Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkatar Karcha

কলকাতার কড়চা: গরমে পাল্টাল স্থাপত্যরীতি

কলকাতার গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সেই শৈলীর রূপায়ণে কিছু পরিবর্তন হল। ঘর ঠান্ডা রাখতে ঘরের উচ্চতা বাড়ানো হল, তাই স্তম্ভ ও খিলানের অনুপাতিক মাপ মূল প্যালাডিয়ান শৈলীর মতো রাখা গেল না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৫:৩৫
Share: Save:

সাহেবদের কাছে এ দেশের গ্রীষ্মকাল ছিল এক বড় সমস্যা। শীতপ্রধান দেশের মানুষ বলে কথা, তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নানা ব্যবস্থা করা হল। যেমন শোলার টুপি, টানা পাখার হাওয়া, খসখসের ভেজা পর্দা আর পানীয় ঠান্ডা করার জন্য বরফ আমদানি।

চেনাজানা এই সব ব্যবস্থার বাইরে আরও কিছু পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। যেমন, গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের জন্য বিশেষ স্থাপত্য পরিকল্পনা। লর্ড ওয়েলেসলির হাতে কলকাতার নিজস্ব স্থাপত্যপরিচয় নির্মাণের সময় ভেনিসিয়ান স্থপতি আন্দ্রেয়া পালাদিয়ো প্রবর্তিত ‘প্যালাডিয়ান’ শৈলী বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কলকাতার গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সেই শৈলীর রূপায়ণে কিছু পরিবর্তন হল। ঘর ঠান্ডা রাখতে ঘরের উচ্চতা বাড়ানো হল, তাই স্তম্ভ ও খিলানের অনুপাতিক মাপ মূল প্যালাডিয়ান শৈলীর মতো রাখা গেল না। বায়ু চলাচল উন্নত করতে ঝিলিমিলির মতো স্ক্রিন যুক্ত করে ধ্রুপদী পোর্টিকোর জায়গায় বসানো হল বারান্দা। গরম ও বৃষ্টির জন্য জানলার গঠনেও বদল হল। ফলে ‘নিয়ো-প্যালাডিয়ান’ নামে কলকাতার নিজস্ব এক স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠল। কলকাতার সাবেক ‘গভর্নমেন্ট হাউস’, আজকের রাজভবন থেকে শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বহু সরকারি-বেসরকারি বাড়ির নির্মাণে।

সর্বজনীন স্নানাগার বা ‘বাথ হাউস’ নামে আর এক ধরনের স্থাপত্য তৈরি হওয়া শুরু হল। সামাজিক ব্যবহারের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে বেরিয়ে, পোশাকের অবাধ স্বাধীনতার সঙ্গে সামাজিক মেলামেশার একটি ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠল এগুলি। ১৮৫৮ সালের একটি লেখায় দেখা যাচ্ছে, সাঁতার কাটা ছাড়াও ভিস্তিদের জলবহনের জন্য ব্যবহৃত ছাগলের চামড়ার মশকে হাওয়া ভরে খেলা ছিল বাথ হাউস-এর পৃষ্ঠপোষকদের অন্যতম মনোরঞ্জন। শহরের বিখ্যাত গয়না ও ঘড়ি প্রস্তুতকারক হ্যামিলটন অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার ওয়াল্টার ডেভিসের উদ্যোগে ১৮৮৭ সালে চাঁদপাল ঘাটের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ক্যালকাটা সুইমিং বাথ’। তখন কেবল সাহেবরাই এর সদস্য হতে পারতেন।

ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করেছে ‘জিন অ্যান্ড টনিক’ নামে পরিচিত পানীয়টির উদ্ভাবন ও প্রচলনের পিছনে। উনিশ শতকের প্রথম থেকেই ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে কুইনাইন ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও এই ওষুধ দেওয়া হত। কিন্তু এর তীব্র তেতো স্বাদকে খানিকটা হালকা করতে চিনি, লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া হতে লাগল জিনের সঙ্গে। সামরিক বৃত্ত থেকে এই পানীয় ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর শ্বেতাঙ্গ সমাজে। দুপুরের ঝাঁ-ঝাঁ রোদে অসুস্থতার প্রতিষেধক হিসেবেও পরে এর বিপণন শুরু করে এক সংস্থা। স্বয়ং উইনস্টন চার্চিল মনে করতেন, উপনিবেশগুলিতে ডাক্তারদের সমবেত চেষ্টার তুলনায় জিন ও টনিকে প্রাণ বেঁচেছিল বেশি! ছবিতে ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত এক বইয়ে সাহেবদের গ্রীষ্মস্নান।

জন্মশতবর্ষে

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে সিউড়ি জেলে বন্দি কলিম শরাফী (ছবি), সহবন্দি কারা? নন্দিতা কৃপালনী রানী চন্দ কামদাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দিনকর কৌশিক প্রমুখ। জেলে বসেই গাইতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। মানুষ আর মানুষের কাজই ছিল সব, প্রথম রেকর্ডও গণসঙ্গীতের। আইপিটিএ, দক্ষিণী, বহুরূপী: কলকাতা ওঁর যৌবনতেজের সাক্ষী। দাঙ্গায় আশ্রয় ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, গানও শিখেছেন ওঁর কাছে। আজকের বাংলাদেশ পরে ঠিকানা হয়েছে, কিন্তু কলকাতাকে ভোলেননি, যেমন ভোলেনি এ শহর ওঁকে। সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘শতদল’ আগামী ১৩ জুন বিকেল ৫টায় গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের শিবানন্দ হল-এ উদ্যোগ করেছে অনুষ্ঠান, ‘জন্মশতবর্ষে কলিম শরাফী’। ঢাকার নিশাত জাহান রানা ওঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন, পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া, দেখানো হবে সন্ধ্যায়। কথালাপে সবুজকলি সেন অলক রায়চৌধুরী ও নিশাত নিজে, রবীন্দ্রগান গাইবেন দেবব্রত বিশ্বাসের আর এক ছাত্র অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়।

কলিম শরাফী।

কলিম শরাফী।

নারী-কথা

১৯২৬। দিনু ঠাকুরের পরিচালনায় মায়ার খেলা হবে, সরলা দেবী প্রমদা চরিত্রে বাছলেন অমিয়া ঠাকুরকে, শান্তা চরিত্রে আর একটি মেয়েকে। তাঁদের গান শুনে রবীন্দ্রনাথের শাবাশি, “হ্যাঁ রে সরলি, তুই এত সব সুন্দর সুন্দর গলা কোথা থেকে জোগাড় করলি রে?” অন্য মেয়েটি সতী দেবী, পরে নামকরা ভজন গাইয়ে, অতুলপ্রসাদী রবীন্দ্রগানেও যশস্বী। বিস্মৃতি থেকে তাঁকে তুলে এনেছেন নাতনি শ্রমণা চক্রবর্তী, হংসধ্বনি পত্রিকার লেখায়। সবে তিনে পড়েছে পত্রিকা, কিন্তু লেখার ধারে ভারে চমৎকার। সাম্প্রতিকতম ‘নারী সম্মাননা’ সংখ্যায় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শ্যামশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে অমল বন্দ্যোপাধ্যায়; এ ছাড়াও গওহরজান সিদ্ধেশ্বরী দেবী মীরা দেব বর্মণকে নিয়ে লেখা। ধ্রুপদগানে নারীদের অবদান, মান্না দে-র গানে পরিবারের মাতৃস্থানীয়া মহিলাদের প্রভাব, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে নারীচরিত্র-কথাও।

পুজো-পাঠ

কলকাতার দুর্গাপুজোয় দর্শক যা দেখেন তা আসলে ‘হয়ে যাওয়া’র ছবি, ‘হয়ে ওঠা’র পথটুকু ধরা থাকে না। প্রতিমা ও মণ্ডপরচনার সেই নেপথ্যকথা এ বার নিয়ে আসছে মায়া আর্ট স্পেস, আগামী ১২-১৮ জুন সন্ধ্যায় বক্তৃতামালায়। দীর্ঘ কাল ধরে যে শিল্পীদের কাজ কলকাতার দুর্গাপুজোকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বের দরবারে, তাঁরা বলবেন নিজেদের ভাবনা, অভিজ্ঞতা। থাকবেন অমর সরকার পূর্ণেন্দু দে সনাতন দিন্দা অনির্বাণ দাস তন্ময় চক্রবর্তী প্রদীপ দাস তরুণ দে ভবতোষ সুতার পার্থ দাশগুপ্ত ও সুশান্ত পাল। ১৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পর্বান্তরে থাকবেন তপতী গুহঠাকুরতা বিমল কুণ্ডু দেবদত্ত গুপ্ত অবিন চৌধুরী ও শমীন্দ্রনাথ মজুমদার।

জয়মঞ্চে

সায়ক নাট্যদলের আয়োজনে গত মে মাসে হয়েছিল নির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা নাটকের প্রতিযোগিতামূলক উৎসব, তপন থিয়েটার মঞ্চে, দশ দলের দশটি নাটক নিয়ে। তারই ফল জানা গেল এ বার। শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার যথাক্রমে বাইশে আগস্ট, ছোট গল্প ও ভানু সুন্দরীর পালা, এই তিন নাটকের। শ্রেষ্ঠ নির্দেশক, নাট্যকার, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নেপথ্যশিল্পী, ঘোষিত এই পাঁচটি পুরস্কারও। অ্যাকাডেমি মঞ্চে আগামী ১৩ জুন সন্ধেয় এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারজয়ীদের সম্মানে ভূষিত করবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও অশোক মুখোপাধ্যায়। তার পর অভিনীত হবে প্রথম শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার পুরস্কারধন্য বেলঘরিয়া অভিমুখ-এর বাইশে আগস্ট নাটকটি, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়।

শিল্পীর পথ

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথকে পাননি, পেয়েছিলেন নন্দলাল-বিনোদবিহারী-রামকিঙ্করকে। ছাত্রজীবনে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ইংরেজ শাসক তাঁকে জেলে পাঠিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার অধিকার কেড়ে নেয়। স্বাধীন দেশে বহু সম্মানে ভূষিত কে জি সুব্রহ্মণ্যন কী ভাবে চিত্ররীতির নানা বাঁক পেরিয়ে হয়ে উঠলেন অনন্য এক ভারতীয় শিল্পী, ছুঁলেন আন্তর্জাতিকতা, তা নিয়ে দশ বছর আগে ছবি করেছিলেন গৌতম ঘোষ, দ্য ম্যাজিক অব মেকিং কে জি সুব্রহ্মণ্যন। তখন শিল্পী বেঁচে, বয়স নব্বই। কে জি-র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ছবিটি (শিল্পীর সঙ্গে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথোপকথন সংবলিত) দেখানো হবে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)-তে, আজ সন্ধ্যা ৬টায়।

অভিনব

ইংরেজি বর্ণমালায় ছাব্বিশটি বর্ণ। এক-একটি বর্ণ দিয়ে প্রিয় লেখকদের নাম জিজ্ঞেস করলে পাঠকেরা এক নিঃশ্বাসে বলবেন অনেকেরই নাম। পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থা এই ভাবনা থেকেই বইবাজারে নিয়ে এসেছে অভিনব গ্রন্থমালা ‘পেঙ্গুইন ড্রপ ক্যাপস’। এক-একটি বর্ণে এক-এক জন লেখকের একটি করে বই: ‘এ’-তে অস্টেনের প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস, বি-তে ব্রন্টির জেন আয়ার, ডি-তে ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশনস, এফ-এ ফ্লব্যেয়ারের মাদাম বোভারি, জে-তে জয়েসের আ পোর্ট্রেট অব দি আর্টিস্ট অ্যাজ় আ ইয়ং ম্যান। এ ভাবেই নানা বর্ণসূত্রে প্রুস্ত থেকে ভলতেয়ার, ইশিগুরো থেকে ইয়েটস, হুইটম্যান থেকে রুশদি, জ়াফন। প্রচ্ছদে চমৎকার ক্যালিগ্রাফিতে মূল বর্ণটি লেখা (ছবি), প্রতিটিই নজরকাড়া। স্টারমার্ক-এর সাউথ সিটি ও সিটি সেন্টার বই-বিপণিতে আগ্রহী পাঠক ভিড় জমাচ্ছেন কিনতে।

ডোরাকাটা

ভারত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘প্রজেক্ট টাইগার’। বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী ও সংরক্ষণবিদ কৈলাশ সংখালার হাতে তৈরি, পঞ্চাশ-পেরোনো এই প্রকল্প দেশে বাঘ সংরক্ষণে দিশা দেখিয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথের নানা তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছে কফি-টেবিল বই রোর (প্রকা: ওয়ার্ডফোনিক্স)। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে অনস্বীকার্য অবদান থাকে পরিবেশকর্মী, ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফারদেরও। দুই বাঙালি আলোকচিত্রী শিলাদিত্য চৌধুরী ও কেতন সেনগুপ্তের ক্যামেরা দেশের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যে ক্যামেরাবন্দি করেছে ডোরাকাটা জীবন। চমৎকার ছবিগুলি (উপরে একটি) মনে করিয়ে দেয়, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বাঘ সংরক্ষণের ভূমিকা কতটা। বইটির ভূমিকা লিখেছেন সুনীল লিমাই, প্রদীপ ব্যাস ও ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

গণহত্যার সত্য

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ঠাঁই পেয়েছে বাঙালির সাহিত্যে, শিল্পে, চলচ্চিত্রে। ইতিহাসের এই পর্বটির প্রচলিত বয়ান ঘোরাফেরা করে যুদ্ধ ও যুদ্ধজয়ের গণ্ডিতেই, কথা হয় না গণহত্যা নিয়ে। অথচ ত্রিশ লক্ষ মানুষের ‘জেনোসাইড’ এই ইতিহাসের অমোচনীয় সত্য। দিল্লির তথ্যচিত্র-নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বসু এই ভাবনা থেকেই শুরু করেন গবেষণা, গণহত্যার অনালোচিত তথ্যের সন্ধান। এই সবই তিনি ধরেছেন ৯৫ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্রে, বে অব ব্লাড। দুষ্প্রাপ্য ও কিছু ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত অদেখা আর্কাইভাল ফুটেজ, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ‘ডিক্লাসিফায়েড’ ভয়েস টেপ, গণহত্যার রাতে পাক সেনার গোপন রেডিয়ো-যোগাযোগ, এমনই নানা উপাত্ত ব্যবহার করেছেন তিনি এই ছবিতে। গত বছর অগস্ট থেকে এ যাবৎ দেখানো হয়েছে দিল্লি ঢাকা লন্ডন ব্রিসবেন নিউ ইয়র্কে, আগামী ১৪ জুন দেখানো হবে কলকাতায়, নন্দন ৩-এ, বিকেল সাড়ে ৫টায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE