অপচয়: কলবিহীন পাইপ থেকে পড়েই চলেছে জল। বুধবার, উত্তর কলকাতায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
গত বছরই পানীয় জলের গুরুতর অভাবের জন্য খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাথাপিছু দৈনিক জলের পরিমাণ ৫০ লিটারে বেঁধে দিতে হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনকে।
অদূর ভবিষ্যতে কেপ টাউনের মতো অবস্থা বিশ্বের অন্য শহরগুলিতেও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিশেষ করে সেই শহরগুলিতে, যেখানে এখনও অবাধে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হচ্ছে! ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ আয়োজিত পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনায় জল-প্রসঙ্গ উঠে এল একাধিকবার।
শুধু আলোচনাই নয়, সংস্থা প্রকাশিত ‘স্টেট অব ইন্ডিয়াজ এনভায়রনমেন্ট ২০১৯’ রিপোর্টেও জলের অভাবের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’-এর (ডব্লুডব্লুএফ) একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতের যে ক’টি শহরে পানীয় জল নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল কলকাতা!
আরও পড়ুন: সুড়ঙ্গের মুখে বিকল মেট্রো
ডব্লুডব্লুএফ-এর রিপোর্ট বলছে, ‘ওয়াটার স্ট্রেসড সিটি’-র মাপকাঠির ভিত্তিতে প্রথম পাঁচটি শহরের মধ্যে চেন্নাই, হায়দরাবাদের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে এ শহরও। ওই রিপোর্টে অবশ্য রয়েছে দিল্লি এবং মুম্বইও। ক্রমাগত মাটির নীচের জল ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়া এবং বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহারে ব্যর্থতা, মূলত এই দুই কারণেই অন্য শহরের সঙ্গে কলকাতাকেও পানীয় জলের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। আলোচনাসভার অন্যতম বক্তা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লকুর বলেন, ‘‘মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে এত যে আবাসন, হোটেল হচ্ছে, তার ফলে জলস্তর কত কমছে সে ভাবে তার কোনও তথ্যই নেই। ফলে গভীরে সমস্যা হচ্ছে।’’ ‘ইন্ডিয়ান মেটিরিওলজি ডিপার্টমেন্ট’-এর ডিরেক্টর জেনারেল কে জে রমেশ বলেন, ‘‘যেহেতু জলস্তর নেমে যাচ্ছে, তাই বৃষ্টির জলকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। সুতরাং গুরুত্ব দিতে হবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপরে।’’
আরও পড়ুন: দগ্ধ কারখানার বাইরে এখনও নেভেনি আশা
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘দ্য সেন্ট্রাল পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন’-এর (সিপিএইচইইও) নির্দেশিকা বলছে, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই-সহ বড় শহরগুলিতে দিনে মাথাপিছু ১৫০ লিটার জলের প্রয়োজন। সারা দেশে জল সরবরাহ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে সিপিএইচইইও প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মাথাপিছু জলের চাহিদা কত এবং কত জল দৈনিক খরচ হচ্ছে, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য গত দেড় বছর ধরে কলকাতা পুরসভার এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প চলছে। তাতে যে তথ্য ধরা পড়েছে, এখনই তাতে চমকে উঠেছেন পুরকর্তারা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ডব্লুডব্লুএফ-এর
রিপোর্ট সত্যি হতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত সমীক্ষা রিপোর্টে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। তাঁর কথায়, ‘‘এমনও দেখা যাচ্ছে, যেখানে দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার জল খরচ হওয়া দরকার, সেখানে কোনও কোনও বাড়ির ক্ষেত্রে তা মাথাপিছু ৩০০০ লিটারও খরচ হচ্ছে। এমন বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে জল ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালাব আমরা, না হলে ভবিষ্যতে জলের জন্য হাহাকার তৈরি হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy