শোক: স্বপন দে-র মৃতদেহের সামনে তাঁর পরিজনেরা। সোমবার, অশোকনগরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে সোমবার তাঁর দেখা হওয়ার কথা ছিল। দেখা হল, কিন্তু কফিনবন্দি অবস্থায়।
উত্তরপ্রদেশের মোগলসরাইয়ে শনিবার দুপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার স্বপন দে-র মৃতদেহ সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ অশোকনগরের বাড়িতে এসে পৌঁছয়। স্থানীয় ৮ নম্বর গোলমাঠ এলাকার বাড়িতে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না এলাকায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত স্বপনের এ ভাবে খুন হয়ে যাওয়াটা। বাসিন্দারা জানালেন, মিশুকে স্বভাবের ছিলেন স্বপন। ফুটবল, ক্রিকেট, ক্যারম তিনি ভালই খেলতেন।
এ দিন গাড়ি থেকে কফিনবন্দি দেহ নামিয়ে দরজার কাছে রাখা হয়। স্বামীর মাথার কাছে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী নন্দিতা। স্বপনের মেয়ে শুভেচ্ছাও এ দিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্যমগ্রামের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সে। স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে। সোমবারই মায়ের সঙ্গে তার বাবার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। শনিবার দুপুর পৌনে ২টোর সময় বাবার সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছিল শুভেচ্ছার। মেয়েকে দ্রুত বিমানের টিকিট কেটে নেওয়ার কথা বলেছিলেন স্বপন। তার পরেই
ওই ঘটনা।
হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের কৃতী ছাত্র ছিলেন স্বপন। তবে কর্মক্ষেত্রে কিছু সমস্যা যে হচ্ছিল, তা টের পেয়েছিলেন স্ত্রী নন্দিতা। পরিবার সূত্রের খবর, স্বপন স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, ওখানে কাজ করতে ভাল লাগছে না। বাড়ি ফিরতে চান।
স্বপনবাবুর ভাই তপন দে এ দিন বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগে দাদা অফিসের উচ্চপদস্থ কর্তাদের বলেছিলেন, মোগলসরাইয়ের অফিস থেকে যেন কলকাতায় বদলি করে দেওয়া হয়।’’ কিন্তু কেন, তা খোলসা করেননি দাদা। এর পিছনে কোনও টাকা আদান-প্রদানের বিষয় থাকতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন।
প্রসঙ্গত ২০০৩ সালে মোগলসরাই থেকে গয়া ফেরার পথে রহস্যজনক ভাবে খুন হয়েছিলেন ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র কর্মী সত্যেন্দ্র দুবে। সূত্রের খবর, আইআইটি-র ওই প্রাক্তনী কোডারমা এলাকার প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণ ঘিরে সেখানে চলা দুর্নীতির প্রতিবাদ করে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। এর জেরেই মাফিয়াদের হাতে খুন হতে হয়েছিল তাঁকে।
স্বপনের খুন নিয়ে মোগলসরাই পুলিশ এখনও অন্ধকারে। কারা স্বপনকে অফিসে ঢুকে খুন করতে পারে, তার কোনও সূত্রও মেলেনি বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার শিবানন্দ মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এতটাই অস্পষ্ট যে কিছু বোঝা যাচ্ছে না!’’ তবে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ আদৌ কতটা কিনারা করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ে স্বপনের পরিবার। এমনকি, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আনতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy