প্রতীকী ছবি
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: নরেন্দ্রপুরে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে পিষে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল একটি গাড়ি। স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন গাড়ি চালানো শিখতে বসা এক মহিলা। পাশে ছিলেন না প্রশিক্ষিত কোনও চালক।
ফেব্রুয়ারি ২০১৯: বছর তিরিশের এক চালক ‘লার্নার্স’ লাইসেন্স হাতে পেয়েই রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে পিষে দেন এক মহিলাকে। তাঁর পাশেও কোনও প্রশিক্ষিত চালক ছিলেন না!
জুন ২০২০: যোধপুর পার্কে কোনও রকম লাইসেন্স ছাড়াই নিজে নিজে গাড়ি চালানো শিখতে বেরিয়ে এক বৃদ্ধকে পিষে মারেন একটি বহুজাতিক সংস্থার পদস্থ কর্তা। পুলিশকে তিনি জানান, মাইনে করা চালক রয়েছে তাঁর। তিনিই তাঁকে রোজ সকালে গাড়ি চালানো শেখাতেন। ঘটনার দিন চালক আসেননি। তাই তিনি নিজেই গাড়ি নিয়ে শিখতে বেরিয়ে পড়েছিলেন।
ডিসেম্বর ২০২০: বেহালার জয়শ্রী পার্কের কাছে চালককে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালানো শিখছিলেন কলকাতা পুরসভার এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারানোয় গাড়িটি সোজা ঢুকে যায় রাস্তার ধারের একটি বড় পুকুরে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুরে নেমে দু’জনকে উদ্ধার করলেও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারকে বাঁচানো যায়নি।
গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে ঘটিয়ে ফেলা এমন দুর্ঘটনার অন্ত নেই শহরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নিয়ম উড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন যাঁরা, তাঁদের না আছে লাইসেন্স, না আছে ট্র্যাফিক-বিধি সম্পর্কে কোনও রকম ধারণা। বহু ক্ষেত্রেই তাঁদের সঙ্গে থাকছেন না সরকারি খাতায় নথিভুক্ত কোনও প্রশিক্ষক বা নিদেনপক্ষে লাইসেন্সধারী কোনও চালকও। আনাড়ি হাতে স্টিয়ারিংয়ে বসে অন্যের বিপদ ডেকে আনার ক্ষেত্রে নবতম সংযোজন পঞ্চসায়র থানা এলাকার নিউ গড়িয়া কোঅপারেটিভ আবাসনের ঘটনা। যেখানে নতুন কেনা স্বয়ংক্রিয় (যে গাড়িতে ক্লাচ ও গিয়ার থাকে না) গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে এক বিজ্ঞানীকে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য পুলিশের এক প্রাক্তন অফিসারের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার সময়ে তাঁর পাশে কোনও প্রশিক্ষিত চালক ছিলেন না। যিনি ছিলেন, তিনি গাড়ির শোরুমের এক কর্মী। শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নিয়মকানুন বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন তিনি। গাড়ি চালাতে শেখানো তো দূর, তিনি নিজেই গাড়ি চালাতে পারেন না! কিন্তু এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই নানা মহলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পর্যাপ্ত নজরদারি এবং সচেতনতার প্রচার চালানো হলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে কী করে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটরযান আইন অনুযায়ী, গাড়ি চালাতে শেখার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-বিধি রয়েছে। নথিভুক্ত ড্রাইভিং স্কুল থেকে প্রথমে গাড়ি চালানো শিখতে হয়। কেউ নিজের গাড়ি নিয়ে শিখতে চাইলে পাশে স্থায়ী লাইসেন্সধারী চালক থাকা বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রেও পাশে বসা লাইসেন্সধারী চালকের কাছে গাড়ির অন্তত ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা। গাড়ি চালানো শেখার কথা ঘন জনবসতি থেকে দূরে, ফাঁকা জায়গায়। শেখার পরে শিক্ষানবিশ চালককে পরিবহণ দফতরের লার্নার্স লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা দিতে হবে। সেটি পেলে গাড়ির সামনে ও পিছনে ‘এল’ বোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক। তবে সূর্যাস্তের পরে লার্নার্স লাইসেন্সধারীর গাড়ি বা মোটরবাইক চালানো নিষিদ্ধ। সূর্যাস্তের আগে গাড়ি চালাতে হলে সঙ্গে স্থায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক থাকা বাধ্যতামূলক।
লার্নার্স লাইসেন্স পাওয়ার পরের ৩০ দিনে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কোনও মোটর ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর ওই লাইসেন্স পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গাড়ি চালানোর চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে তবেই পাকা লাইসেন্স পাওয়া যায়।
কিন্তু এই সব নিয়ম-বিধি আদৌ পালিত হয় কি? কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘শহরের রাস্তায় প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে কার লাইসেন্স নেই, আর কে গাড়ি চালানো শিখতে বেরিয়েছেন, তা দেখা কি সম্ভব? মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’ ভুক্তভোগীদের অবশ্য অভিযোগ, সচেতনতা তো দূর, মোটরযান আইন উড়িয়েই কলকাতায় প্রশিক্ষণহীন, অপটু হাতে লাইসেন্স চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে নাকি টাকা দিতে পারলে লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষাও দিতে হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy