Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
New Year Eve

স্মৃতি উসকে বর্ষশেষের দিনটা বাড়িতেই কাটে বাপি সেনের পরিবারের

সালটা ২০০২। বর্ষবরণের রাতে পার্ক স্ট্রিটে ঘুরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি পুলিশকর্মী বাপি সেনের। কলকাতা পুলিশে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন বাপি। বর্ষবরণের রাতে কয়েক জন পুলিশকর্মীর মারেই মৃত্যু হয় তাঁর।

An image of Bapi Sen\\\'s wife

শোক: বাপি সেনের ছবি হাতে তাঁর স্ত্রী সোমা সেন। রবিবার, বেহালার পর্ণশ্রীর বাড়িতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৫
Share: Save:

পুলিশ কোয়ার্টার্সের দোতলায় ছোট্ট ঘরটির সামনের ঘরে চলছে বর্ষবরণের উদ্‌যাপন। বাইরে দাঁড়িয়ে তার আভাস কানে এলেও সেই রেশ গিয়ে পৌঁছয়নি উল্টো দিকের ঘরটির চৌহদ্দিতে। সেখানে বছর শেষের আনন্দের রেশ নেই। বরং গোটা শহর উৎসবে মেতে থাকলেও শোক ভুলতে নিজেদের কাজে ডুবিয়ে রাখছে সেন পরিবার। বর্ষবরণ নিয়ে প্রশ্ন করলেই উত্তর আসে, ‘‘বছর শেষের উৎসব তো ২১ বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

সালটা ২০০২। বর্ষবরণের রাতে পার্ক স্ট্রিটে ঘুরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি পুলিশকর্মী বাপি সেনের। কলকাতা পুলিশে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন বাপি। বর্ষবরণের রাতে কয়েক জন পুলিশকর্মীর মারেই মৃত্যু হয় তাঁর। নিজের ঘরে বসেই রবিবার তাঁর স্ত্রী সোমা সেন বললেন, ‘‘ফোনটা ভোরে আসে। দুই ছেলেকে নিয়ে তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকে ফোন করে বলা হয়, বাপির দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে হবে।’’ ফোন পেয়ে ভোরেই আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে পৌঁছে অন্য পুলিশকর্মীদের থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন সোমা।

বাপির পরিবারের সদস্যেরা জানান, বর্ষবরণের সে রাতে ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটে গিয়েছিলেন বাপি। সেখানেই তাঁর সামনে এক তরুণীকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। তখন বাপি বাধা দেন। ওই তরুণীকে তাঁর বন্ধুর বাইকে চাপিয়ে দিয়ে পৌঁছে দেন হিন্দ সিনেমা পর্যন্ত। কিন্তু মত্ত পুলিশকর্মীরা সেখানেও তাঁদের পিছু নেন। সেই সময়ে বাপি ফের তাঁদের বাধা দিলে প্রকাশ্যেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন রিজার্ভ ফোর্সের ওই কর্মীরা। হাসপাতালে ভর্তির প্রায় এক সপ্তাহ পরে, ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি মৃত্যু হয় বাপির।

তার পর থেকে তাঁর পরিবারের কাছে বছর শেষের দিন উৎসব নয়। বরং গোটা ডিসেম্বর জুড়ে শোকের ছায়া ঘিরে থাকে তাঁদের। দু’দশকের দুঃসহ স্মৃতি বড় ছেলে সোমশুভ্রের কিছুটা মনে থাকলেও মনে নেই ছোট ছেলে শঙ্খশুভ্রের। আশুতোষ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শঙ্খশুভ্রের তখন বয়স ছিল বছরখানেক। সোমা বলেন, ‘‘বড় ছেলের স্মৃতিতে তা-ও কিছুটা রয়েছে। কিন্তু ছোট ছেলে তখন বড্ড ছোট ছিল। কিছুই মনে করতে পারে না।’’ তবে এখন বর্ষশেষের দিনটা গোটা পরিবারের কাটে আর পাঁচটা দিনের থেকে একটু অন্য ভাবে। সোমার কথায়, ‘‘ওরা এখন বড় হয়েছে। ওদের বলেছি, সারা বছর আনন্দ কর, কিন্তু বছর শেষের এই দিনটায় বাড়িতেই থাক। আসলে এই রাতটা চোখের পাতা এক করতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই বার বার স্মৃতিগুলো ফিরে আসে।’’ বছর দুই আগে চাকরি সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হলেও আপাতত শহরের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছেন সোমশুভ্র। অফিসের কাজে এ দিনও অবশ্য তাঁকে বেরোতে হয়েছে। সোমার কথায়, ‘‘ওরাও এই দিনটা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু অফিসের কাজ থাকলে তো আর কিছু করার থাকে না। তখন বেরোতেই হয়।’’

বাপির মৃত্যুর পরে কলকাতা পুলিশেই চাকরি পেয়েছেন সোমা। টেলিফোন ভবনের সামনে তাঁর অফিস। রবিবার থাকায় এ দিন অফিস যেতে হয়নি। তবে এত বছর বাদেও আক্ষেপ যায়নি বাপির স্ত্রীর। ঘরে রাখা স্বামীর ছবি নিয়ে এসে আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে সোমা বললেন, ‘‘সে দিন যদি ওঁকে আটকাতে পারতাম, তা হলে ছেলে দুটো পিতৃহীন হত না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

New Year 2024 Police officer Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy