বৈচিত্রে ভরা এ শহর। এক উৎসব কিন্তু তার নানা রকম চেহারা শহরের বিভিন্ন মহল্লায়। আরব সাগরের তীরে রুপোলি পর্দার জগতের ছায়াময় নর-নারীরাও এ শহর আর তার নানা রঙের আলোয় মুগ্ধ। আবারও আলো মাখা রং মাখার দিন এসে গেল। দিনের নাম দোল। আজ সবার রঙে রং মেশাতে হবে। অনেকেই মনে করেন ‘দে দোল দোল দোল, তোল পাল তোল’— না এ দোলের গান নয়, বরং শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শেষ যাত্রায় যে গাওয়া হয়েছিল ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও গো এবার যাবার আগে’— পল্লব কীর্তনীয়ার নেতৃত্বে। সেই তো দোলের গান। এ শহরের আনাচকানাচ দোল নিয়ে মুখরিত। ডুমো ডুমো আলু পেঁয়াজ দিয়ে পাঁঠার মাংসের ঝোল আজ এতদ্দেশীয়দের কাছে আমোদের। মহেন্দ্রনাথ সিংহ— যিনি আবিরের ব্যবসা করেন বড়বাজারে। তাঁর কাছে মূল যে আবির, যার ছিটেফোঁটা থেকে কয়েক বস্তা আবির তৈরি হয়। তিনি বাড়িতে ঘোরতর নিরামিষাশী কিন্তু ‘বাহিরে’ শাক্ত। তবে দোল উপলক্ষে ভাং পান করে থাকেন। বছরের অন্যান্য দিন তেমন কোনও বিক্রিবাটা না থাকলেও এই রঙের উৎসব উপলক্ষে বড়বাজার থেকে বিবেকানন্দ রোড— ম ম করছে বড় মেজো ছোট সিদ্ধি ও ভাঙের উৎসবে। পাড়ায় পাড়ায় ‘নমক হারাম’, কিংবা ‘সিলসিলা’ চলচ্চিত্রের এমনকি জগৎ বিখ্যাত ‘শোলে’-র গান-সহ পানাহার পৌঁছবে তুরীয় আনন্দে। এ দিন শহরে মাছ বা ডিমের চেয়ে ‘লাল মাংস’-এর চাহিদা বেশি। ব্ল্যাকে মিলবে পানীয়। হরি মন্দিরগুলোয় ঘি-মাখানো পোলাওয়ের সঙ্গে নানাবিধ পেঁয়াজ-রসুনহীন তরকারি। যদিও এ শহর সাবালক হয়েছে। এখন আর পচা টম্যাটো ডিম কিংবা মোমের ফুচকা খুব একটা মিলবে না। যেমন মিলবে না গোবরজল দিয়ে ‘হোলি হ্যায়’ মাতিয়ে তোলা। তবে আগের দিন ন্যাড়া পোড়া বা বুড়ির ঘর জ্বালানো এখনও রয়েছে। রয়েছে নয়া আবিষ্কৃত সুগন্ধি ‘ঘুঁটে’। সাদা-গোলাপি-হলুদ রঙের কদমায় ছেয়েছে বাজার। ফুলের চেয়েও অনেক বেশি সবুজ পাতায় ঢেকেছে রাধা-কৃষ্ণের মন্দির। এখন যন্ত্রই তাঁদের দোলনা দুলিয়ে চলেছে। কোনও এক বাঙালি কবি জানিয়েছিলেন তাঁর কথা ‘‘বাংলামে লালে লাল উড়েলা আভীর, বাবু উড়েলা আভীর/... সাহেবের লাল বাংলো ঘুমোলো কি? সারাদিন ঝরেছে আবীর।’’ গান-রং-আবিরের উড়ে যাওয়া দিন এ শহরবাসী আবারও পালন করতে চলল। এমনকি তিনি তরুণ কবিদের বলতেন, ‘আজ যেন কী সব খেতে হয়?’ তিনি বড্ড আবির মাখতে ভালবাসতেন। মাখাতেও। ‘এমনই দিনে তাঁরে’ মনে পড়ে, তিনি— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
শতবর্ষে
‘‘ঢুলুদা শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন এবং সেই সূত্রেই রবীন্দ্রনাথেরও সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন। সেরকম একটা পরিশীলিত মানুষ বলেই ঢুলুদার সঙ্গে আমার কাজ করতে ভালো লাগত। ঢুলুদা যখন ছবি করতেন তখন শুধু যে কাজেরই কথাটুকু বলতেন তা নয়, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন, বাংলা থিয়েটার নিয়ে আলোচনা করতেন।... এইরকম লোকেরই তো অভাব হয়ে গেছে আজকে।’’— অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০১৬) সম্পর্কে প্রায় বছর কুড়ি আগেই বলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বাংলা ছবির ওই অবিসংবাদী পরিচালক তখনও সজীব এবং সক্রিয়। আর সম্প্রতি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছেন: ‘‘সাহিত্যিক বনফুলের সর্বকনিষ্ঠ এই ভ্রাতাটি শান্তিনিকেতনে শিক্ষালাভ করেন ও রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছেন— সোজা কথা নয়।... এত নিরহঙ্কার, হাস্যময়, সুরসিক মানুষ বিরল।’’ এ ভাবেই বিশিষ্ট জনের বয়ানে, প্রিয়জনের স্মৃতিকথনে ছবির মতো ফুটে উঠেছেন মানুষটি— চৌরঙ্গী পত্রিকা-র ‘অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় জন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা’-য় (অতিথি সম্পাদক: গোপাল দাস)। তাঁর জীবনপঞ্জি ও চলচ্চিত্রপঞ্জির সঙ্গে আছে তাঁর ফিল্মের বুকলেট ও লবিকার্ড। আর তাঁর সাক্ষাৎকার ও নিজস্ব রচনাদি: ‘ঢুলুবাবুর কলমে’। ইতিহাস-বিমুখ বাঙালির জীবনে জরুরি প্রকাশনা। সঙ্গে তাঁর ছবি।
নতুন শৈলী
উনিশ শতকের গোড়া থেকেই অভ্রের পাতের উপর এক ধরনের ছবি আঁকা শুরু হয়েছিল। শৈলীগত ভাবে একদমই নতুন এই ছবি ভারতের নানা অঞ্চলে আঁকা হয়েছে। বিলিতি জলরঙের সঙ্গে গাম অ্যারাবিকের মতো আঠা মিশিয়ে ব্যবহার করতেন শিল্পীরা। বিষয়বস্তু ভারতীয়, শিল্পীরাও ভারতীয়। পৃষ্ঠপোষক অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিলেন ব্রিটিশরাই। উনিশ শতকে ভারতীয়দের জীবনচর্যা কেমন ছিল, তার এত ভাল চিত্র-নথি বোধ হয় আর কোনও মাধ্যম থেকেই সুলভ নয়। কিন্তু এই ছবির জন্য কাগজের বদলে অভ্রের পাত ব্যবহার করার কারণ কী? এমন কিছু তো আগে হয়নি, তা হলে এই ভাবনাটা এল কোথা থেকে? এই শিল্পধারাটি হারিয়েই বা গেল কেন? এই সব নিয়েই ১১ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কনফারেন্স হল-এ (নতুন লাইব্রেরি ভবন) ছবি-সহ আলোচনা করবেন সংগ্রাহক-গবেষক শ্রীদেবী নায়ার পাল, ‘পেন্টিংস ডান অন মাইকা ইন নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি ইন্ডিয়া’ শিরোনামে।
বাউল সন্ধ্যা
সমন্বয়ের স্বপ্নই তো মিলিয়ে দিয়েছিল মনের মানুষের খোঁজে বেরিয়ে পড়া লালন ফকির ও মানস সুন্দরীর সন্ধানরত ‘সোনার তরী’-র বিশ্বকবিকে। তাঁদের আত্মার বাঁধনে সহচর হয়েছিল লালনের উত্তরসূরিদের তান আর অনাদিকালের শিল্পীদের প্রাণ। ভারতীয় দর্শনেরও গূঢ়েও রয়েছে তাঁদেরই বন্ধন। লক্ষ্য যে একই। বাহ্যিক বৈভবহীনতার সেতুতে মনসিজ ঐশ্বর্যের ভাণ্ডারে পৌঁছে যাওয়া। বাউলের আখড়ায় সেই খোঁজই তো চলে। আমাদের পূর্বজের এই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকের হৃদয়ের সমন্বয় ঘটাতে, বাউলের মেঠো সুরে শহরের মন হারাতে, আয়োজিত হতে চলেছে বাউল সন্ধ্যা। ১৫ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মহর্ষিভবনের উঠানে। আয়োজক সুতানুটি পরিষদ চোরবাগান অঞ্চল ও ক্রিয়েট ফর লাইফ। সহযোগিতা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমি ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বাউল গানের ভেলা ভাসাতে হাজির থাকবেন ভজনদাস বৈরাগ্য, গোলাম ফকির, বাবু ফকির, নিমাই খ্যাপা, কাঙাল খ্যাপা ও রিণা দাস বাউল।
আশি ছুঁয়ে
আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি চিঠি বেরিয়েছিল ১৯৬১-র ৬ জানুয়ারি। সাহায্যের আবেদন, অর্থ না জুটলে পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ। আবেদনকারী ছিলেন চারুচন্দ্র কলেজের ছাত্র, ইউনিয়নের সাহিত্য-সম্পাদক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী। আবেদনে সাড়া দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই। সেই আনুকূল্যেই আইএ পাশ। ধাপে ধাপে এমএ। ফাঁকফোকরে গাড়ি সারাই কারখানায় শ্রমিক, গৃহনির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক, সাউথ সাবার্বান মেন স্কুলের শিক্ষক। পরে সাংবাদিকতা, অধ্যাপনা। সে দিনের সেই আবেদনকারী হলেন ষাটের দশকের কবি গণেশ বসু, যাঁকে নিয়ে বিষ্ণু দে এক দিন লিখেছিলেন, ‘‘তখন রক্তের মধ্যে শ্বাস ফেলে দুরন্ত মহিষ / নীলে লালে আহিরভৈরবে, / আর দশপ্রহরণ হাতে হাতে তুলে দেয় / তোমার কাব্যের যিনি মরণমর্দিনী।’’ ১৯৬৪-তে বেরিয়েছিল তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বনানীকে কবিতাগুচ্ছ’। তার পর একে একে আরও ১১টি কাব্যগ্রন্থ। এখন তিনি আশি ছুঁয়েছেন। তাঁর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের চাঁদসি বরিশালে ১ ডিসেম্বর ১৯৪০। আট বছর বয়সে দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে এ পারে আসেন। সম্প্রতি বইমেলায় প্রকাশিত হয় ‘সমুদ্রমহিষ’ খ্যাত কবি গণেশ বসুর কবিতা সংগ্রহ। দুই মলাটের মধ্যে ১২টি কাব্যের সঙ্কলন (সম্পা: জয়গোপাল মণ্ডল, দিয়া পাবলিকেশন)।
কথাকৃতি
তিন দশক পেরিয়ে গেল ‘কথাকৃতি’ নাট্যদল। ১০ মার্চ তাদের ৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী বিশেষ নাট্যসন্ধ্যা। গত কাল ৮ মার্চ সন্ধে ৬টায় প্রকাশিত হল ‘কথাকৃতি নাট্যপত্র’। তার পর ২৪তম অজিতেশ স্মারক বক্তৃতা দিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী অলকনন্দা রায়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ছিল আলোচনাসভা: ‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নাট্যে নারীবাদ’, আলোচনায় কাবেরী বসু তৃণা নিলীনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আশিস গোস্বামী। সংযোজনায় ছিলেন ভবেশ দাস। ১০ মার্চ অ্যাকাডেমি মঞ্চে সন্ধে সাড়ে ৬টায় কথাকৃতির নতুন প্রযোজনা ‘আমি, তনু ও সে’। নাটক সৌনাভ বসু, নির্দেশনা কিঞ্জল নন্দ।
লোকবাদ্য
বাংলার লোকভাণ্ডারে কত না বাদ্যযন্ত্র। বাঁশি দোতরা সারিন্দা ঢোল নাকাড়া-টিকারা খমক ডুগডুগি একতারা মাদল ধামসা খোল আরও কতশত...। কিন্তু পরম্পরাগত অনেক বাদ্যযন্ত্রই হারিয়ে যেতে বসেছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। ভাওয়াইয়া গানে উত্তরবঙ্গের সরু এক পাটের দোতরায় ‘তার’ ছিল মুগাসুতোর। অমিল এখন। অমিল ভাসান গানে ব্যবহৃত ‘বিষম ঢাক’ (ডমরু সদৃশ এক তালবাদ্য), ‘নল/ মুখা বাঁশি’। হারিয়ে যাচ্ছে ‘সারিন্দা’ও। তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। এই ভাবনা থেকেই লোকসংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ভ্রমরা-র আয়োজনে চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে ৬-৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হল ‘বাংলার পরম্পরাগত লোকবাদ্য ও চিত্রকলা’ শীর্ষক প্রদর্শনী, যা এ বার নবম বর্ষে পা দিল। সঙ্গে ছিল আলোচনা, লোকগান, লোকনাটক। কাড়া-নাকাড়ার ছবি প্রদর্শনী থেকে।
সেবাশ্রম
বিশ শতকের গোড়ায় (১৯২৪) দক্ষিণ কলকাতার দুঃস্থ, অনাথ ছোট ছেলেদের লালন ও সহায়তার ব্রতে গড়ে উঠেছিল ‘দক্ষিণ কলকাতা সেবাশ্রম’। এই কর্মকাণ্ডের সভাপতি ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, সম্পাদক সুভাষচন্দ্র বসু। মনোহরপুকুরে ভাড়া বাড়ি থেকে হাজরা-ল্যান্সডাউন রোড নিকটস্থ নিজস্ব বিশাল ভবনে কেন্দ্রের উঠে আসাতেও নেতাজি-সহ বিশিষ্টবর্গের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯২৪ সালে ছ’টি ছাত্র নিয়ে কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছিল। এখন সংস্থা প্রায় ৪৫ জন বালকের ভরণপোষণ করে। স্থানীয় স্কুলে তারা পড়ে, সঙ্গে কেন্দ্রে নিজস্ব শিক্ষকদের দিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ভাল ফলে স্কলারশিপেরও সুযোগ রয়েছে। ১১-১২ মার্চ এই সেবাশ্রম ৯৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করবে। এই অনুষ্ঠান দেশবন্ধুর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর প্রতি উৎসর্গীকৃত। দেশবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবেন বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী এবং গবেষক-লেখক পবিত্র কুমার গুপ্ত। সঙ্গীতে সেবাশ্রমের বালকবৃন্দ ও নূপুরছন্দা ঘোষ। সভাপতিত্ব করবেন সেবাশ্রম সভাপতি বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী আলোচনা সভা ছাড়াও নেতাজি ও দক্ষিণ কলকাতা সেবাশ্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন পত্রাবলি প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীতে থাকবে সেবাশ্রমের ছেলেদের বিজ্ঞান মডেল ও হাতের কাজের প্রদর্শনীও।
হাতেখড়ির নাটক
এমন একটা সময় যখন রাষ্ট্র সর্বশক্তি দিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চাইছে। নেতারা কেউই আর অপরাধ এবং অনৈতিক তঞ্চকতা প্রবঞ্চনার বাইরে বেরিয়ে দেশের মানুষের পাশে থাকতে পারছেন না। গোটা দেশটাই যেন বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়। ’৬৭ সাল অনেক আগেই ঘোষণা করেছিল, এমন দিন আসতে চলেছে। আজ ২০২০-তে ভারতে দাঁড়িয়ে সেই অতীতটাকে বুঝে নেওয়ার সময়, যা অনেক মানুষের মতে ভুল ছিল। ভুল ছিল? স্লোগান উঠেছিল ‘নকশালবাড়ির পথ ভারতীয় জনগণের মুক্তির পথ’। জঙ্গলমহল জাগছে, শালবনি উঠে দাঁড়িয়েছে, বস্তার, দান্তেওয়াড়া, কাশ্মীর, মণিপুর ‘স্বাধীনতা’-র লড়াই এখনও লড়ে চলেছে। এই ভাবনা চিন্তা থেকে বেলঘরিয়া হাতেখড়ি ১৫ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে মঞ্চস্থ করতে চলেছে তাদের নতুন নাটক ‘কিউমুলোনিম্বাস’। নির্দেশনা দেবাশিস ঘোষদস্তিদার।
মাস্টারমশাই
যৌবনের রাজনৈতিক সঙ্গীদের কাছে তিনি তুষারদা, সুন্দরবনের অগণিত মানুষের কাছে তিনি অতি আদরের মাস্টারমশাই, আবার রাজ্য বা দেশের বাইরে গ্রাম উন্নয়নের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কাছে পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত তিনিই পদ্মশ্রী তুষার কাঞ্জিলাল। বর্ধমান শহরে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে তাঁর উত্থান, ষাটের দশকে রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনে তিনি এক পরিচিত নাম। রাজনীতির ধরাবাঁধা রাস্তা ছেড়ে ওই দশকের মাঝামাঝি চলে এলেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম রাঙ্গাবেলিয়ায় স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে। রবীন্দ্রনাথ ও গাঁধীজির দেখানো পথে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট সংস্থার ছাতার তলায় তৈরি করলেন গ্রামীণ উন্নয়নের এক অনন্য মডেল। পাশে পেলেন সহধর্মিণী বীণা কাঞ্জিলালকে যিনি সুন্দরবনের দুঃস্থ মহিলাদের স্বনির্ভরতা ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তাঁদের নিয়ে গড়ে তুললেন এক সংগঠন— রাঙ্গাবেলিয়া মহিলা সমিতি— যা আজ সুন্দরবনের দ্বীপগুলির মহিলাদের কাছে এক বাঁচার হাতিয়ার। তুষারবাবু পেয়েছেন জাতীয় শিক্ষক এবং পদ্মশ্রী সম্মান, যমুনালাল বাজাজ পুরস্কার-সহ বহু সম্মান ও স্বীকৃতি। গত ২৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের একান্ত আপনজন তুষার কাঞ্জিলাল চির বিদায় নিলেন। সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে ছিল তাঁর স্মরণসভা।
অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ
কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক থেকে অনুরোধ, তক্ষুনি রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’ গানটি অনুবাদ করে দিতে হবে। আধঘণ্টা বাদে ছন্দে অনুবাদ তৈরি। পর দিন রেলমন্ত্রক থেকে পাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজস্র ধন্যবাদ জানানো চিঠি আজও রয়েছে উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দিল্লিতে সে সময় তিনি আইএফএস বা ফরেন সার্ভিস প্রবেশনার এবং বিদেশি ডিপ্লোম্যাটদের ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের কাজে রত। রবীন্দ্র-অনুবাদের সেই ছিল শুরু। তাঁরই ইংরেজি অনুবাদে গীতবিতানের নানা পর্যায় মিলিয়ে ৩০০ গানের সঙ্কলন প্রকাশ করে অভিনব প্রকাশন। বাঁ দিকে মূল গানটি বাংলা ও দেবনাগরী হরফে, ডান দিকে মূল গান রোমানে, নীচে অনুবাদ। বিশ্বকবির সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে সাহিত্য অকাদেমির উদ্যোগে উৎপলবাবু অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ২৫০-র বেশি ছড়া। সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে স্মৃতিচারণা করলেন তিনি। উপলক্ষ ছিল তাঁরই ইংরেজি অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের ‘ভানুসিংহের পদাবলী’-র প্রকাশ।
বিজ্ঞান কেন
‘‘আধুনিক টেকনিক সত্বর হোক বিলম্বে হোক প্রত্যেককেই গ্রহণ করতে হয়েছে। যাদের দ্বিধা ও কুণ্ঠা যত বেশি তাদের পস্তাতে হয়েছে তত বেশি। বোধহয় সকলের পশ্চাতে আমাদের স্থান। তাই, অনুশোচনাও সর্বাধিক।’’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে এমন অনুভব অন্নদাশঙ্কর রায়ের। সেই ১৯৩৬-৩৭ সালে তরুণ বয়সেই এই ভাবনা ভেবেছেন, সরে আসেননি কখনও। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি মনস্বী অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্মদিনে প্রতি বছর আয়োজন করে স্মারক বক্তৃতা। এ বারের মূল ভাবনা ‘বিজ্ঞান’। ১৫ মার্চ সন্ধে ৬টায় আকাদেমি সভাঘরে অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন পথিক গুহ। শিরোনাম ‘বিজ্ঞান কেন’। সভামুখ্য বাংলা আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র।
ঋতছন্দ উৎসব
আইআইটি খড়্গপুরের মেধাবী ছাত্রটি পরবর্তী কালে বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাত্মপথ। দেওঘর দেবসঙ্ঘ আশ্রমের আচার্য সৌম্যেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর (প্রয়াণ ২০১২) পরিকল্পনা ও প্রেরণায় গড়ে উঠেছে স্কুল, শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, সেবা প্রতিষ্ঠানও। তাঁর ভক্ত ও গুণগ্রাহীরা স্থাপনা করেছেন সৌম্যেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ট্রাস্ট; দক্ষিণ কলকাতার প্রাচীন প্রাথমিক বিদ্যালয় হিরণবালা শিশু ভবন এবং সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ঋতছন্দ’ তারই অঙ্গ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, মূল্যবোধ ও সুস্থ সংস্কৃতির প্রসারে কাজ করে চলেছে। ১৩-১৪ মার্চ সন্ধেয় উত্তম মঞ্চে ষষ্ঠ ঋতছন্দ সাংস্কৃতিক উৎসব, প্রধান অতিথি স্বামী সুপর্ণানন্দ। ওড়িশি নৃত্যে বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র ও ‘শিখণ্ডিনী’ পরিবেশনায় গুরু অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য; কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত সমর সাহা, পণ্ডিত শুভাশিস ভট্টাচার্য ও পণ্ডিত রবীন্দ্র কাকোতি।
আশ্চর্য প্রকৃতি
ফাল্গুন গুনগুন করতে করতে শেষ হয়ে এল, তবু সকালের প্রথম ভাগে গরম জামা লাগছে! এ রকম আশ্চর্য প্রকৃতি শেষ কবে শহর দেখেছে তা শহরের প্রবীণ-প্রবীণারা মনে করতে পারছেন না। যেমন মনে করতে পারা যাচ্ছে না দোলের আগে ঝমঝমানো বৃষ্টি! গোটা কল্লোলিনী এখন জলের আয়না হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, উত্তরের বাতাস আর বঙ্গোপসাগরের জোলো হাওয়ায় যুগলবন্দির কারণেই এমন পরিস্থিতি। এই ভরা বসন্তে ‘ভরা বাদর মাহ ভাদর’। ‘আমি যখন ক্লাস সিক্সে আমার পিতামহ নির্দেশ দিয়েছিলেন সে বছর আমি দোল খেলতে পারব না। কারণ তার আগের বছর দোল খেলে আমার খুব শরীর খারাপ হয়। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য, দোলের দু’দিন আগে তুমুল বৃষ্টি শুরু হল। চলল দোলের পরের দিন পর্যন্ত। অতএব প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আমার সে বার মন ভাল হয়ে যায়।’ বলছিলেন সমরেশ মজুমদার। ‘মানুষ এত বেশি জ্বালানি জ্বালিয়ে নির্মম ভাবে পৃথিবীকে ব্যবহার করেছে যে আজ পৃথিবীর হয়ে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। যার ফলে বসন্তেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হচ্ছে।’ মনে করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দেবশঙ্কর হালদারের মতে, ‘প্রেম-প্রেমহীনতা, বাউন্ডুলেপনা, পাগলামো এ সবই কলকাতা শহরের চরিত্রের সঙ্গে মানায় তাই বসন্তেও বৃষ্টি হলে যেন মনে হয় এটা এ শহরের পক্ষেই উপযুক্ত।’ শহর কলকাতার যদি কোনও মুখ থাকে, তবে সে মুখ ভার। এ রকম বৃষ্টিমাখা দোলের দিনের আগে তো জয় গোস্বামীর কবিতা দিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এত বৃষ্টি যখন, তখন, ‘কী করে আজ আবির দেব/ তোমাদের ওই বান্ধবীকে।’
বাঙালির গর্ব
বাঙালির বড় গর্ব সেতারশিল্পী উস্তাদ বিলায়েত খানকে নিয়ে। ১৯২৮ সালের ২৮ অগস্ট জন্ম, তাঁর প্রয়াণও হয় দোলপূর্ণিমার কাছের একটি দিনে, ১৩ মার্চ ২০০৪। এ বছর সেই প্রয়াণকে স্মরণ করছেন ‘লয়-তান’ গোষ্ঠী। তাঁরই ঘরের উজ্জ্বল সেতারি অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ১৪ মার্চ সন্ধে ৬টায় আশুতোষ মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট হলে নিবেদন করবেন তাঁর স্মৃতির সেতার। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় প্রকাশ করবেন খান সাহেবকে নিয়ে শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের লেখা স্মৃতিকথা স্পর্শসুর (কারিগর)। অনুষ্ঠানে শঙ্করলাল উস্তাদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলির স্মৃতিচারণাও করবেন। শিল্পীর প্রিয় গান শোনাবেন দেবলীনা ঘোষ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।
সর্বনাশ
‘বেঙ্গল স্কুল কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান ছিলনা বরং এর মাহাত্ম এখানেই যে এটি শিল্পচর্চার রীতিসমূহ পুনর্লিখন করে, এক স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি করেছিল যা ভারতীয় ঐতিহ্যে ওতপ্রোত থেকে এমন বিষয়কে এই ধারায় অন্তর্ভুক্ত করে...।’ বঙ্গীয় শিল্পধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এমন অত্যাশ্চর্য চেষ্টাই সম্প্রতি দেখতে পাওয়া গেল কলকাতায়। বিবাদী বাগের পুরনো মুদ্রা ভবনে ‘ঘরে বাইরে’ নামে বড় মাপের প্রদর্শনীতে, যা চলবে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। প্রদর্শনী থেকে দর্শকের প্রাপ্তির কমতি ছিল না। শুধু প্রতি পদে এটা বোঝা যাচ্ছিল যে, বঙ্গীয় শিল্প-স্থাপত্যের উদ্যাপনে বঙ্গভাষার স্থানটি একেবারেই দুয়োরানির। নইলে কি আর বটতলা মুদ্রণকে ‘বটতালা’, মহাভারত সিরিজকে ‘মহাভারাত সারি’ লিখে ফেলা যায়? বিনোদবিহারীকে ‘বিনোদবিহারি’, শৈলজ মুখোপাধ্যায়কে একাধিক বার ‘শৈলেজ’, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদারকে কখনও বা ‘ক্ষীতিন্দ্রনাথ’ লেখা যায়? জে পি গঙ্গোপাধ্যায় তো পুরো প্রদর্শনী জুড়েই ‘যে পি’ হয়ে রইলেন। গুগল-এর নির্দেশ তেমনই ছিল হয়তো। নতুবা ‘আর্লি বেঙ্গল’-এর তর্জমা ‘আশু বাংলা’ হবে কী করে? এই নব্য ‘বেঙ্গলি স্কুল’-এর আশু প্রতিকার না হলে কিন্তু সমূহ সর্বনাশ।
নরেশ গুহ স্মরণ
“আমার কাছে নরেশ গুহ নামটা এসেছিল বাংলার ‘সবচেয়ে সুরেলা’ কবি হিসেবে। দুরন্ত দুপুর। সিগনেট সংস্করণ। চমৎকার ছাপা। তন্বী এক কবিতার বই।”— এ ভাবেই চল্লিশের দশকের কবি নরেশ গুহ (সঙ্গের ছবি) সম্পর্কে বক্তব্য শুরু করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক সৌরীন ভট্টাচার্য। ‘অহর্নিশ’ আয়োজিত গত বছরের সভায়। সম্পূর্ণ বক্তৃতাটি এ বারে মলাটবন্দি করল উড়োপত্র প্রকাশন। সংঘং সরণং গচ্ছামি? শিরোনামের এই বইটির উদ্বোধন হবে ‘অহর্নিশ’ আয়োজিত নরেশ গুহ স্মরণ অনুষ্ঠানে। ১৮ মার্চ বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যুদিন। ওই দিন সন্ধে ৬টায় শরৎ সমিতির সভাকক্ষে (শরৎচন্দ্রের বাসভবন, অশ্বিনী দত্ত রোড) বুদ্ধদেব-নরেশকে নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসবেন আর এক ‘বৌদ্ধ’ অমিয় দেব। দ্বিতীয় পর্বে প্রদীপ ঘোষ প্রণীত বুদ্ধদেব বসুর সান্নিধ্যে (অহর্নিশ) বইটি নিয়ে জিৎ মুখোপাধ্যায়ের আলোচনা ছাড়াও রবীন্দ্রগানে মুকুল চক্রবর্তী।
ঘুম নেই
এ দেশে যখন বারবার শ্রমিক আইন পরিবর্তন হচ্ছে, জনবিরোধী আইন এনে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার, তখন ‘ইচ্ছেমতো’ নাট্যগোষ্ঠী শ্রমিক আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে তাদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘ঘুম নেই’-তে। সারা দেশে যখন বেসরকারিকরণ ঘটছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে... এই সময়ে দাঁড়িয়ে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় বেশ কয়েকটি শো হয়েছে নাটকটির। ১৯৬১-৬২ সালে লেখা উৎপল দত্ত-র এই নাটকটি যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি তার সামান্য কিছু সংলাপের পরিবর্তন করে, মূল চরিত্রের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটটি বদলে নির্দেশক সৌরভ পালোধী নাটকটিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছেন। ভারতে ঘটে-চলা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বরাবর শ্রমিক শ্রেণির ঘুরে দাঁড়ানোরও নাটক হয়ে উঠেছে এটি। উৎপল দত্তের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে নাটকটির পরবর্তী শো দিল্লির শ্রীরাম সেন্টারে ১৫ মার্চ।
হেমন্ত ও তারপর
মরিচঝাঁপি থেকে হালের দিল্লি... রাজা আসে রাজা যায়, বদলায় না কিছুই। যতই স্বপ্নে চারু মজুমদার সরোজ দত্তরা হানা দিন-না-কেন, যতই আমরা চে-র মতো ভাবি-না-কেন ‘প্রেম না-থাকলে বিপ্লব করা যায় না’, হিমশীতল স্থিতাবস্থাই
বজায় থাকে শেষ পর্যন্ত, আর আমাদের স্বদেশ জল্লাদের উল্লাসভূমি হয়ে ওঠে। বিশ্বাস আগেই চলে গিয়েছিল, এ বার হেমন্তও চলে যাচ্ছে, এর পর আসবে দীর্ঘ বিষণ্ণ শীত... এ সব নিয়েই ব্ল্যাঙ্ক ভার্স-এর নতুন প্রযোজনা ‘হেমন্ত ও তারপর’। কাহিনি সব্যসাচী সেনের। নাটককার ও নির্দেশক রাজা ভট্টাচার্য জানালেন ‘‘আমরা আমাদের কিংবা একটু আগের প্রজন্মের হয়ে কিছু বলতে চাইছি। তাই ইন্টিমেট স্পেস বেছে নিয়েছি।’’ ১৪ ও ১৫ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায় জানুস সেন্টার ফর ভিজ়ুয়াল অ্যান্ড পারফরমিং আর্টস-এ।
নাটকে নিহিত আধুনিক মনটাই আকর্ষণ করে
যে দিন মানুষ অনাসক্ত হয়ে ইতিহাসের বিরুদ্ধাচরণ করে, সে দিন নক্ষত্রের নিশানা বদলে যায়।— এমন সংলাপই আছে এক ভণ্ড জ্যোতিষীর মুখে, ‘অন্ধযুগ’ নাটকে। লক্ষণাত্মক সব সংলাপ: ‘‘নিয়তি পূর্বনির্ধারিত নয়, মানুষ প্রতি মুহূর্তে তা তৈরি করে আর নষ্ট করে।... ভবিষ্যৎ মিথ্যে, শুধু কর্মই সত্য, কর্মেই চিরদিনের ভবিষ্যৎ নিহিত।’’ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ নিয়ে ধরমবীর ভারতী রচিত এ-নাটক দর্শনজিজ্ঞাসায় জারিত। ‘‘মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি এ-নাটকের ভরকেন্দ্র। আদতে যুদ্ধবিরোধী নাটক, এ-যুদ্ধে কেউই জেতে না, সকলেই হারে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সতেরো দিন পর থেকে নাটকটির সময়কাল শুরু। ধর্মযুদ্ধের বকলমে শুধু ধ্বংসই বয়ে আনে এ-যুদ্ধ। সন্তান নষ্ট হয়, শস্যক্ষেত্রে বিষের জন্ম হয়। ফলাফল হিসেবে পড়ে থাকে শুধু নিষ্ক্রিয়তা পচন আর আত্মহনন... সব দেখেশুনে ‘ভয়ঙ্কর’ মনে হয়েছিল কৃষ্ণের। আর সেই ভণ্ড জ্যোতিষী দুর্যোধনকে বলেছিল ‘এটা পরাজয় নয়, একে নতুন সত্যের উদয়ক্ষণ মনে কর।’ নাটকে নিহিত এই আধুনিক মনটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছে।’’ বলছিলেন নির্দেশক পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। প্রযোজক বিলু দত্ত (শ্যামবাজার মুখোমুখি)। অনুবাদক প্রণতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্য চরিত্রে পৌলমীর সঙ্গে রজত গঙ্গোপাধ্যায় ও দেবশঙ্কর হালদার। একটি নেপথ্য চরিত্রের কণ্ঠদানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রথম তিনটি অভিনয় ১৩, ১৪, ১৫ মার্চ যথাক্রমে মধুসূদন মঞ্চ, অ্যাকাডেমি, গিরিশ মঞ্চে, প্রতি দিন সন্ধে সাড়ে ৬টায়। সঙ্গে মহড়ার দৃশ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy