যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
ওয়টসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশটে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে তাঁদের দাপটের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রেই দাবি। ২০২৩ সালের অগস্টে র্যাগিংয়ের জেরে মেন হস্টেলে নবাগত ছাত্র মৃত্যুর সময়েই ওই সব বার্তা যাদবপুর কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠমহলেও ছড়ায়। ২০২৪-এর গোটা বছর পার হলেও মেন হস্টেলের ওই ‘প্রভাবশালী’ ছাত্রদের কার্যত কেশাগ্র ছোঁয়া গেল না। মফসসল থেকে যাদবপুরে পড়তে আসা নিহত ছাত্রের বাবা নতুন বছরের সূচনাতেও সেই আক্ষেপ বহন করছেন।
যাদবপুরের সেই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় আলিপুরে পকসো আদালতে ১৩ জন ছাত্রের (প্রাক্তন ও বর্তমান) বিচার চলছে। আর গত জুলাই, অগস্টে যাদবপুরের প্রাক্তন, বর্তমান মিলিয়ে ৩২ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে কারণ দর্শানোর (শো-কজ়) চিঠি দেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। তাতে বেশ কয়েক জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গত সপ্তাহে ফেটসুর প্রাক্তন নেতা, বর্তমানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচ ডি রত অরিত্র মজুমদারকে শো-কজ় করে শাস্তির প্রক্রিয়াতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। অরিত্রের তরফে আইনজীবী নীলোৎপল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাদবপুর কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করলে অরিত্রের পিএইচ ডি প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হত। হাই কোর্টের নির্দেশে সেই বাধা কেটেছে।” ছাত্র মৃত্যু ও র্যাগিংয়ের চক্রান্তে শরিক বলে চিহ্নিত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের আর এক ছাত্রও সম্প্রতি ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চাকরি পান বলে যাদবপুর সূত্রের খবর। ওই ছাত্রকেও শো-কজ় করে সাসপেন্ড এবং হস্টেল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। হাই কোর্ট তাতে আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় ছাত্রটি ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে সুযোগ পাওয়ায় র্যাগিংয়ের বিরোধী যাদবপুরের ছাত্রদের একাংশও কর্তৃপক্ষের উপরে ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে যাদবপুরের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত কারও চাকরির জন্য ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
মেন হস্টেলের গ্রুপে ২০২৩-এর ৯, ১০ অগস্টের সময়কার চ্যাটের স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, নবাগত ছাত্রটি নানা অপশব্দ ব্যবহার করে কখনও নবাগতদের ‘শিক্ষা’ দিতে হস্টেলে জিবি (সাধারণ সভা) ডাকার হুকুম দিচ্ছেন। মেন হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে নবাগত ছাত্রটির মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও তাঁকে মেন হস্টেলে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ রুখতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। এত বড় অভিযোগ ওঠার পরেও সেই ছাত্রটির বিনা বাধায় চাকরি পাওয়ার কথা জেনে যাদবপুরের ছাত্রমহলেও ‘র্যাগার প্লেসড’ বলে হতাশার বার্তা ছড়িয়েছে। যাদবপুরের শিক্ষক সমিতি তথা জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের মত, “ছাত্র মৃত্যুতে সরাসরি জড়িত ছাত্রেরা ছাড়াও মেন হস্টেলের র্যাগিং-রীতি এবং বৃহত্তর চক্রান্তের শরিক আরও বেশ কয়েক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এটা করা না-গেলে সার্বিক ভাবেই যাদবপুরের ভাবমূর্তির বিষয়ে নেতিবাচক বার্তা যাবে।”
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-এর সেই র্যাগিংয়ে ছাত্র মৃত্যুর পরেও সেই ঘটনার মদতদাতারা অনেকে বহাল তবিয়তে হস্টেলে, শিক্ষাঙ্গনে ঘুরছেন। এমনকি গত জুলাইয়েই মেন হস্টেলে ফের সালিশি-সভা বসিয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের এক ছাত্রকে হেনস্থা এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হস্টেলে ঢুকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারকে বাধা দানের ঘটনাও ঘটে। অন্য দিকে, ছাত্র মৃত্যুতে সরাসরি অভিযুক্তদের কয়েক জনও হাই কোর্টে জামিনের মামলা করেছেন। আলিপুর কোর্টে মেন হস্টেলের সুপারের সাক্ষ্য চলছে। নিহত ছাত্রের বাবা বলেন, “আমরা অবশ্য়ই পুলিশ, বিচারব্যবস্থায় আস্থা রাখছি। তবে যাদবপুরের অভ্যন্তরেও কিছু ঘটনা না-ঘটলে আশ্বস্ত হতাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy