Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

পথে পিষ্ট ছাত্রী, তাণ্ডব তারাতলায়

পুলিশ জানায়, মহেশতলার গনিপুর এলাকার বাসিন্দা সুহানি গুপ্ত প্রতিদিনের মতো এ দিনও তারাতলা মোড়ের কাছে আলিপুর টাঁকশাল বিদ্যাপীঠে সাইকেলে চালিয়ে গিয়েছিল।

দুর্ঘটনায় মৃত অষ্টম শ্রেণির সুহানি

দুর্ঘটনায় মৃত অষ্টম শ্রেণির সুহানি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর। শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভে ঘণ্টা দু’য়েক অবরুদ্ধ হয়ে রইল তারাতলা রোড। জনতার ক্ষোভ গিয়ে পড়ে কর্তব্যরত দুই ট্র্যাফিক সার্জেন্টের উপরে। ভাঙচুর চালানো হয় একটি সরকারি বাসেও।

পুলিশ জানায়, মহেশতলার গনিপুর এলাকার বাসিন্দা সুহানি গুপ্ত প্রতিদিনের মতো এ দিনও তারাতলা মোড়ের কাছে আলিপুর টাঁকশাল বিদ্যাপীঠে সাইকেলে চালিয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে সওয়া আটটা নাগাদ স্কুল থেকে বাড়ির পথে রওনা দেয় সে। সাইকেলের পিছনে সহপাঠী অঞ্জলি মাহাতোকে বসিয়ে এক নম্বর গেটের কাছে পৌঁছতেই ঘটে বিপত্তি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, একটি বড় ক্রেন সেই সময়ে সুহানিদের সাইকেলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ক্রেনটি হর্ন বাজানোয় চমকে যায় সুহানি, তখনই সাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে। অঞ্জলি রাস্তার বাঁ দিকে পড়ে যায়। বেসামাল সুহানি রাস্তার ডান দিকে পড়ে গেলে ১২ চাকার ক্রেনটির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে যায় সে। স্থানীয়েরা বুঝে ওঠার আগেই ক্রেন ফেলে পালিয়ে যায় চালক। খবর দেওয়া হয় তারাতলা থানায়। পরে পুলিশ দেহটি নিয়ে যায়। আহত অঞ্জলিকে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সুহানির সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্র দেখে তার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে থানায় যান সুহানির বাবা, পেশায় ব্যবসায়ী মহেন্দ্র গুপ্ত এবং দিদি সুস্মিতা গুপ্ত। ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, সুস্মিতা বলে, ‘‘এ দিন সকাল পৌনে ছ’টায় স্কুলের জন্য রওনা হয় সুহানি। আজ শেষ পরীক্ষা থাকায় খুব খুশি ছিল বোন।’’ স্কুলের মহিলা শাখার প্রধান শিক্ষিকা বন্দনা মিশ্র বলেন, ‘‘এ বছরই ভর্তি হয়েছিল সুহানি। এটা আমাদের কাছে বড় আঘাত।’’

ঘাতক: সুহানিকে পিষে দেয় এই ক্রেনটিই। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরে ক্ষোভের পারদ যখন ক্রমেই চড়তে থাকে, তখন তার মাঝে পড়ে যায় সল্টলেকগামী একটি সরকারি বাস। ক্ষুব্ধ জনতা ক্রেন এবং সরকারি বাসটিতে ভাঙচুর চালায়। নিগৃহীত হন কর্তব্যরত দুই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট আমিরুল হক এবং প্রসেনজিৎ সাধুখাঁ। আমিরুলের মুখে এবং প্রসেনজিতের কাঁধে আঘাত লাগে। দু’জনকেই স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দু’জনকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। সকাল সাড়ে ১০টার পরে ধীরে ধীরে গাড়ি চলাচল শুরু হলে স্বাভাবিক হয় তারাতলা রোড। পুলিশ জানিয়েছে, ক্রেনচালকের খোঁজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ব্যস্ত ওই রাস্তা দিয়ে অত বড় ক্রেন কী ভাবে গেল? তারাতলা পুলিশের দাবি, শনিবারে ওই রাস্তায় এ ধরনের গাড়ি যাতায়াতের ছাড়পত্র রয়েছে। ক্রেনের মালিক সংস্থার বক্তব্য, বেহালায় জলের পাইপ পাতার কাজ হচ্ছে। সে জন্যই ওই ক্রেনটি কলকাতা পুরসভাকে ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে।

মর্মান্তিক: রক্তে ভাসছে পথ। পড়ে রয়েছে সুহানির স্কুলব্যাগ। শনিবার, তারাতলা মোড়ে। ছবি: সুমন বল্লভ

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকায় গাড়ির সংখ্যা প্রচুর হওয়া সত্ত্বেও পুলিশি নজরদারি সে ভাবে থাকে না। ফলে মাঝেমধ্যেই ওই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ একাধিক স্কুল, ইনস্টিটিউট ছাড়াও এলাকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE