নির্বাচনী মিছিল উপলক্ষে কোভিড-বিধি ভুলে উপচে পড়া ভিড়। ফাইল চিত্র।
অতিমারি পরিস্থিতি চলছে এখনও। তারই মধ্যে হতে চলেছে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। বহু দিন ধরে বকেয়া থাকা এই ভোট নিয়ে নাগরিকদের উৎসাহও কম নয়। কিন্তু সেই উৎসাহ যাতে করোনার আগুনে ঘি না ঢালে, তা নিশ্চিত করতে বার বার করে সতর্ক করছে শহরের চিকিৎসক মহল।
মাসকয়েক আগে বিধানসভা ভোটের সময়েও চিকিৎসকেরা বারংবার সাবধান করেছিলেন। তা সত্ত্বেও কোভিড-বিধি উড়িয়ে নির্বাচনী জনসভা ও মিছিলে ভিড় জমানোয় কতটা বিপদ ঘটেছিল, তার প্রমাণ মিলেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ওই সময়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কয়েক জন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘সেই সময়ে বার বার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ ভোট-যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ততায় কোভিড-বিধি ভুলে গিয়েছিলেন। তাই পুর ভোটের সময়ে আরও এক বার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। না-হলে এ বারও কিন্তু বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’’
পুজোর পর থেকে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৭০০ থেকে ৮০০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এবং তার মধ্যে সব সময়েই আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে থাকছে কলকাতা। এ শহরে দৈনিক সংক্রমণ থাকছে ২০০-র ঘরে। অর্থাৎ, কলকাতায় সংক্রমণ নেই বা একেবারে কম, তেমনটা বলা যায় না বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাই পুর ভোটের প্রচার থেকে সভা, সবেতেই করোনা-বিধি মানার উপরে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘কলকাতায় প্রায় সমস্ত বাসিন্দারই প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এটা একটা ভাল দিক। কিন্তু তার পরেও বার বার সকলকে বলব, করোনা-বিধি মেনে চলুন। বিধানসভা ভোটের সময়ে যেমন মাস্ক পরতে এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল, এ বারও সেই একই বিধি পালন করতে হবে।’’ দীপ্তেন্দ্র-সহ অন্য চিকিৎসকেরাও জোর দিচ্ছেন ডিজিটাল মাধ্যমে পুর ভোটের প্রচারের উপরে। তাঁরা বলছেন, ‘‘ভাইরাস ছড়ানো রুখতে গেলে দূরত্ব-বিধি মানতেই হবে।’’
জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই ‘নিউ নর্মাল’-এর এই সময়ে কোভিড-বিধি মেনেই নির্বাচন-সহ বিভিন্ন আবশ্যিক কাজকর্ম চালাতে হবে। কোভিড যে হেতু এখনও যথেষ্ট সক্রিয়, তাই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থেকে সাধারণ মানুষ, সবাইকেই কোভিড-বিধি পালনে সদা সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, জনসভা বা মিছিলের ক্ষেত্রে সাবধান না হলে আবার বড় বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পাশাপাশি, ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ১৫ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, কলকাতায় পজ়িটিভিটির হার দুই শতাংশের উপরে। এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘নাগরিক পরিষেবার স্বার্থেই পুর ভোট হওয়া জরুরি। তবে নিজেকে ভাল রাখার পাশাপাশি অন্যকে সুস্থ রাখতে গেলে করোনা-বিধি মেনে চলতেই হবে।’’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রচারে প্রার্থীদের কাছাকাছি পৌঁছনোর জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। মালা পরানো বা হাত মেলানোর প্রতিযোগিতা চলে। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে বলেই জানাচ্ছে চিকিৎসক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy