়ে লালবাজারের ট্র্যাফিক কর্তাদের দাবি, কাজের জন্য প্রতি দিন যন্ত্রপাতি উড়ালপুলে তোলা-নামানো সম্ভব নয়। তাই সেগুলি উড়ালপুলের এক ধারে রাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে তপসিয়া থানার সামনে উড়ালপুলের একটি ফাঁকা জায়গায়ও কিছু যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। ‘‘দুর্ঘটনা এবং যানজটের চিন্তা আমরাও করি।’’ মন্তব্য ওই পুলিশকর্তার।

অন্য বিষয়গুলি:

Maintenance work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE