গড়িয়াহাট জোড়া খুন-কাণ্ডের তদন্তে বড়সড় সাফল্য কলকাতা পুলিশের।
গড়িয়াহাট জোড়া খুন-কাণ্ডের তদন্তে বড়সড় সাফল্য কলকাতা পুলিশের। এই খুনে অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ভিকি হালদারকে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ভিকির সঙ্গী শুভঙ্কর মণ্ডলকেও। শনিবার রাত ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যে মুম্বইয়ের পারেল ইস্টের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁদের স্থানীয় আদালতে তোলা হলে ভিকি এবং শুভঙ্করকে পুলিশের হেফজতে রাজ্যে ফেরানোর জন্য ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ভিকি এবং শুভঙ্কর পারেল ইস্টের সেন্ট জেভিয়ার্স স্ট্রিটের কল্পতরু আভানা অ্যাপার্টমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন। পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ভিকিকে ৯টা বেজে ১০ মিনিটে এবং শুভঙ্কর মণ্ডলকে সাড়ে ন’টা নাগাদ গ্রেফতার করে।
এর আগে এই ঘটনার আর এক অভিযুক্ত ভিকির মা মিঠু এবং আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিঠুকে জেরা করে জাহির গাজি এবং বাপি মণ্ডল নামে আরও দু’জনের খোঁজ মেলে। তার পরই এই দু’জনের খোঁজে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় হানা দেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দল। পরে ডায়মন্ড হারবারে একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে গ্রেফতার করা হয় জোড়া খুনের চতুর্থ অভিযুক্তকে। কিন্তু ভিকিকে তখনও পাওয়া যায়নি। অবশেষে মুম্বই থেকে ভিকিকে গ্রেফতার করা হল।
সম্প্রতি সুন্দরবনের নানা প্রান্তে রাতভর তল্লাশি চালিয়ে জাহিরকে একটি দ্বীপ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খুনের পরে দু’দিন বাড়িতে থাকলেও তার পর থেকে পাথরপ্রতিমায় তাঁদের আত্মীয়ের বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন জাহির এবং বাপি। তল্লাশি চালিয়ে জি-প্লটে বুড়াবুড়ির তট থেকে প্রথমে বাপিকে আটক করে পুলিশ। এর পর গাজির খোঁজে ওই রাতেই তল্লাশি অভিযানে গেলে কুকুরের চিৎকারে টের পেয়ে যান তিনি। ফলে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়ে নিকটবর্তী একটি দ্বীপে আশ্রয় নেন জাহির। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে ওই দ্বীপ থেকে জাহিরকে আটক করে লালবাজারে নিয়ে আসেন গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, গড়িয়াহাটের কর্পোরেট-কর্তা সুবীর চাকীকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এই দু’জন।
তবে জাহির এবং বাপি খুনের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও তাঁরা খুনের দায় পুরোপুরি চাপিয়েছেন ভিকির উপরই। জেরায় তাঁরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ‘কাজ’ আছে বলে তাঁদের ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাঁদের এই দাবি এখনই মানতে রাজি নয়। বাপির স্ত্রী বন্দনার দাবি, “ঘটনার পরে বাড়ি ফিরেছিল বাপি। ওর হাত-পা কাঁপছিল। বার বার বলছিল আমাকে বাঁচাও। আমি খুন করিনি। ভিকিই গলায় ছুরি চালিয়েছে।”
বন্দনার আরও দাবি, যাঁকে খুন করা হবে, তাঁর হাত-পা ধরে রাখার জন্য বাপি-সহ তিন জনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার টোপ দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মিঠু। কিন্তু বাপিকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি বলে দাবি বন্দনার। অন্য দিকে, জাহিরকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর বোন নুরজাহান।
ভিকিকে জেরা করে নতুন কোন তথ্য পায়, সে দিকে নজর রয়েছে গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বছরখানেক আগে থেকে। ক্রেতা সেজে সুবীরকে তাঁর কাঁকুলিয়া রোডের বাড়ি কেনার জন্য ডেকে পাঠান ভিকি। ১৭ অক্টোবর সুবীরের কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে পৌঁছন তিনি। খুনের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ছুরি কিনে রেখেছিলেন তিনি। ভিকি, জাহির এবং বাপি-সহ পাঁচ জন সুবীরের বাড়িতে যান। তার পর তাঁরা সুবীর এবং তাঁর গাড়ি চালক রবীন মণ্ডলকে খুন করেন।
খাস কলকাতা শহরের বুকে কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকী ও তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডল খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। ওই ঘটনায় তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করে লালাবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। চার দিনের মাথায় জোড়া খুনের ঘটনায় অন্যতম মূল চক্রী মিঠুকে তারা গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বাপি এবং জাহিরের কথা। শেষে ধরা পড়লেন ভিকিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy