— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে পুলিশ লেখা স্টিকার লাগানো। বনেটের সঙ্গে ঝুলছে তৃণমূল নেতা-নেত্রীর ছবি দেওয়া ব্যানার। মঙ্গলবার তৃণমূল সমর্থকদের বিজয়োল্লাসের মধ্যে হাজরা মোড়ে এসে পৌঁছনো এমন একটি গাড়ি আটকেছিল পুলিশ। জানতে চাওয়া হয়, গাড়িটি কোথা থেকে এসেছে, গাড়ির মালিক পুলিশে চাকরি করেন কি না। যথাযথ উত্তর না পেয়ে এর পরে গাড়ির চালককে আটক করা হয় ঘটনাস্থলে। গাড়িটিকে পাঠানো হয় থানায়।
ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘গাড়ির মালিক আদৌ পুলিশে চাকরি করেন না। এই গাড়ি বিজয়োৎসবে এসেছে রাজনৈতিক দলের ব্যানার টাঙিয়ে। সম্ভবত ভোটের বাজারে প্রভাব খাটাতেই পুলিশ লেখা স্টিকার লাগানো হয়েছিল।’’ জানা গেল, নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে এর পরে গাড়ির মালিক এবং চালকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে পুলিশ।
তবে, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নির্বাচনী মরসুমে শুধুমাত্র কলকাতা থেকেই প্রায় ৬০০-র বেশি এমন গাড়ি আটক করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে ধরা পড়া এমন গাড়ির সংখ্যা হাজারেরও বেশি। প্রচার পর্বের থেকেও ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন এমন গাড়ি বেশি ধরা পড়েছে। লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, পুলিশ, আইনজীবী, সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ধরা পড়া গাড়িতে আমলা, বিশেষ কৌঁসুলি লেখা স্টিকারও মিলেছে। তবে ধরা পড়া গাড়িগুলিতে সবচেয়ে বেশি মিলেছে চিকিৎসক ও ‘পর্যবেক্ষক’ লেখা স্টিকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১৯ (অন্যের নাম ভাঁড়িয়ে প্রতারণা) এবং মোটরযান আইনের একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে জরিমানা যেহেতু ৫০০ টাকার বেশি নয় এবং ৪১৯ ধারাটি জামিনযোগ্য, তাই জামিন পেয়েছেন সকলেই।
বছরখানেক আগে এমন আইএএস, আইপিএস লেখা স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে অপরাধ সংঘটিত করার একের পর এক ঘটনা সামনে আসায় শোরগোল পড়েছিল। প্রশ্ন ওঠে, গাড়িতে এমন স্টিকার লাগানো কতটা যুক্তিযুক্ত? সম্প্রতি দেশের অন্যান্য রাজ্যে ধর্মীয় বার্তা লেখা স্টিকার লাগানো নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ পদক্ষেপ করে এমন স্টিকার খুলিয়ে দিয়েছে। চেন্নাইয়ে গত ১ মে পর্যন্ত প্রশাসন সময় দিয়েছিল ভুয়ো স্টিকার খুলে ফেলার জন্য। ২ মে থেকে এমন স্টিকারের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়। ১৯৮৮ সালের মোটরযান আইনের ১৯৮ ধারা (অবৈধ ভাবে গাড়ির গঠনমূলক পরিবর্তন) এবং কেন্দ্রীয় মোটরযান আইনের ১৭৭ ধারায় মামলা করা হয়।
এ রাজ্যে অবশ্য এই বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের একটি রায়কে সামনে রেখে সোনারপুর থানার এক অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। যেখানে ওই অফিসার ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে বাড়ির কাছে রেখেছিলেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে তিনি প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও হাই কোর্ট জানায়, সত্যিই পুলিশকর্মীর গাড়ি হলে ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকার লাগানো অবৈধ নয়। তবে সেই গাড়ির বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যেতে পারে। এই রায়কে সামনে রেখেই আইনজীবী, চিকিৎসক, এমনকি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত গাড়িতে বিশেষ স্টিকার ব্যবহার করছেন।
এ নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্টিকার দেখে বহু ক্ষেত্রেই নাকা তল্লাশির সময়ে সে ভাবে অনেক গাড়ির তল্লাশি হয় না। ফলে, কোনটা আদতে বৈধ স্টিকার লাগানো গাড়ি আর কোনটা নয়, বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। খুঁটিয়ে দেখলে হয়তো ভোটের সময়ে এমন অবৈধ স্টিকার লাগানো গাড়ি ধরা পড়ার সংখ্যা আরও বাড়ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy