উপদ্রব: ইঁদুরের অত্যাচারে এ ভাবেই ফুটো হয়েছে বাড়ির ভিত। ইঁদুরের বংশবিস্তার রুখতে দেওয়ালে পড়েছে নোটিসও। বিদ্যাসাগর কলেজ সংলগ্ন শঙ্কর ঘোষ লেনে। —নিজস্ব চিত্র
ইঁদুর থেকে বাঁচতে বাসিন্দারা বিড়াল পুষতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ধেড়ে ইঁদুরের ভয়ে চম্পট দিয়েছে সেই বিড়াল। শুধু তা-ই নয়, নিশুতি রাতে ইঁদুরের দাপট বাড়লে পাড়ার নেড়ি কুকুরেরাও তাদের রীতিমতো সমীহ করে চলে।
নাদুসনুদুস লোমশ চেহারা, লম্বায় প্রায় এক ফুট। উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ সংলগ্ন শঙ্কর ঘোষ লেন, গুরুপ্রসাদ চৌধুরী লেনে এমন চেহারার ইঁদুরের দৌরাত্ম্যের নিদর্শন মিলবে সর্বত্র। এলাকার কোথাও ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে বড় বাড়ির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে, কোথাও মাটি খুঁড়ে দেওয়ায় ধসে গিয়েছে রাস্তা। এমনকী বাসিন্দারা দেওয়ালে নোটিস ঝুলিয়ে ইঁদুরের উৎপাত সম্পর্কে আগন্তুককে সতর্কও করছেন। সেই নোটিসে এলাকাবাসীর উদ্দেশে রয়েছে যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে সচেতন করতে মাইকে নিয়মিত প্রচারও চলছে। কিন্তু কোনও ভাবেই ইঁদুরবাবাজিকে ঘায়েল করা যাচ্ছে না।
ওই এলাকাতেই পুরনো দিনের বাড়ি এবং রাস্তা সংলগ্ন দোকান রয়েছে সঞ্জয় জায়সবালের। বললেন, ‘‘দেখে যান, কী ভাবে আমার বাড়ির ভিতে ইঁদুর গর্ত করে রেখেছে। পুরনো বাড়ির ভিতটাই নড়িয়ে দিল এই ধেড়ে ইঁদুর। কোনও দিন বাড়িটা না ধসে পড়ে যায়। বাধ্য হয়ে ইঁদুর তাড়াতে বিড়াল পুষেছিলাম। কিন্তু ইঁদুরের ভয়ে সেই বিড়ালই তো পালিয়েছে। এমনকী রাস্তার কুকুরগুলো পর্যন্ত ইঁদুরগুলোকে ভয় পায়।’’
এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্রায় প্রতি বাড়ির ভিতের চার দিকে রীতিমতো বড় বড় গর্ত করা রয়েছে। তা দিয়েই ইঁদুরদের অবাধ যাতায়াত চলে। মাটি খুঁড়ে রাস্তা ফোঁপরা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এলাকার এক বাসিন্দা জানান, কয়েক মাস আগেই রাস্তায় ধস নেমেছিল। সেই ধস মেরামতিও করা হয়েছে। কিন্তু ফের সেই জায়গায় ইঁদুর গর্ত করে দিয়েছে। অন্য বাসিন্দা দিলীপ দাস বলেন, ‘‘শুধু বাড়ির ভিত নাড়িয়ে বা রাস্তায় ধস নামিয়েই ক্ষান্ত হয় না এরা। রাতের অন্ধকারে তারা বাড়িতে ঢুকে রীতিমতো খাবার সাঁটিয়ে চলে যায়।’’ আর এক বাসিন্দা আক্ষেপের সুরে জানালেন, গত পরশু রাতে পাঁঠার মাংস এবং রুটি রান্না করেছিলেন। খাওয়ার পরে কিছুটা রুটি-মাংস বেঁচে ছিল। সেটা টেবিলে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সকালে উঠে দেখেন, বাটিতে মাংস নেই এক টুকরোও। রুটি পড়ে রয়েছে আধ খাওয়া কয়েকটা।
বাজারের থলি থেকে কাঁচা আনাজ বার করে না রাখলে ব্যাগ থেকে তা-ও অদৃশ্য হয়ে যায়, বলছেন এলাকাবাসী। তাঁদের মতে, রাত দশটার পরে রাস্তায় লোকজন কমে গেলে ওরা এতই বেপরোয়া হয়, পারলে বাচ্চাদের হাত থেকেও খাবার ছিনিয়ে খেয়ে নেয়।
এমন দাপিয়ে বেড়ানো হৃষ্টপুষ্ট গণেশের বাহনকে মারার ছক কষতে বিষও ছড়ানো হয়েছে এলাকায়। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে রাখতে ভয় করে। কোথায় গিয়ে বাচ্চারা মুখে পুড়ে দেবে। তাই সব জায়গায় তো বিষ ছড়াতে পারছি না। তবে এলাকার জঞ্জাল নিয়মিত পরিষ্কার রাখার উপরেই আমরা জোর দিচ্ছি।’’ যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ইঁদুরের উপদ্রব রুখতে সে ভাবে তৎপরতা দেখাচ্ছেন না ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাধনা বসু। স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফেই সচেতনতার প্রচার চলছে। সাধনাদেবীর বক্তব্য, ‘‘সমস্যার সমাধানে পুরসভার তরফে যথেষ্ট চেষ্টা চলছে। আমরা বাসিন্দাদের বলেছি, নোংরা, উচ্ছিষ্ট বাড়ির বাইরে অথবা গলিতে ফেলবেন না। কিন্তু সবাই তো সে কথা শোনেন না। এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy