n শিয়রে: শহরের বহু বস্তি এলাকার মতো এমন তারের জট মাথায় নিয়েই থাকেন ভবানীপুর পেয়ারাবাগানের বাসিন্দারা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কয়েক পশলা বৃষ্টি হলেই আগুন ধরে দফায় দফায়। বস্তির ঘিঞ্জি গলি-পথ পেরিয়ে ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতেই কালঘাম ছোটে দমকলের। তখন দমকলকর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই তারের জট কাটবে কবে?’’ বিদ্যুতের ঠাসাঠাসি মিটার বসানো বস্তির মিটার ঘর থেকে বেরিয়ে আসা তারের জট দেখিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘বৃষ্টির জল এই তার বেয়েই মিটার ঘরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। সতর্ক না হলে কিন্তু বিপদ ঘটতে পারে।’’
দিন কয়েকের মধ্যেই বস্তির এমন পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। তাতে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র সাহায্য নেওয়া হবে। যা নিয়ে আশাবাদী অনেকেরই প্রশ্ন, এ বার কি তবে বস্তির বিপদ কাটবে? অনেকে আবার এ-ও বলছেন, ‘‘আগেও বহু কমিটি গঠন হয়েছে, সমীক্ষাও হয়েছে। পুরসভার কড়া নির্দেশও এসেছে। তার পরেও বস্তির তারের জট সরেছে কই?’’
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে নথিভুক্ত ও হিসাবের বাইরে থাকা বস্তির সংখ্যা ৫৭৭৪। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, ওই সব বস্তিতে ২০ লক্ষের মতো মানুষ বাস করেন। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০ লক্ষ বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। অর্থাৎ, শহরবাসীর এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ থাকেন বস্তিতে। বস্তির ঘরে ভাড়াটে বা মালিকই বিদ্যুতের মিটার আনেন। অভিযোগ, নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছাড়াই এলাকার একটি ঘরে একসঙ্গে অনেকগুলি মিটার বসানো থাকে। সেখান থেকেই বিদ্যুতের তার পৌঁছে যায় বস্তির ঘরে ঘরে! অভিযোগ, এক বার লাগিয়ে ফেলার পরে তার কোথায়, কী ভাবে রয়েছে, ঘুরেও দেখেন না মিটারের মালিক।
অভিযোগ রয়েছে আরও। গত কয়েক বছরে বস্তির বাসিন্দার সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে বেড়েছে সেখানে টেলিভিশন। ফলে বেড়েছে টিভির কেব্ল সংযোগের জন্য তারের কুণ্ডলী।
শহরের একাধিক বস্তি ঘুরে দেখা গিয়েছে, কোথাও এক ঠিকানায় টিভি রয়েছে তিন-চারটি, কোথাও আরও বেশি। প্রতিটি টিভির আলাদা আলাদা কেব্ল সংযোগ। সেই তারের সঙ্গেই জড়াজড়ি করে থাকে ইন্টারনেট বা অন্য পরিষেবার তার। বহু জায়গায় পুরনো তারের উপরেই নতুন করে কেব্ল বা ইন্টারনেট সংযোগের তার ঝোলানো হয় বলেও অভিযোগ। এমনও দেখা গিয়েছে, নতুন তারের ওজনের ভারে পুরনো তারের কুণ্ডলী নেমে এসেছে প্রায় মাটি পর্যন্ত। দমকলকর্মীদের মতে, আগুন লাগলে ওই তারের মাধ্যমেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঝড়বৃষ্টির পরে সব কিছু এমনই জট পাকিয়ে যায় যে, আলাদা করে কোনটি কিসের তার, তা বোঝার উপায় থাকে না।
পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পরিত্যক্ত তারের কুণ্ডলী পুরসভার ভ্যাটে ফেলতে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল পুরসভা। তা ছাড়া রাস্তা দিয়ে যাওয়া টিভির তার কমপক্ষে ২০ ফুট উঁচুতে থাকার কথাও বলা হয়। যদিও পুরনো তারের উপরে আরও তারের বোঝা চাপতে থাকায় তা ক্রমেই নামছে। এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘শহরে পুরসভার তিন লক্ষের বেশি খুঁটি রয়েছে। কেএমডিএ এবং সিইএসসি-র খুঁটিও আছে। তবে তাদের ধারণ ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি কেব্ল টিভি, ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের তার চাপানো হয়েছে। ফলে ঝোড়ো হাওয়ায় বহনক্ষমতা হারিয়েছে খুঁটিগুলি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেব্ল অপারেটরেরা খুঁটিতে তারের বোঝা চাপালেও পুরসভাকে ভাড়া দেন না। বছরের পর বছর দাদাগিরির এই অলিখিত নিয়ম চলছে।’’
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার যদিও বললেন, ‘‘এই সব সমস্যা থেকে বস্তিকে বাঁচাতেই এ বার সমীক্ষা করা হচ্ছে। দ্রুত সমাধান হবে। তবে এর আগেও শহরকে তারের জটমুক্ত করতে পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে শহরের কেব্ল অপারেটর এবং মাল্টি-সিস্টেম অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু অপারেটরদের একাংশের অভিযোগ, পাঁচ বছরে বেশির ভাগ বিষয়ই আলোচনার পর্যায়ে রয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, দু’-এক জায়গায় শুরু হলেও সেই সময়ের ঘোষণা মতো অপটিক্যাল ফাইবার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ বেশির ভাগ জায়গায় শুরুই হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy