প্রতীকী ছবি।
বছর তিনেক আগে নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের সাততলায় আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলের স্কাই ল্যাডার প্রথমে ঢুকতেই পারেনি। শেষ পর্যন্ত বিল্ডিংয়ের টালি খুলে রাস্তা তৈরি করে ল্যাডার ঢোকানোর ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছিল।
নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং একটা উদাহরণ মাত্র। তারও আগে ২০০৮ সালের নন্দরাম মার্কেট এবং ২০১০ সালের স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, বহুতলে আগুন নেভানোর জন্য স্কাই ল্যাডার যথেষ্ট নয়। ঠেকে শিখেছে দমকল দফতর। এ বার দু’টি নতুন যন্ত্র কিনছে দমকল। যার পোশাকি নাম ‘হাইড্রলিক ওয়াটার মনিটর’। দু’টি যন্ত্রের একটি ৫৫ মিটার এবং অন্যটি ৩৫ মিটার উচ্চতার। বহুতলে আগুন লাগলে এই দু’টি যন্ত্র কাজে লাগানো হবে। এর মুখ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারবে। ফলে নীচে দাঁড়িয়ে রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপেই বহুতলের বিভিন্ন দিকে জল দেওয়া যাবে।
দমকল সূত্রের খবর, বহুতলে আগুন লাগলে স্কাই ল্যাডার ব্যবহার করা হয়। দমকলের হাতে কলকাতায় ছ’টি এমন সিঁড়ি রয়েছে। এর সাহায্যে বহুতলে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি জল দিয়ে আগুন নেভানোর কাজও করে এই যন্ত্র। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ল্যাডারের আকার-আয়তন অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে তাকে কাজে লাগাতে আরও প্রায় পঁচিশ মিনিট সময় পেরিয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে আগুন আরও বেড়ে যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে হাইড্রলিক ওয়াটার মনিটর অনেক বেশি কার্যকর।’’ দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘দু’টি হাইড্রলিক ওয়াটার মনিটর চলতি আর্থিক বছরেই কেনা হবে। প্রতিটির দাম প্রায় আট কোটি টাকা।’’
এ ছাড়াও দু’টি নতুন ক্যামেরা কিনছে দমকল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচটি ‘ড্রোন ক্যামেরা’ এবং ১৫টি ‘থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা’ কেনা হবে বলে জানিয়েছেন দমকলের ডিজি। তাঁর কথায়, ‘‘বহুতলে আগুনের উৎসস্থল খুঁজে বার করতেই দেরি হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানে ড্রোন ক্যামেরা কেনা হচ্ছে।’’ পাশাপাশি আগুন লাগার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিল্ডিংয়ে অন্ধকার এবং ধোঁয়ার মধ্যেও দমকলকর্মীরা যাতে সহজে ঢুকতে পারেন, সে জন্য ১৫টি থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা কেনা হবে।
তবে নতুন যন্ত্রপাতির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে কতটা নজর দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দমকলের আধিকারিকদের একাংশ। দমকলের এক প্রাক্তন আধিকারিকের কথায়, ‘‘ব্রিটিশ আমলে প্রতিদিন দমকলের গাড়ি থেকে শুরু করে নতুন যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। এটা কর্মীদের নিত্য দিনের কাজের অংশ ছিল। কোনও কারণে ওই নিয়ম ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আধুনিক হওয়ার পাশাপাশি নয়া যন্ত্রপাতির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে সতর্ক থাকতে হবে কর্তৃপক্ষকে। না হলে বিপদের সময়ে ওই সব যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করবে না। তাতে আরও সমস্যা বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy