Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Lockdown in Kolkata

খাতায়-কলমে লকডাউন হলে রোগ ছড়াবেই

এ বার লকডাউনের নিয়মকানুন কড়া ভাবে না মানলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

শৃঙ্খল: কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়া হচ্ছে বাঁধন। বৃহস্পতিবার ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া নর্থ রোডে। নিজস্ব চিত্র

শৃঙ্খল: কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়া হচ্ছে বাঁধন। বৃহস্পতিবার ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া নর্থ রোডে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৫:০৫
Share: Save:

জুনের প্রথম দু’সপ্তাহে গড়ে যত জন রোগী সংক্রমিত হয়েছিলেন, পরের দু’সপ্তাহে তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে সার্স কোভ ২ ভাইরাস। আর তার ফলেই এখন হুড়মুড়িয়ে বেড়ে চলেছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। পয়লা জুন থেকে বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ৯ জুলাই পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সংক্রমণ ঠেকাতে ন্যূনতম নিয়ম না-মানাই এ ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

আর তাই এ বার লকডাউনের নিয়মকানুন কড়া ভাবে না মানলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, তথ্য অনুযায়ী, পয়লা জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রাজ্যে নতুন করে কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছিল ৫৯৯৩ জন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪০০ জন নতুন সংক্রমিত হয়েছিলেন। পরবর্তী ধাপে, অর্থাৎ ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭০৬৫ জন। এই পর্বে প্রতিদিন গড়ে ৪৭১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জুনের শেষ পাঁচ দিনেই (২৬-৩০ জুন) নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মোট ২৯১১ জন। অর্থাৎ ওই সময়ে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮২জন করে!

বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, মধ্য জুনের আগে পর্যন্ত এপিডেমিক কার্ভ ততটা আশঙ্কাজনক ছিল না। কিন্তু ২৬ জুনের পর থেকেই স‌ংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে এবং তা এখনও অব্যাহত। শুধু পয়লা জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্তই নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫২ জন। অর্থাৎ, গত ন’দিন গড়ে ৮১৭ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, খুব দ্রুত প্রতিদিন গড়ে হাজার জন নতুন করে সংক্রমিত হতে চলেছেন। যেমন বৃহস্পতিবারই প্রথম বার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৮৮ জন।

আরও পড়ুন: বিকেল হতেই পুলিশি নজরে বন্দি কন্টেনমেন্ট জ়োন​

শুধু কলকাতার কথাই যদি ধরা যায় তা হলে দেখা যাবে, ২৯ জুন থেকে শহরেও নতুন সংক্রমণের হার বেড়েছে। কলকাতার সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সেস’-এর অধ্যাপক সিতাভ্র সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘এই হারে সংক্রমণ চলতে থাকলে ১৫-১৮ জুলাইয়ের মধ্যে কলকাতার অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’’ সরকারি তথ্য বলছে, এ দিন পর্যন্ত শহরে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ছিল ২৯১০ জন।

কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, ‘‘প্রতিদিন যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে দৈনিক গড়ে হাজার জনেরও বেশি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠের নিস্পৃহ ভাবই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখনও পাড়ার মোড়ে-মোড়ে জটলা, আড্ডা, জমায়েত সবই চলছে। মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই! শহরের কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রাস্তায় লোকজনকে দেখে মনে হয় না যে আমরা প্রতিদিন এত বড় বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে ঢুকলে বোঝা যায় প্রকৃত অবস্থাটা। সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি কী হবে, সেটা কেউ জানেন না।’’

গণিতের অধ্যাপক তথা ম্যাথেমেটিক্যাল বায়োলজিস্ট প্রীতিকুমার রায়ের বক্তব্য, ‘‘লকডাউন তুলে দিলে মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কোনও ভাবেই আন্দাজ করা যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ লকডাউন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’’ যদিও এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘লকডাউন করে কিন্তু সংক্রমণ কমানো যায়নি। ২৫ মার্চ দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা যেখানে ছিল ৫৬২ জন, সেখানে ১৭ মে সংক্রমিত দাঁড়িয়েছিল ৯০ হাজার ৯২৭ জনে। ফলে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি না মানলে বার বার লকডাউন করেও কিছু হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown in Kolkata Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy