Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

চল্লিশ ছুঁল তাপমাত্রা, শুকনো হাওয়ায় কলকাতা যেন পুরুলিয়া

জ্বালা ধরানো গরম, দোসর শুকনো গরম হাওয়া, এমন ছবিটা পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেই দেখা যায়। বৃহস্পতিবার অবশ্য সেই পরিস্থিতিটা হাজির হয়েছে মহানগরেও। পশ্চিমাঞ্চলের মতোই কলকাতাতেও চোখ রাঙাচ্ছে তাপপ্রবাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:০৫
Share: Save:

ঠিক যেন চৈত্রের শেষের পুরুলিয়া-আসানসোল!

জ্বালা ধরানো গরম, দোসর শুকনো গরম হাওয়া, এমন ছবিটা পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেই দেখা যায়। বৃহস্পতিবার অবশ্য সেই পরিস্থিতিটা হাজির হয়েছে মহানগরেও। পশ্চিমাঞ্চলের মতোই কলকাতাতেও চোখ রাঙাচ্ছে তাপপ্রবাহ।

এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। হাওয়া অফিসের নথি বলছে, গত দশ বছরে এ নিয়ে চার বার চল্লিশের কোঠা পেরলো এপ্রিল। এর আগে ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১৪ সালের এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির উপরে উঠেছিল তাপমাত্রা।

গরমকালে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি উপরে উঠলেই ‘তাপপ্রবাহ’ বলে ঘোষণা করে হাওয়া অফিস। সেই হিসেবে এ দিন তাপপ্রবাহ না বইলেও তার পরিস্থিতিটা তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, চলতি সপ্তাহের শেষেই তাপপ্রবাহের মুখে পড়তে পারে কলকাতা।

এ দিন অবশ্য চড়া গরমের সঙ্গে দোসর হয়েছে শুষ্কতাও। আবহবিদেরা বলছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে শুকনো গরম হাওয়া বয়ে আসছে। তার ফলে ধাক্কা খাচ্ছে দখিনা হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে আর্দ্রতাও নামছে তরতরিয়ে। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ। এ দিন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে!

এক দিকে জ্বালা ধরানো রোদের তেজ, তার উপরে শুকনো গরম হাওয়া— জোড়া ফলায় এ দিন সকাল থেকেই নাকাল হয়েছেন পথে বেরোনো লোকজন। শুকনো গরমের চোটে জ্বালা ধরেছে চোখেমুখে। শুকনো গরমের ঠেলায় মেট্রো স্টেশনে ঢুকেই জলে মুখ ধুয়েছেন বহু যাত্রী। ভরা গরমে ভিড় জমেছে ঠান্ডা পানীয়-সরবতের দোকানে। বেলা গড়ানোর আগেই পসরা খালি হয়ে গিয়েছে অফিসপাড়ার ডাব বিক্রেতার। দুপুরে বিমা সংস্থার অফিস ক্যান্টিনে খেতে যাওয়ার আগে বোতলে ঠান্ডা জল ভরে নিয়ে গিয়েছিলেন সুবীর দাস। খবর পেয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে উঠে এসে খদ্দেরের আনা জলে গলা ভিজিয়েছেন ক্যান্টিন মালিক!

অনেকেই বলছেন, শেষ চৈত্রে ফুটিফাটা গরম পড়ে বটে। কিন্তু খাস কলকাতায় এমন জ্বালা ধরানো শুকনো গরম মেলে না। তা হলে এ বার হল কেন?

আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝাড়খণ্ড এবং লাগোয়া মধ্য ভারত থেকে শুকনো গরম হাওয়া ছুটে আসছে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে থাকা উচ্চচাপ বলয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে জোলো হাওয়ার জোগান দেয়। শুকনো গরম হাওয়ার ঠেলায় উচ্চচাপ দূরে সরে যাওয়ায় জোলো হাওয়া মিলছে না। তার ফলেই বাতাসের আর্দ্রতা কমছে। আম-বাঙালি এই নাকাল করা গরম থেকে রেহাই পেতে চাইলেও স্বস্তির আশ্বাসবাণী শোনাতে পারছেন না কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে এখনই রেহাই মিলবে না। বরং কলকাতায় তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলেও তীব্র গরম চলবে।’’

আবহবিদেরা বলছেন, প্রতি বছরই গড় তাপমাত্রা কিছুটা করে বাড়ছে। এ বছর তো বিশ্ব উষ্ণায়নের দাপটটা আরও স্পষ্ট ভাবে মালুম হচ্ছে। শীতেও জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েনি। বসন্তে দখিনা বাতাসের বদলে মাঝেমধ্যেই শুকনো গরম মিলেছে। এ বার এপ্রিলের গোড়াতেই গরমের যা চেহারা তাতে সেই আশঙ্কা আরও মাথাচাড়া দিচ্ছে বলেই দাবি করছেন আবহবিদেরা। এই পরিস্থিতিতে হাওয়া অফিসের অন্দরে একটি তথ্য নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। সেটা কী?

আবহাওয়া দফতরের খাতায় লেখা রয়েছে, এ যাবৎ কালে এপ্রিল মাসে সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল। পারদ উঠেছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অনেকেরই প্রশ্ন, এ বছর ইনিংসের গোড়াতেই গরমের যা মেজাজ তাতে সেই রেকর্ড আস্ত থাকবে তো?

অন্য বিষয়গুলি:

weather heat temperature Kolkata summer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy