ফাইল চিত্র।
এ শহরে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ইটের নিকাশি নালাগুলির অবস্থা বেশ সঙ্গিন। এক সময়ে মানুষ ঢোকার মতো করেই সেগুলি বানানো হয়েছিল। প্রাচীনত্বের ভারে যে কোনও মুহূর্তে মাটির নীচে থাকা ইটের ওই নালা-পথ ভেঙে নিকাশি অবরুদ্ধ হতে পারে। এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এমনটা জানার পরেই ইটের বড় নিকাশি নালাগুলির খোলনলচে বদলে সংস্কারে হাত দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভার নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ ইতিমধ্যেই শহরের তিনটি বড় রাস্তার নিকাশি পথের সংস্কারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ব্রিটিশ আমলে এমন নিকাশি পথ তৈরি হয়েছিল। সেগুলি প্রায় দুশো বছরের পুরনো। সবগুলি ইটের তৈরি। তখন বাড়ির নোংরা জল, বর্ষার জল একই পথে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ কার হয়েছিল। নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৃষ্টির সময়ে ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার জলধারণ ক্ষমতা রাখে এই সব নিকাশি নালা। লোকসংখ্যা বাড়তে থাকায় বাড়ির নোংরা জলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বছরের পর বছর পলি জমে নিকাশি পথ অনেকটা অবরুদ্ধও হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে ওই সব নিকাশির সংস্কার না করলে ভারী বৃষ্টিতে শহরবাসীকে ভুগতেই হবে।’’
এখন অল্প বৃষ্টিতেই শহরের যত্রতত্র জল জমছে। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নিকাশি নালার রক্ষণাবেক্ষণ আদৌ যথাযথ হচ্ছে কি? না হলে বৃষ্টির সময়ে ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার জলধারণ ক্ষমতাও থাকবে না? প্রাচীন ওই নিকাশি নালাগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার।
পরবর্তী কালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠায় ছোটখাটো আরও নিকাশি নালা তৈরি হয়। বর্তমানে শহরে প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নিকাশি নালা আছে। সে সব যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করলে ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও তা বেরোতে পারবে না, জানাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।
১৮৭৬ সালে উত্তরের বাগবাজার থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল পর্যন্ত প্রথম নিকাশি নালা এবং পামারবাজার পাম্পিং স্টেশন চালু হয়। মৌলালি থেকে পামারবাজার পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২.২ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনশো বর্গফুট আয়তনের ইটের তৈরি নিকাশি-পথটি। যেটি শুধুমাত্র কলকাতার নয়, এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। ইটের তৈরি ওই নিকাশি-পথে আধুনিকমানের পাইপ বসিয়ে সংস্কার করবে পুরসভার নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ। প্রকল্পের খরচ ধার্য হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এ পি সি রোড, এ জে সি বসু রোড এবং লেনিন সরণি থেকে তিনটি নিকাশির লাইন মৌলালিতে পড়ছে। ওই তিনটি নিকাশি পথের জল মৌলালি থেকে পামারবাজার পর্যন্ত মানুষ ঢোকার বড় নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তা সোজা পামারবাজার পাম্পিং স্টেশনে পড়ে। তাই মৌলালি থেকে ২.২ কিলোমিটার নিকাশি পথ সংস্কার করা জরুরি। না হলে তিনটি নালার জল দ্রুত বেরোতে বাধা পাচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এ ছাড়াও শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে পামারবাজার পর্যন্ত (রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট) পাঁচ কিলোমিটার এবং বেলতলা মোটর ভেহিকল্স এলাকার মুনেল স্ট্রিট থেকে রাইফেল রেঞ্জ রোড পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ইটের বড় নিকাশির সংস্কারও শুরু হবে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সব নিকাশি নালার সংস্কার শেষ হলে শ্যামবাজার, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট, কালীঘাট, বালিগঞ্জ এলাকার জল জমার সমস্যা কমবে। দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘মানুষ ঢোকার জন্য ইটের তৈরি বড় নিকাশি নালাগুলির সম্পূর্ণ সংস্কার না করলে বর্ষায় জমা জলের বিপদ এড়ানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy