তোড়জোড়: আজ, সোমবার থেকে চালু হচ্ছে মেট্রো রেল পরিষেবা। মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মাস্ক-ফেস শিল্ড পরে পাহারায় নিরাপত্তারক্ষীরা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ছ’মাস থেকে দিন দশেক কম। এই দীর্ঘ সময় ধরে মেট্রোর সঙ্গেই ঝাঁপ নামিয়ে রেখেছে সংলগ্ন দোকানগুলিও। কারণ, ওদের ক্রেতাদের বড় অংশই রেল এবং মেট্রোর যাত্রী। রবিবার সকালে সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা (নিট) পরীক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোর প্রস্তুতি পর্বে শামিল হতে তাই খুলে যায় দু-একটি চা ও ফলের দোকান। রবিবারটা যেন মেট্রোর সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীদেরও আড়মোড়া ভাঙার দিন ছিল। এ দিন প্রায় ফাঁকা মাঠে মহড়া হয়ে গেল মেট্রোর।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দমদম থেকে কবি সুভাষের মধ্যে ৭৪টি ট্রেন চালিয়ে যাত্রী মিলেছে হাজারের কাছাকাছি। রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৬৪৮। একাধিক স্টেশনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে দশটিরও কম টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। এ দিন সবচেয়ে বেশি যাত্রী (৩০০ জন) হয়েছে দমদম স্টেশনে। আজ, সোমবার থেকে সাধারণের জন্য সরকারি ভাবে ছুটবে মেট্রো। যদিও অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলবে এই পরিষেবা।
‘নিউ নর্মালে’ কেমন হবে মেট্রো স্টেশনের ছবি? তারই ঝলক দেখা গেল রবিবার। এ দিন মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটেই ছিল অতিরিক্ত পুলিশ পাহারা। পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পুলিশের পাশাপাশি ছিলেন সিআরপিএফ কর্মীরাও। অ্যাডমিট কার্ড দেখালে মিলছিল স্টেশন চত্বরে ঢোকার অনুমতি। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবেই এ দিন নতুন স্মার্ট কার্ড বিক্রি ও পুরনো কার্ড রিচার্জের কাজ বন্ধ রাখা হয়। বহু যাত্রী নতুন স্মার্ট কার্ড কিনতে অথবা রিচার্জ করতে গিয়ে তাই ফিরে গিয়েছেন।
রবিবার চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কালীঘাট স্টেশন জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে।
স্টেশনে ঢোকার পরেই থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে তবেই যেতে দেওয়া হচ্ছিল টিকিট কাউন্টারের সামনে। যাত্রী কম থাকলেও ভিড় কমাতে একাধিক টিকিট কাউন্টার এ দিন খোলা হয়েছিল। মেট্রোর স্তম্ভে রাখা ছিল স্যানিটাইজ়ার। সেখানে হাত পরিষ্কার করে তবেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার অনুমতি মিলেছিল যাত্রীদের।
স্টেশনে কর্মী ও আধিকারিকদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ডের পাশাপাশি স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয়। প্রতি ঘণ্টায় কর্মীদের দেখা গিয়েছে যন্ত্রের সাহায্যে স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্ম স্যানিটাইজ় করতে। এসক্যালেটরের হাতল, লিফটের বোতাম-সহ যে সব জায়গায় যাত্রীদের হাত পড়ে, সে সবও ঘন ঘন স্যানিটাইজ় করছিলেন সাফাইকর্মীরা।
তবে দমদম, টালিগঞ্জ, কবি সুভাষ-সহ হাতে গোনা কয়েকটি স্টেশনেই এ দিন পরীক্ষার্থীদের দেখতে পাওয়া গিয়েছে। অন্য স্টেশনগুলি কার্যত ফাঁকাই ছিল। দমদম এলাকার একটি কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য কয়েক জন পরীক্ষার্থী মেট্রো চালুর নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনেরো আগেই টালিগঞ্জ স্টেশনে চলে এসেছিলেন। একই ছবি দেখা গিয়েছিল দমদম মেট্রো স্টেশনের সামনেও।
আরও পড়ুন: উমর খালিদ গ্রেফতার, দিল্লি হিংসা মামলায়, দেওয়া হল ইউএপিএ
দমদম মেট্রো স্টেশনে সকাল দশটায় টিকিট কাউন্টার খুলতেই কবি সুভাষের টিকিট কাটছিলেন এক নিট পরীক্ষার্থী কৌশিক বিশ্বাস। ইছাপুরের বাসিন্দা কৌশিকের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে সোনারপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাগ্যিস আজ মেট্রো চলল। না হলে প্রচুর টাকা বেরিয়ে যেত গাড়ি ভাড়া করতেই। সময়ও লাগত অনেক। ইছাপুর থেকে বাসে করে দমদম এসে মেট্রো ধরছি। সোনারপুর যাওয়ার জন্য অনেকটা পথ মেট্রোয় এগিয়ে যাব।’’ মেট্রো চলায় তাঁদের যে সময় এবং অর্থ দু’দিকেই অনেকটা সাশ্রয় হয়েছে, মানছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
মেট্রো পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা হতেই ব্যবসা শুরুর অপেক্ষা করছেন সংলগ্ন হকারেরা। দমদমের এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘‘সোমবার থেকে যখন পুরো মেট্রো চলবে, তখন নিশ্চয়ই আমাদেরও বিক্রি শুরু হবে। এত দিন ধরে দোকান বন্ধ। ধারদেনায় ডুবে আছি। বাঁচতে হবে তো!”
আরও পড়ুন: আগামী বছরের গোড়াতেই আসতে পারে করোনার টিকা, আশা হর্ষ বর্ধনের
নিশ্চয় ভাবছেন কবে ফিরবে জমজমাট মেট্রো চত্বরের ছবি? পাশ থেকে এক জন বলে উঠলেন, “বেশি জমজমাট হোক চাই না। তাতে সংক্রমণ বাড়লে ফের মেট্রো বন্ধ হয়ে যাবে। ধীরে-সুস্থেই স্বাভাবিক হোক সব।’’
রবিবার যেমনই কাটুক, আজই যে মেট্রোর চূড়ান্ত পরীক্ষা পর্ব বিলক্ষণ জানেন কর্মী ও আধিকারিকেরা। দিনের শেষেই জানা যাবে সেই ফলাফল কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy