ব্যস্ততা: বাধা বৃষ্টি। তাই কেরোসিনের স্টোভের আগুনেই চলছে মূর্তি শুকোনোর কাজ। রবিবার, কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র
গত ১ জুলাই দেশ জুড়ে চালু হয়েছে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)। এর জন্য দাম বেড়েছে বিভিন্ন জিনিসের। সেই বাড়তি খরচে ইতিমধ্যেই হাত পুড়তে শুরু করেছে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। বাজার-চলতি কৌটোর রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে প্রতিমার রং তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পাশাপাশি তাঁদের দুর্ভোগ খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে কেরোসিন তেলের আকাল।
ফি বছর দুর্গাপুজোর দেড় মাস আগে থেকে রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতর মারফত প্রতি সপ্তাহে পাঁচ লিটার করে কেরোসিন পেয়ে থাকেন শিল্পীরা। কিন্তু চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত তেল পাননি তাঁরা। কবে পাবেন, জানা নেই। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্যই কুমোরটুলির শিল্পীদের কেরোসিন পেতে সমস্যা হচ্ছে। শিল্পীদের স্বার্থে শীঘ্রই তেল দেওয়ার ভাবনা-চিন্তা চলছে। তবে তাঁরা পরিমাণে কম তেল পাবেন।’’
কেরোসিন কী ভাবে কাজে লাগে শিল্পীদের? প্রাকৃতিক রং তৈরির জন্য জলের সঙ্গে তেঁতুল বীজের পাউডার মিশিয়ে বেশি তাপমাত্রায় ফোটাতে হয়। ওই আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রং মিশিয়ে তৈরি হয় প্রাকৃতিক রং। স্টোভ জ্বালিয়ে এই পদ্ধতিতে রং তৈরি করতে কেরোসিন প্রয়োজন। আবার চলতি বছরে লাগাতার বৃষ্টির জন্য প্রতিমা শুকোতে সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘ব্লু ল্যাম্প’ জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকোতেও দরকার কেরোসিনের। পাশাপাশি, ঠাকুর তৈরির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকেরা এসে থাকছেন কুমোরটুলিতে। তাঁরা রোজকার রান্না করেন কেরোসিন ব্যবহার করেই।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘গত চল্লিশ বছর ধরে দুর্গাপুজোর দেড় মাস আগে থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত শিল্পীরা সপ্তাহে পাঁচ লিটার করে কেরোসিন পেতেন। এ বছর এখনও পর্যন্ত তা না পাওয়ায় চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।’’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্প ও সাজশিল্প সমিতির সদস্য অপূর্ব পালের কথায়, ‘‘জিএসটি-র জন্য প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন উপাদানের দাম বেড়েছে। এর উপরে চড়া দামে কেরোসিন কেনায় শিল্পীরা অর্থকষ্টে ভুগছেন।’’ কুমোরটুলির শিল্পী সংখ্যা প্রায় ৬০০। তাঁদের বড় অংশ জানিয়েছেন, গত বছরও পর্যাপ্ত কেরোসিন না পাওয়ায় সমস্যা হয়েছিল।
খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, গত বছরের এপ্রিল থেকে কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্য প্রায় ২৬ শতাংশ কেরোসিন কম পাচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত যেখানে রাজ্য কেন্দ্রের থেকে ৮০ হাজার কিলো লিটার কেরোসিন পেয়েছে, সেখানে ওই বছরের এপ্রিল থেকে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৬৬৮ কিলো লিটারে। শুধু তাই নয়, তেলের দামও বা়ড়ানো হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেরোসিন তেলের ডিলার এবং এজেন্টরা রাজ্যের বিরুদ্ধে চলতি মাসে মামলা করেছেন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকার জন্যও কেরোসিন বণ্টনে সমস্যা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy