লালবাজার। ফাইল চিত্র।
ভার বেড়েছে ‘মাথার’। তাই পায়ের তলার মাটি টলোমলো! শুধু তাই-ই নয়, ধীরে ধীরে মাটিতে বসেও যাচ্ছে বাড়িটি।
সে বাড়ি অবশ্য যে-সে বাড়ি নয়! লালবাজারের পাঁচটি বাড়ির ‘হৃৎপিণ্ড’ সেটি। ওই বাড়িতেই রয়েছে কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুম, সদর বাহিনী বা হেড কোয়ার্টার্স ফোর্স-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাখার অফিস। লালবাজারের খবর, খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে ইতিমধ্যেই কয়েকটি অফিস সরানো হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগেই সরিয়ে আনা হচ্ছে কন্ট্রোল রুমও।
কলকাতা পুলিশের খবর, বহু পুরনো ওই বাড়িটি পশ্চিম দিকে বেশ কিছুটা হেলে গিয়েছে। তা দেখার পরেই বাড়িটি পরীক্ষা করানো হয়। দেখা যায়, ভিতও মাটিতে কিছুটা বসে গিয়েছে। তার পরেই লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা খড়্গপুর আইআইটি-র একটি বিশেষজ্ঞ দলকে নিয়ে আসেন। ওই বিশেষজ্ঞেরা বাড়িটি পরীক্ষা করে জানান, বাড়িটির উপরে অতিরিক্ত ওজন চাপানো হয়েছে। তাই বাড়িটি থেকে বিভিন্ন দফতর সরিয়ে ফেলা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় বিধি মেনে বাড়িটির আমূল সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই বাড়িটি থেকে অ্যাকাউন্টস বিভাগ, আর্মস বিভাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই বাড়ির দোতলায় থাকা কন্ট্রোল রুমকে নিয়ে আসা হচ্ছে মূল ভবনের একতলায়। তৈরি হওয়া ইস্তক এই প্রথম স্থানান্তরিত হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। বাকি শাখাগুলিকেও ধীরে ধীরে সরানো হবে।
কিন্তু বাড়িটি এমন ভাবে হেলে গেল কেন? কেনই বা সেটি মাটিতে বসে যাচ্ছে?
পুলিশ সূত্রের খবর, আইআইটির বিশেষজ্ঞেরা মূলত ওজন বৃদ্ধির কথাই বলেছেন। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পুরনো অফিসবাড়িতে বিভিন্ন শাখায় বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দলিল, দস্তাবেজ, নথিপত্র জমতে থাকে। সেগুলির ভার কম নয়। তার উপরে অন্দরমহলে অনেক সময় সংস্কার হয়। সেগুলির জেরেও অনেক সময়ে বিপদ ঘটতে পারে। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞেরা বাড়ির হেলে যাওয়া এবং ভিত বসে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য আরও কয়েকটি বিষয় বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক অধ্যাপকের বক্তব্য, ভিতের উপরে কত ওজন পড়ছে, তা মাপার পাশাপাশি বাড়িটির মোট উচ্চতা, এক-একটি তলের উচ্চতা, ভিতের পরিমাপ বিস্তারিত ভাবে অনুসন্ধান প্রয়োজন। এর পাশাপাশি ওই ভিতের তলায় থাকা মাটির গঠনে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা-ও দেখা প্রয়োজন। ‘‘এই সব কারণ খতিয়ে দেখার পরেই রোগ নির্ণয় সম্ভব। ঠিক মতো রোগ নির্ণয় হলে তবেই তার নিরাময় সম্ভব হবে,’’— মন্তব্য ওই অধ্যাপকের।
কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি লালদিঘির পাড়ে মেট্রোর এবং ব্রেবোর্ন রোডে মাটির তলায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। সে সময়ে কয়েকটি পুরনো বাড়ি খালি করা হয়েছিল এবং সেগুলির মেরামতিও হয়েছে। লালবাজারের বাড়ি হেলে যাওয়ার পিছনে সেটাও কারণ নয় তো? যদিও রেল সূত্রের দাবি, ওই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে তার প্রভাব কোন কোন বাড়িতে পড়তে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা হয়েছিল। লালবাজারের বাড়ি সেই আওতায় ছিল না। কেউ আবার বলছেন, এই শহরে মাটির তলায় আরেকটি শহর বানিয়ে রেখেছে ইঁদুরেরা। পুলিশের বাড়ির ভিত নড়ানোয় সেই মূষিককুল দায়ী নয় তো? সেটাও যে কারণ নয়, তার কোনও নিশ্চয়তা বিশেষজ্ঞেরা দেননি।
শুধু কলকাতা পুলিশের সদর দফতর হিসেবে নয়, শহরের বুকে ‘হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত বাড়িগুলির অন্যতম লালবাজারের মূল ভবনটি। শহরের ইতিহাস গবেষকেরা বলছেন, এই ১৮ নম্বর লালবাজার স্ট্রিটের ঠিকানাতেই এক সময় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ছিল। সেখানে চাকরি করতেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে হেলে যাওয়া বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত নয় বলেই খবর। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় নেই ঠিকই। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে রাজ্য পুলিশ আবাসন পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে বাড়িটির আমূল সংস্কার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy