Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Tune

বাতিল জিনিসে বাজছে সুর

এ কাজে তাদের মূল প্রেরণা ট্যাংরার সঞ্জয় মণ্ডল। ছেলেকে দামি বাজনা কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না আনাজ বিক্রেতা বাবার। পাড়ায় কীর্তনের আসরেও বাজনা ছুঁয়ে দেখার অনুমতি ছিল না সঞ্জয়ের|

সুরেলা: অভিনব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে চলছে মহড়া। নিজস্ব চিত্র

সুরেলা: অভিনব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে চলছে মহড়া। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

ফুটবলের ফেলে দেওয়া ব্লাডারটি মাটির হাঁড়ির মুখে বসিয়ে তৈরি হয়েছে খোল। ফেলে দেওয়া রঙের পাত্রে কাঠের টুকরো আর স্প্রিং লাগিয়ে তৈরি হয়েছে গিটার। ক্যানের মুখে এক্স-রে প্লেট বসিয়ে হচ্ছে ড্রাম। কাঠের ফ্রেমে ঠান্ডা পানীয়ের বোতলের ছিপি তার দিয়ে আটকে তৈরি হয়েছে পারকাশন। এমনকী জলের বোতলে কাচের চুড়ির ভাঙা টুকরো দিয়েও তৈরি হয়েছে বিশেষ বাদ্যযন্ত্র। ইলেকট্রিক ওয়্যারিং-এ ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পাইপের টুকরোর সঙ্গে বাতিল বাঁশি জুড়ে হয়ে গিয়েছে স্যাক্সোফোন। আর এ সব নিয়েই খোলা আকাশের নীচে মেতে থাকে কচিকাঁচার দল।

এ কাজে তাদের মূল প্রেরণা ট্যাংরার সঞ্জয় মণ্ডল। ছেলেকে দামি বাজনা কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না আনাজ বিক্রেতা বাবার। পাড়ায় কীর্তনের আসরেও বাজনা ছুঁয়ে দেখার অনুমতি ছিল না সঞ্জয়ের| তাই সুরের টানেই এমন বাতিল জিনিস দিয়ে যন্ত্রের উদ্ভাবন করেন সঞ্জয়।

ওই সব বাদ্যযন্ত্র দিব্যি পাল্লা দিচ্ছে গিটার, স্যাক্সোফোন, ড্রাম কিংবা পারকাশনের মতো জনপ্রিয় বাজনার সঙ্গে। এমন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাজাতে বাজাতেই পেরিয়ে গিয়েছে ২০ বছর। ট্যাংরার কাছাকাছি হাটগাছিয়া বস্তির শিশু-কিশোরদের তালিম দিয়ে একটা দলই গড়ে ফেলেছেন সঞ্জয়। পোটে, ছোটু, দুষ্টু, নাটা, বুড়িদের মতো ২০-২৫ জনকে নিয়ে বস্তির এক চিলতে টালির ঘরে দলের মহড়া হয় নিয়মিত। বাতিল জিনিস থেকে কী ভাবে সুরেলা শব্দ বার করা যায় তা নিয়ে চর্চা চলে। পাশাপাশি দলের সদস্যদের জন্য আসল বাদ্যযন্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।

এক সময়ে রাজনৈতিক গোলমালে জড়িয়ে দীর্ঘদিন পাড়াছাড়া ছিলেন সঞ্জয়। টাকার অভাবে কলেজে পড়া হয়নি। স্নাতক হওয়ার দৌড়ে ৩৭ বছর বয়সে ফের পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি। বছর কয়েক আগে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের রিয়ালিটি শোয়ে যোগ দেওয়ায় কিছু অনুষ্ঠানে ডাকও আসছে ওঁদের। অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া টাকায় হাটগাছিয়াতেই দু’কাঠা জমির ব্যবস্থা হয়েছে। সঞ্জয়ের কথায়, “বাজনার শব্দে মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীরা বিরক্ত হন। তাই একটা ঘর বানাতে চাই, যেখানে বসে বাদ্যযন্ত্র বাজালে শব্দ বাইরে যাবে না।”

সামান্য দূরে বাইপাসের ধারে সার দিয়ে দাঁড়ানো বহুতল আবাসনের দিক থেকে দৃষ্টি সরান সঞ্জয়। কবে হবে মাথার উপরের ছোট্ট ছাদ? জানা নেই ‘আসমান’-এর সদস্যদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Tune Musical Instruments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE