কালীপুজোর রাত। বাইপাসে সার দিয়ে দাঁড়ানো গাড়ি। সব গাড়ির হেড লাইট জ্বলছে। তাতেও সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশ যেন নেমে এসেছে নীচে।
গাড়িতে বসে থেকে থেকে হাঁফ ধরে যাওয়ায় এক বার গাড়ির কাচ নামিয়ে শ্বাস নিতে গিয়েই যত বিপত্তি। বাইরে থেকে যে ঘোলা বাতাসটা ভেতরে ঢুকে এল, তাতে জ্বলতে শুরু করল চোখ। শুরু হয়ে গেল কাশি।
রাস্তা আগলে যে ঘন বাতাসের প্রাচীর দাঁড়িয়েছিল, সেটা কুয়াশা নয়। ধোঁয়াশা। পরিবেশবিদেরা বলছেন, বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ যদি বেশি থাকে, তবে সামান্য কুয়াশার আস্তরণের সঙ্গে তা মিশে মাটির কাছাকাছি চলে আসে। আর কালীপুজোর রাতে দেদার বাজি ফাটায় বাতাসে বেড়ে গিয়েছিল কার্বন কণা। সঙ্গে আরও অনেক কিছু।
বাতাস যাতে ভারী না হয়, বাতাসে যাতে কার্বন কণার পরিমাণ না বাড়ে, তার জন্য কয়লার উনুন জ্বালানো নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, ধোঁয়াশা ঠেকানো যাচ্ছে না। পুরনো যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় মিশে থাকছে আরও বেশি কার্বন কণা। সঙ্গে সালফার ডাই-অক্সাইড। পরিবেশবিদেরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, দিনের বেলা শহরের বায়ু দূষণ বাড়ার জন্য দায়ী সরকারি বাস, পুরনো সরকারি গাড়ি, পুলিশ ভ্যান, মিনিবাস ইত্যাদি।
সমস্যাটা আরও বাড়ে রাতে। বড় বড় পণ্যবাহী যে সব ট্রাক রাতে চলে, সেগুলি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই। দিনের বেলা তাও কোথাও কোথাও ধোঁয়া পরীক্ষা হয়, দূষণ পরীক্ষার কাগজ দেখতে চাওয়া হয়। রাতের শহরে সে সব পাটই নেই। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে দীর্ঘ দিন কাজ করা এক পরিবেশবিদ জানাচ্ছেন, রাতের শহরে যে সব পণ্যবাহী লরি ঢোকে, সেগুলির যথাযথ ধোঁয়া পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, সেগুলির মধ্যে বেশির ভাগই রাস্তায় চলার ছাড়পত্র পেত না।
গত শীতে দূষণের জেরে ধোঁয়াশার দাপট দেখেছে দিল্লি। সেই সমস্যা কাটাতে তৎপরও হয়েছে তারা। পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, দূষণের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকা কলকাতার হুঁশ ফিরবে কবে?
কলকাতার দূষণের প্রভাব উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তালিকাতেও। সেখানে দিল্লির পরেই দূষিত মহানগরীর তালিকায় ছিল কলকাতার নাম। পরিবেশবিদেরা বলছেন, দূষণে কম যায় না কলকাতার সহোদর হাওড়াও। তার দূষণমাত্রাও কিন্তু দেশের নিরিখে প্রথম সারিতে। এই দূষণের জেরে শহরের নাগরিকদের শ্বাসরোগ, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি বা়ড়তে পারে বলেও আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
মহানগরের বায়ুদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় গত সেপ্টেম্বর মাসে আদালত ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা চেয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ শুনানিতে সেই হলফনামা নিয়েও আদালতের তিরস্কৃত হয়েছে রাজ্য। তার পরেও অবশ্য রাজ্যের তরফে শহরের বাতাসকে নির্মল করতে উদ্যোগী হতে দেখেনি কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy