Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

বিজেপির মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার, গ্রেফতার কৈলাস, মুকুল, সায়ন্তন

শুক্রবার দুপুর ২টোয় টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি।

তখন সায়ন্তন বসুর নেতৃত্বে এগোচ্ছে মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

তখন সায়ন্তন বসুর নেতৃত্বে এগোচ্ছে মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৩০
Share: Save:

সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন)-র সমর্থনে বিজেপির মিছিলের চেষ্টা। অনুমতি নেই বলে জানিয়ে বাধা কলকাতা পুলিশের। তা নিয়ে শুক্রবার ধুন্ধুমারের সাক্ষী হল টালিগঞ্জ এলাকা। গ্রেফতার করা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, সায়ন্তন বসু-সহ রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে। সিএএ-র বিরোধিতায় যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিল করতে পারেন, তা হলে সিএএ-র সমর্থনে বিজেপি কেন পারবে না? এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন কৈলাস। পশ্চিমবঙ্গ কি বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন সায়ন্তনের।

সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পর থেকে দেশের নানা প্রান্তেই ‘অভিনন্দন যাত্রা’ করছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে যে হেতু সিএএ-এনআরসির বিরোধিতা তুঙ্গে, সে হেতু পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচিতে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতারা গোটা বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন সিএএ-র সমর্থনে জনমত তুলে ধরার চেষ্টায়।

শুক্রবার দুপুর ২টোয় টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। উত্তর কলকাতায় জে পি নড্ডার মিছিলের পরে দক্ষিণ কলকাতার এই মিছিলই ছিল সিএএ-র সমর্থনে শহরের বুকে বিজেপির সবচেয়ে কর্মসূচি। কারণ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক থেকে সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার— সবাই এ দিন শামিল হয়েছিলেন কর্মসূচিতে। কিন্তু শুরু হওয়ার আগেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। বিজেপির গোটা নেতৃত্বকেই গ্রেফতার করে নেওয়া হয়।

গ্রেফতারির পর বিক্ষোভ জয়প্রকাশ মজুমদারের।—নিজস্ব চিত্র।

টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে বিজেপির জমায়েত শুরুর আগে থেকেই এ দিন রাস্তায় নেমে পড়েছিল পুলিশ। মিছিলের অনুমতি নেই, সুতরাং মিছিল করতে দেওয়া হবে না বলে বিজেপি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদাররা পিছু হঠতে রাজি হননি। ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের বচসা শুরু হয়। খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় বিজেপি-পুলিশের মধ্যে। তার পরেই সায়ন্তন, জয়প্রকাশদের গ্রেফতার করে পুলিশ গাড়িতে তুলে দেয়।

আরও পড়ুন: টিপ্পনী’তে না গিয়ে বিধানসভায় রাজ্যের লিখে দেওয়া ভাষণই পড়লেন ধনখড়

কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায় কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু তখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের আয়ত্তে ছিল না। তাই কৈলাস-মুকুলকে প্রথমে গাড়ি থেকে নামতেই বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে কৈলাসরা জোর করেই নেমে পড়েন। এর পরে তাঁদেরও গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন ডিসি (দক্ষিণ) মিরাজ খালিদ। কিন্তু কৈলাস-মুকুলকে গ্রেফতার করার চেষ্টা হতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। শুধু বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নয়, কৈলাস-মুকুলের নিরাপত্তায় যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকে, সেই বাহিনীর সঙ্গেও পুলিশের বচসা শুরু হয়ে যায়। কারণ কৈলাস-মুকুলকে ঘিরে রেখে গ্রেফতারি আটকে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।

গ্রেফতারির পর লালবাজারের নিয়ে যাওয়া হল কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়কে।—নিজস্ব চিত্র।

পরে অবশ্য বিজেপির ওই দুই নেতাও গ্রেফতারি বরণ করেন। গ্রেফতার হন অগ্নিমিত্রা পাল, রিমঝিম মিত্ররাও। বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চারু মার্কেট থানায়। তাই টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে থানার দিকে যেতে শুরু করেন। তার আগেই অবশ্য মিছিল রোখার জন্য ফাঁড়িতে মোতায়েন করা বাহিনীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল চারু মার্কেট থানায়। ফলে থানায় ঢুকে অশান্তি পাকাতে পারেননি বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু বিজেপি নেতাদের বেশি ক্ষণ সেখানে রাখেনি পুলিশ। কৈলাস, মুকুল, সায়ন্তন, জয়প্রকাশদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় লালবাজার কেন্দ্রীয় লকআপে। সন্ধ্যার পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁদের।

আরও পড়ুন: দরিদ্র মেয়েদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও পড়াশোনার পথে সাহায্যের হাত টিসিএফ-এর

গ্রেফতার হওয়ার সময়ে প্রিজন ভ্যানের পাদানিতে দাঁড়িয়েই এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ-র বিরোধিতা করে যদি কেউ মিছিল করতে পারেন, তা হলে আমরা সিএএ-র সমর্থনে মিছিল করতে পারব না কেন! গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানছে না। মমতার এই স্বৈরাচার আমরা শেষ করে দেব।’’

পুলিশের অবশ্য দাবি, মিছিলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি বিজেপি-কে। অনুমতি চেয়ে বিজেপি যে চিঠি দিয়েছিল, তা পুলিশ মেনে নিয়েছে। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।

এই অনুমতি না দেওয়াকেই আক্রমণ করেছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই। যিনি নিজে সারা ক্ষণ মিছিল করে বেড়াচ্ছেন, তাঁর পুলিশই আবার অন্যদের মিছিল করতে বাধা দিচ্ছে।’’ সায়ন্তনের প্রশ্ন, ‘‘সিএএ-র বিরুদ্ধে মিছিল অনুমতি পাবে। সিএএ সমর্থন করলে মিছিলের অনুমতি নেই। এটা কি বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে নাকি?’’ বৃহস্পতিবার মানিকতলাতেও জোর করে সভা করতে হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সায়ন্তনের আশঙ্কা, শনিবার সিঁথি থেকে যে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেটির ক্ষেত্রেও এ ভাবেই পুলিশ নামিয়ে বাধা দেওয়া হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy