প্রতীকী ছবি।
একটি মাত্র বস্তিতে পেভার ব্লক বসানোর খরচ আড়াই কোটি টাকা! তা ধরে রাখতে কার্ব চ্যানেল-এর জন্য আরও এক কোটি। অর্থাৎ মোট খরচ সাড়ে ৩ কোটি।
কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়ায় একটি বস্তির পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা খরচের হিসেব দিয়েছে পুরসভার বস্তি দফতর। তাতে দেখা গিয়েছে, শুধু পেভার ব্লক ও কার্ব চ্যানেল বসানোর খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। গত ১২ এপ্রিল পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি তোলা হতেই বিস্ময় প্রকাশ করেন একাধিক মেয়র পারিষদ এবং আমলা। বস্তিতে এমনিই পরিষেবা ততটা উন্নত নয়। জল, আলো, নিকাশির মত প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিষেবা যেখানে বস্তিবাসীরা পান না, সেখানে পেভার ব্লক বসানোর জন্য মোট খরচের ৪৫ শতাংশ ব্যয় ধরা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এগুলি সৌন্দর্যায়নের কাজ করে বেশি। বস্তির বাসিন্দাদের ন্যূনতম চাহিদা মেটানোয় সেগুলি জরুরি নয় বলে মনে করছেন পুরকর্তারাই। বস্তি দফতরের দেওয়া খরচের ওই প্রকল্প রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মেয়রের সম্মতি নিয়েই এই হিসেব করা হয়েছে। এমনকী, মেয়র পরিষদের বৈঠকে জমা পড়া প্রস্তাবে স্বাক্ষরও রয়েছে মেয়রের। ওই প্রস্তাবে পুরো খরচের হিসেব দেওয়া হয়েছে।
কেন ওই প্রস্তাব মেয়র পরিষদের বৈঠকে জমা দেওয়া হয়েছিল?
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, নিয়ম অনুযায়ী মেয়র পরিষদের বৈঠকে পেশ করে পুরসভার যে কোনও বড় সিদ্ধান্তের অনুমোদন নিতে হয়। এই প্রকল্প রিপোর্টটি (ডিপিআর) রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানোর জন্য মেয়র পরিষদের অনুমোদন দরকার ছিল। তাই ওই বৈঠকে রিপোর্টটি পেশ করা হয়। বৈঠকে হাজির থাকা এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, বিষয়টি ওঠা মাত্রই পেভার ব্লকের খরচের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাধিক মেয়র পারিষদ। বস্তিতে পেভার ব্লক বসানোর জন্য অত টাকা খরচ করা যে যুক্তিযুক্ত নয়, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই তা জানানো হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন পেভার ব্লকের জন্য এত খরচ ধরা হল? এ বিষয়ে বস্তি দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কলকাতায় বস্তির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। আরও বস্তিতে একই ধরনের কাজ করা হবে। সেক্ষেত্রে শুধু পেভার ব্লক বসাতেই খরচের পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বস্তিতে মূলত পানীয় জল, নিকাশি, আলো এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বরাদ্দের সিংহভাগ তাতেই খরচ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নিকাশির চেয়ে পেভার ব্লক, কার্ব চ্যানেলের খরচ বেশি। ওই টাকায় আরও কয়েকটি বস্তির পরিকাঠামো গড়া যেত।’’ তিনি জানান, এক বর্গমিটার জায়গা কংক্রিট দিয়ে বাঁধাতে যা খরচ হয়, তার দ্বিগুণ খরচ হয় ওই জায়গায় পেভার ব্লক বসাতে। তাই কংক্রিটের বদলে পেভার ব্লক ব্যবহার করায় বস্তি দফতরের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে।
ওই মেয়র পরিষদের বৈঠকেই যোধপুর পার্কের বস্তি এলাকায় একটি কমিউনিটি হল নির্মাণে বেশি খরচের হিসেব নিয়ে বস্তি দফতরের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়েছিল। সেই নির্মাণের কাজ বস্তি দফতরের হাত থেকে নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র। এ বার একটি বস্তিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে ‘বিবেচনাহীন’ খরচের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেয়র পারিষদদের একাংশ। মেয়র অবশ্য এ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেননি। তবে মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দারের যুক্তি, ‘‘বস্তির আয়তন ও পরিকাঠামোর কথা ভেবেই রিপোর্ট বানানো হয়েছে। শহরের সব বস্তি তো এক নয়। সব জায়গাতেই পেভার ব্লক বসাতে হবে, এমনটাও নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy