পুলিশকর্মীদের নিগ্রহের মূল মামলার তদন্ত এখনও শুরুই হয়নি। অথচ ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কলকাতার মেয়রের ভাইঝি দেবপ্রিয়ার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কটূক্তি, দুর্ব্যবহার-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে দিল পুলিশ। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে দেবপ্রিয়ার অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে লালবাজার।
পুলিশ জানায়, ঘটনার রাতেই অভিযোগ দায়ের করেন দেবপ্রিয়া। তাতে পুলিশ ও এলাকাবাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
২২ তারিখ রাতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ মোড়ের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনাকে ঘিরে এক কনস্টেবলের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটায় তা চালাচ্ছিলেন দেবপ্রিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই সরকারি কাজে বাধা ও এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগটি জামিন অযোগ্য হলেও ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের ফোন পেয়ে ওই রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় দেবপ্রিয়াকে।
গত দু’সপ্তাহে দেবপ্রিয়া ও তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতার করা তো দূর, এক বার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নিগৃহীত পুলিশকর্মী ও তাঁদের সহকর্মীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, নিগ্রহের পরেও দেবপ্রিয়া ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। এখন বরং অভিযুক্তদের অভিযোগকে গুরত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের নিচুতলার আরও আক্ষেপ, সরকারি কাজে বাধা দানের মতো গুরুতর অভিযোগেও যে ভাবে রেহাই দেওয়া হচ্ছে, তাতে আইনরক্ষকের ভাবমূর্তি ধুলোয় লুটিয়েছে। সর্বোপরি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে ‘বাচ্চা মেয়েদের কাজ’ বলায় অনেকেই হতাশা লুকোতে পারছেন না।
ঘটনার এত দিন বাদে কেন ওই অভিযোগ দায়ের হল? পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই দেবপ্রিয়ারা যখন থানায় ছিলেন তখন তাঁরা ওই অভিযোগপত্র লেখেন। কিন্তু ঠিক হয় সেটি পুলিশ নিগ্রহের মূল মামলার সঙ্গে জোড়া হবে। যেমন এলাকাবাসীর অভিযোগপত্রটি মূল মামলার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তা হলে কেন মামলা হল?
পুলিশের নিচুতলার একাংশের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তাদের অন্ধকারে রেখেই প্রভাবশালীদের চাপে টালিগঞ্জ থানার একাংশ ওই মামলা শুরু করেছেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ওই মামলার কথা প্রথম জানতে পারি। এটা অনভিপ্রেত। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমাদের অন্ধকারে রেখে থানার একাংশ মঙ্গলবার দেবপ্রিয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।’’ পুলিশের ওই অংশের অভিযোগ, টালিগঞ্জ থানার একাংশ প্রভাবশালীদের কথাতেই দেবপ্রিয়ার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানায়, দেবপ্রিয়াদের ওই অভিযোগ পাওয়ার পরে টালিগঞ্জ থানার এক অফিসারকে দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে দেখা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে ভিত্তিহীন। তবে স্থানীয়েরা যে ওই রাতে দেবপ্রিয়াদের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন ও গালিগালাজ করেন সে প্রমাণ মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy