Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভ্যানো চলছে কেন, জানে না প্রশাসনও

মোটরচালিত ভ্যানরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বেআইনি তো বটেই, রাজ্য সড়কে চলাই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সেই বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওই দুই যান।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

হ্যান্ডেল ধরে কাঁপতে কাঁপতে কোনও মতে বসে চালক। তাঁর পাশে ও পিছনে ঠাসাঠাসি করে বসে আছে ১০-১২ জন স্কুলছাত্রী। মোটরচালিত সেই ভ্যানরিকশা রাস্তা দিয়ে এমন ভাবে ছুটছে, দেখে মনে হবে কেউ বুঝি ধাওয়া করেছে চালককে। আর এই বেপরোয়া গতির ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় প্রায়ই ঘটছে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা। কখনও ভ্যানরিকশা সোজা গিয়ে ঢুকে যাচ্ছে ট্যাঙ্কারের নীচে। কখনও আবার উল্টো দিক থেকে আসা গাড়িতে মারছে ধাক্কা। মানুষ মারা যাচ্ছে, জখম হচ্ছে। কিন্তু ভ্যানরিকশার দাপট কমছে না। একই সমস্যা ব্যাটারিচালিত সাইকেল রিকশা নিয়েও। পা দিয়ে খুব জোরে প্যাডেল মারলে সর্বোচ্চ যে গতি উঠতে পারে, তারও প্রায় তিন-চার গুণ গতিতে ছুটছে ওই সব রিকশা। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে হামেশাই। তা সত্ত্বেও অবশ্য তাদের দৌড় থামছে না। পুলিশ-প্রশাসনও অবৈধ এই দুই যান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অদ্ভুত রকমের নির্বিকার।

মোটরচালিত ভ্যানরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বেআইনি তো বটেই, রাজ্য সড়কে চলাই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সেই বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওই দুই যান। ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে গিয়ে দেখা গেল, কাঁপতে কাঁপতে ১৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছে একের পর এক যন্ত্রচালিত ভ্যানরিকশা, যার চলতি নাম ‘ভ্যানো’। পলকা, নিয়ন্ত্রণহীন ওই যান উল্টে দুর্ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না।

গত রবিবারই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের আমডাঙায় যাত্রিবোঝাই এক মোটরচালিত ভ্যানরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়িতে মুখোমুখি ধাক্কা মারে। ভ্যানের যাত্রীরা রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর জখম হন। সেই ঘটনার জেরে ওই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পুলিশি নজরদারির অভাবকেই দায়ী করে বিক্ষোভ দেখায় জনতা।

বুধবার সকালে বারাসত-টাকি রোডে ফের একটি জলের ট্যাঙ্কারের পিছনে ধাক্কা মারে স্কুলছাত্রী-বোঝাই মোটরভ্যান। ওই ঘটনায় জখম ছাত্রী তিথি ঘোষের কথায়, ‘‘দশ জন ঠাসাঠাসি করে বসেছিলাম। তার পরেও যাত্রী তোলা হচ্ছিল। জোরে চলছিল গান।
টাল সামলাতে না পেরে ট্যাঙ্কারের পিছনে ধাক্কা মারে ভ্যান। আমার পা আটকে যায়।’’

যশোর রোডেও চলেছে এই লাগামহীন দৌরাত্ম্য। ওই এলাকার বিভিন্ন স্কুলের সামনে গেলেই
দেখা যাবে, পরপর দাঁড়িয়ে মোটরভ্যান। ছুটি হতেই পড়ুয়াদের বোঝাই করে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সেগুলি। চার দিকে বিপজ্জনক ভাবে পা ঝুলিয়ে বসে কচিকাঁচারা। বছর কয়েক আগে বামনগাছিতে এমনই এক ভ্যানরিকশা দুর্ঘটনায় পড়ায় মৃত্যু হয়েছিল চার শিক্ষিকার।

কেন বন্ধ হচ্ছে না মোটরচালিত ভ্যান এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা?

উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘মোটরচালিত ভ্যান এবং ব্যাটারি-রিকশা— দু’টিই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও সেগুলি চালানো হচ্ছে। আমরা ধরপাকড়ও করছি। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।’’ পরিবহণ-কর্তা অবশ্য মানুষকেও সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এ দিন যে স্কুলের ছাত্রীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, সেই কার্তিকপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা রোজিনা পরভিন বলেন, ‘‘অত্যন্ত বিপজ্জনক ওই মোটরভ্যানে চড়তে ছাত্রীদের নিষেধ করা হলেও তারা শোনে না। অনেক সময়ে তাড়াহুড়োয় অন্য যানবাহন মেলে না। তা ছাড়া, পয়সা কম লাগে বলেও অনেকে ওই সমস্ত ভ্যানে ওঠে।’’ দেগঙ্গার তৃণমূল বিধায়ক রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘মোটরভ্যান আর ব্যাটারি-রিকশা ছেড়ে গতিধারায় সহজ কিস্তিতে অটো বা ই-রিকশা নিতে বারংবার বলা হচ্ছে। যাঁরা শুনছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE