একটা ছোট কাগজ, কাপড়ের পট বা হাতির দাঁতের পাত। তার উপরেই বিস্তারিত ও সূক্ষ্ম শিল্পকাজ— রসিকমহলে চিনিয়েছে মিনিয়েচার পেন্টিং বা অণুচিত্রকে। ভারতে এই চিত্রকৃতির ইতিহাসও সুপ্রাচীন। সপ্তম-অষ্টম শতকে কাশ্মীর, নেপাল হয়ে, পাল যুগের চিত্রশৈলী পেরিয়ে সুলতানি, মোগল, পাহাড়ি ও রাজস্থানী শৈলীর অণুচিত্র অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয় এই ধারাকে। বিকশিত হয় পূর্ব ভারতে ওড়িশা ও দক্ষিণ ভারতের ডেকানি, মালওয়া, মহীশূর ও তাঞ্জোর অণুচিত্র শৈলীও। পাহাড়ি শৈলীর একটি ধারা ছড়িয়ে পড়ে লাহোর থেকে অমৃতসর, রাজস্থানি শৈলীর প্রসার ঘটে জয়পুর, মান্ডি ও অন্যান্য অঞ্চলে; বোঝা যায়, উনিশ শতকেও তার জনপ্রিয়তা অটুট।
রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের ‘মিউজ়িয়ম ও আর্ট গ্যালারি’তে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের অণুচিত্রের একটি সংগ্রহ। সমসাময়িক শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য তো বটেই, তৎকালীন ভারতবর্ষের ভৌগোলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের চিহ্নগুলোও পরিস্ফুট সেখানে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অণুচিত্রের চারিত্রিক ও আঙ্গিকগত পরিবর্তন ঘটেছে বর্ধিষ্ণু ও সাধারণ মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে। অনেক শিল্প-গবেষকের মতে, এই সংগ্রহের কিছু ছবি ‘বাজার আর্ট’ কিংবা অনুসারী শিল্প-ধারার সৃষ্টি।
এখানকার সংগ্রহের সব ছবি যে ভারতীয় অণুচিত্রের সেরা পর্বের, তা নয়। অনেকগুলিই পরবর্তী সময়ের, বা মূলের অনুকৃতি। তবে অনেক সময় কোনও শিল্পকৃতি নিজে সুপ্রাচীন না হলেও, তার মধ্যে প্রাচীন রূপশৈলীর ধারা এখনও বর্তমান থাকলে সেটি সংগ্রহশালার কাছে আদরণীয় হয়ে ওঠে। ইনস্টিটিউট-এর সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত অণুচিত্রগুলিতে নিহিত শিল্পচিহ্নগুলি বয়ে চলেছে প্রথম সৃষ্টির ঐতিহ্য, এ অত্যুক্তি নয়। বর্তমান সংগ্রহটি অণুচিত্রের সেই ঐতিহ্য রক্ষার সাদর ও সচেতন প্রয়াস বলা চলে।
সংগ্রহশালায় রক্ষিত ৪৩টি অণুচিত্রের একটি বর্ণনামূলক ক্যাটালগ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি— ‘গ্লিম্পসেস অব ইন্ডিয়ান মিনিয়েচার পেন্টিংস’। সম্পাদনা ও সঙ্কলন করেছেন সংগ্রহশালার কিউরেটর শঙ্খ বসু; অণুচিত্র-সংগ্রহ নিয়ে লিখেছেন জয়কুমার সাহনি ও সুজিত নারায়ণ সেন। সংগ্রহ কয়েকটি বিভাগে বিন্যস্ত: প্রতিকৃতি, শিকার-দৃশ্য, রাগ-রাগিণী, প্রেমলীলা, সামাজিক ও ধর্মীয় দৃশ্য। প্রতিটি অণুচিত্র ছাপা হয়েছে সযত্নে, সঙ্গে শিরোনাম, মাধ্যম, সময়কাল, শিল্পধারা ও ছবির আকার-সংক্রান্ত তথ্যাদি। সংগ্রহটি স্থায়ী প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত, আগ্রহী যে কেউ এসে দেখতে পারেন সোমবার থেকে শনিবার (রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রকাশিত ক্যাটালগটি সেই রসাস্বাদনে সহায়ক হবে আরও। মূল ছবিতে বিশ শতকের অণুচিত্রে দুই সেনার বাঘ শিকার, মাঝের ছবিতে উনিশ শতকীয় অণুচিত্রে তানপুরা হাতে নারী ও তাঁর সঙ্গিনী, বই থেকে।
সুকুমার-বিশ্ব
১৯২৩... একশো বছরেরও বেশি পেরিয়ে গেছে সুকুমার রায়ের প্রয়াণের। পাল্টেছে সময়, সমাজ, চলার গতি, শিশুদের ভাবার আঙ্গিক, বদলায়নি সুকুমার-সঙ্গ। তার প্রমাণ এক কর্মশালায়, যেখানে ছোটরা উজাড় করে দিয়েছিল সুকুমার-সম্ভার। আর সেখানেই লুকিয়ে ছিল ছোটদের পত্রিকা অনাবিল-এর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্ সুকুমার রায়’ সংখ্যার বীজ। সম্প্রতি-প্রকাশিত পত্রিকাটি ভরা কলকাতা বাঁকুড়া দুই ২৪ পরগনা এমনকি দিল্লি থেকে পাঠানো ছোটদের গল্প পদ্য প্রবন্ধ কমিক্সে, ওদের চোখে সুকুমার-বিশ্ব। বড়রাও লিখেছেন, আছে কিছু অমূল্য পুনর্মুদ্রণও: লীলা মজুমদার সত্যজিৎ রায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নবনীতা দেব সেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেবেশ রায়। “উনি নিজেই যেন এক রেনেসাঁস,” সাক্ষাৎকারে বলেছেন সন্দীপ রায়। সুকুমারের চিরচেনা ছড়া, প্রবন্ধ তো বটেই, ছাপা হয়েছে ওঁর গবেষণাপত্র, ব্রহ্মসঙ্গীতও। ছবি প্রচ্ছদ থেকে।
অন্য ছবি
ইজ়রায়েল সঙ্গত কারণেই বিশ্বের চক্ষুশূল এখন। কিন্তু তার জেরে কি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি-চর্চার উপর রাগ করা যায়? বরং সিনেমার মতো জনপ্রিয় মাধ্যমটি, বহতা সময়ের ভাঙচুর যেখানে ধরা পড়ে সবচেয়ে বেশি আর স্পষ্ট করে, তার আয়নাটা ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখলে বরং বোঝা যেতে পারত, এই ইজ়রায়েলের ভিতরে লুকিয়ে আছে অন্য একটা দেশ, মানুষ, মন। এই ভাবনা থেকেই ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি আজ ও কাল, ২-৩ নভেম্বর চারটি ছবি দেখাচ্ছে সে দেশের: ভ্যালেরিয়া ইজ় গেটিং ম্যারেড, লিটল ভিকট্রিজ়, সেভেন ব্লেসিংস আর আ রুম অব হিজ় ওন। নন্দন ৩-এ দেখা যাবে আজ বিকেল ৫টা আর রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে।
সময়ের ভাষ্য
৭ নভেম্বর রুশ বিপ্লবের সূচনালগ্ন। নাট্যদল ‘গণকৃষ্টি’র জন্মদিনও সে দিন। সাড়ে চার দশক পথ পেরিয়েছে তারা, ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি আগত আর এক জনজাগরণের আবহে। অ্যাকাডেমি মঞ্চে আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারই উদ্যাপন, স্লোভেনিয়ান নাট্যকার ইভাল্ড ফ্লিসারের হোয়াট অ্যাবাউট লেয়োনার্দো অবলম্বনে অমিতাভ দত্তের রূপান্তর ও নির্দেশনায় অথবা রবিঠাকুর নাটকে। মূল নাটকটি ১৯৯২-এর, নাটককার সেখানে তুলে ধরেন এই সময়কে: মানুষের মহামানব হয়ে ওঠার আত্মধ্বংসী চেষ্টা যেখানে তৈরি করে বিবেকবর্জিত, ইতিহাসবিস্মৃত রোবট, গুলিয়ে দেয় মানুষের স্বাভাবিক সংজ্ঞা। এই প্রথম এক সঙ্গে অভিনয় করছেন দুই সহোদর দেবশঙ্কর ও অমিয়শঙ্কর হালদার, সঙ্গী আরও অনেকে।
জরুরি পাঠ
২০১৭ সালে রাজ্যের শিশু আবাসের বাসিন্দাদের কথা ভেবে শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের ছোটদের পত্রিকা হুল্লোড়। সাত বছর পেরিয়ে আটের যাত্রাপথে এই পত্রিকা সব সময়ই তুলে ধরেছে শিশু অধিকারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অথচ অনালোচিত বিষয়টির নানা দিক, সেই সঙ্গে ছোটদের ও বড়দের কলমে বর্ণিল নানা লেখা। সাম্প্রতিক শারদ সংখ্যাটির মলাটকথা শিশুদের ‘এজেন্সি’ বা আত্মকর্তৃত্ব ঘিরে: বড়দের কথা শুনে, মেনে বা সহ্য করে নয়, অল্পবয়স থেকেই কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, স্বাধীন মত, ভাল-মন্দ বোঝার অনুভব তৈরি হবে ছোটদের, সেই সচেতনতার কথা। আর গল্প, কবিতা, স্মৃতিকথা, অনুবাদ, সাক্ষাৎকার, ফোটো-ফিচার, পাতায় পাতায় বহুবর্ণ ছবি— তো আছেই।
স্মরণে
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির প্রথিতযশা অধ্যাপকদের মধ্যে অগ্রণী রমেন্দ্রকুমার সেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডি লিট, গ্রিক ও রোমান ধ্রুপদী সাহিত্যে সুপণ্ডিত মানুষটি ১৯৮৬-১৯৯৭ সময়কালে পড়িয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক মহাবিদ্যালয় নরেন্দ্রপুরেও। ২০০০ সালে প্রয়াত, বরেণ্য এই অধ্যাপকের স্মরণে, তাঁর পরিবারের বদান্যতায় ২০১৫ থেকে নরেন্দ্রপুরে শুরু হয় ‘রমেন্দ্রকুমার সেন স্মারক বক্তৃতা’, বিভিন্ন বছরে সেখানে বলেছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি প্রমুখ সারস্বত। এ বছরের বক্তা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারজয়ী কবি ও কলা-সমালোচক রঞ্জিত হসকোটে, বলবেন উর্দু কবি মির তকি মিরের কবিতার অনুবাদ-ইতিহাস নিয়ে। ৯ নভেম্বর দুপুর ৩টেয়, কলেজের স্বামী মুমুক্ষানন্দ প্রেক্ষাগৃহে।
ঋত্বিক ১০০
১৯২৫-এর ৪ নভেম্বর জন্ম ঋত্বিককুমার ঘটকের। আর এক ৪ নভেম্বর দোরগোড়ায়, একশো বছর ছোঁয়ার মুহূর্তটি। জন্মশতবর্ষের সূচনা উদ্যাপনে ‘জীবনস্মৃতি আর্কাইভ’-এর উদ্যোগে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী ‘কিনোক্ষ্যাপা ঋত্বিক’, অরিন্দম সাহা সরদারের রূপায়ণে। আর্কাইভের ‘ঋত্বিক আখড়া-য় আগে থেকেই আছে বিপুল সম্ভার: ঋত্বিকের নিজের লেখা ও তাঁকে নিয়ে লেখা বই, পত্রিকা; ফিল্ম বুকলেট, পোস্টার, বিজ্ঞাপন, সংবাদ-কর্তিকা; তাঁর পরিচালিত ছবি এবং তাঁকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের ডিজিটাল সংগ্রহ; বিশিষ্টজনের ভিডিয়ো-অডিয়ো-সাক্ষাৎকার। প্রদর্শনীটি এই বিপুল সংগ্রহ থেকেই চয়িত— মূল ফিল্ম বুকলেট, দুষ্প্রাপ্য বই-পত্রিকায় সাজানো। রয়েছে মেঘে ঢাকা তারা ছবির ফরাসি পোস্টার (বাঁ দিকে, সঙ্গে কোমল গান্ধার-এর বুকলেট-প্রচ্ছদও)। আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উদ্বোধন করবেন ঋত্বিকের কয়েকটি ছবির সহকারী চিত্রগ্রাহক গৌর কর্মকার, ভূষিত হবেন ‘জীবনস্মৃতি সম্মাননা’তেও।
নির্বিকল্প
রবীন্দ্রনাথের গানের স্বরলিপিপাঠে যে নামগুলি একযোগে আসে, সুবিনয় রায় (ছবি) তাদের অন্যতম। স্বরলিপির নিখুঁত অনুসরণে গানে প্রাণ সঞ্চার করা যায় কী ভাবে, এ বিষয়ে বিগ্রহপ্রতিম তিনি; ওঁর স্বরলিপিমান্যতা, লয় নির্বাচন, নিবেদনের প্রসাদগুণ আজও নির্বিকল্প। সামনাসামনি গান শিখেছেন-শুনেছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন গানের যথার্থ মর্যাদাদানে কেমন আপসহীন ছিলেন মানুষটি। তাঁর শিক্ষাদানের ধারা স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুধী মহলে। সুখের কথা, সেই ধারাটি আজও অম্লান। ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টায় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার গোলপার্কের বিবেকানন্দ হল-এ তাঁর জন্মের ১০৩ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠান আনন্দী কমিউনিকেশন ও রূপসা সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে, হবে গীতিনাট্য ‘রবীন্দ্রগানে প্ৰেম ও সমাজ’। তাঁকে নিয়ে একটি ওয়েবসাইট হয়েছে, তারও উদ্বোধন।
গল্পের ছলে
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগগুলোর একটা উদ্দেশ্য তো নানাবিধ গল্প বলা আর শোনা। প্রথাগত সাহিত্য-পড়ায় সিনেমা দেখার খুব সুযোগ থাকে না, অথচ সিনেমা গল্পের ছলে যে জীবনসত্য বলে তার খোঁজ পেতে, সাহিত্য ও সিনেমার সম্পর্ককে বুঝতেও দরকার ছাত্র-ছাত্রীদের সিনেমা-চর্চার সুযোগ করে দেওয়া। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এই ভাবনা থেকেই আগামী ৬ নভেম্বর দুপুর ৩টেয় দেখাবে শ্রীময়ী সিংহের সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়। ইরানের মেয়েদের লড়াইয়ের কথা বলে এই ছবি, তাতে মিশে আছে জনজীবনে কবিতা ও সিনেমার ভূমিকাও। ছবি নিয়ে হবে আলোচনাও, খোদ পরিচালকের উপস্থিতিতে। বিদ্যায়তনিক চর্চায় এই ছবি বেছে নেওয়ার আর একটি কারণ, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক নারীহিংসা ও তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy