অচল: স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মিনিবাস। সোমবার, গড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র
শাসক দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে জোর করে রুট থেকে মিনিবাস তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল গড়িয়ায়। যার প্রতিবাদে সোমবার সারা দিন গড়িয়া স্টেশন থেকে তিনটি রুটের মিনিবাস বন্ধ রাখেন মালিকেরা।
এলাকা সূত্রের খবর, দু’পক্ষের এই টানাপড়েনে এ দিন গড়িয়া স্টেশন থেকে বি বা দী বাগ পর্যন্ত দু’টি রুটে এবং গড়িয়া স্টেশন থেকে নিউ টাউনের ইকো স্পেস পর্যন্ত একটি রুটে কোনও বাস চলেনি। ৪৫টি বাসের একটিও রাস্তায় নামানো হয়নি। যার জেরে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য নিত্যযাত্রী।
সকাল থেকে বাস না পেয়ে অনেকেই অটো বা ট্যাক্সি ধরতে ছোটেন। গড়িয়া সি-ফাইভ বাসস্ট্যান্ডে এ দিন বন্ধ ছিল মিনিবাসের স্টার্টারের গুমটিও। দিনভর নানা সময়ে বাসের খোঁজে এসে যাত্রীদের ফিরে যেতে হয়েছে।
মিনিবাস-মালিকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে যখন তখন রুট থেকে মিনিবাস তুলে নিচ্ছেন শাসক দলের স্থানীয় কিছু নেতা। ইচ্ছেমতো বাস নিয়ে তা সারা দিন আটকে রাখা হচ্ছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মিটিং-মিছিলে যাওয়ার জন্য। প্রতিবাদ করলেই জুটছে লাঞ্ছনা।
এক মিনিবাস-মালিক বলেন, “বছরে দু’-এক বার হলে তা-ও ঠিক ছিল। এখন প্রতি মাসেই কয়েক দিনের জন্য বাস নিয়ে যায়। সারা দিন বাস আটকে রাখার পরে কখনও ৫০০ টাকা মেলে, কখনও তা-ও মেলে না। তেলের খরচ ছাড়াও চালক–কন্ডাক্টরের বেতন রয়েছে। এই টাকায় কিছুই হয় না।”
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। বাসমালিকদের অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবারে শাসক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া উপলক্ষে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে বাস লাগবে বলে গড়িয়া মিনিবাস সিন্ডিকেটের কাছে দাবি জানান কিছু স্থানীয় তৃণমূল নেতা। সেই মতো শনিবার তাঁরা গোটা পাঁচেক বাস নিয়ে ডায়মন্ড হারবারে যান। কিন্ত তার জন্য কোনও টাকা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ বাসমালিকদের।
এক বাসমালিক বলেন, “ডায়মন্ড হারবার যেতে-আসতে হাজার দুয়েক টাকার তেল পোড়ে। সব নিয়ে যা খরচ হয়, তার কিছুই প্রায় দেয় না।”
এর পরে ফের সোমবারের জন্য ১২টি বাস দাবি করা হয় বলে অভিযোগ বাসমালিকদের। সিন্ডিকেটের সম্পাদক রতন সরকার এবং সভাপতি অপুকান্তি ঘোষ জানান, পাপাই এবং পিন্টু নামে স্থানীয় দুই যুবক নিজেদের শাসক দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য বাস নিয়ে যান। এ দিন তাঁদের দাবি মানতে না পেরেই বাসমালিকেরা সমবেত ভাবে মিনিবাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
সিন্ডিকেটের সভাপতি অপুকান্তি বলেন, “যাত্রীদের অসুবিধা হলেও আমাদের কিছু করার নেই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ করেছি। বিষয়টি আমরা পরিবহণ দফতরকেও জানাচ্ছি।”
পাপাইকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। পিন্টু বলেন, ‘‘আমরা কারও উপরে জোর করিনি। ওঁরা না দেওয়ায় বাস নিয়ে যাইনি। এখন দলের কর্মসূচিতে
ব্যস্ত আছি।” শাসক দলের বাস ইউনিয়নের কর্মী সংগঠনের নেতা তপন দাস বলেন, “বাসমালিকেরা বাস বন্ধ রেখেছেন। আমাদের কিছু বলার নেই।”
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলীয় কর্মসূচিতে আমরাও বাস নিই। তবে বাস মালিকদের প্রাপ্য দিয়ে দিই। যদি কেউ এই কাজ করে থাকেন, তাঁরা ঠিক করেননি। তবে এমন কোনও বিষয় আমার জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy