পরিত্যক্ত: দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে ট্যাংরার চম্পামণি মেটারনিটি হোম। ছবি: সুমন বল্লভ
রোগ সারাবে কে? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
প্রায় কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। অভাব রয়েছে নার্স ও কর্মীর। সেই সঙ্গে ওষুধেরও। আবার প্রসূতিদের জন্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে পরিষেবা মেলে না। কোনওটি আবার বন্ধ হয়ে গিয়ে ‘ভূতুড়ে’ বাড়ির চেহারা নিয়েছে। বর্তমানে এমনই বেহাল দশায় রয়েছে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও মাতৃসদনগুলি। নাগরিকদের তাই প্রশ্ন, “পরিষেবাই যদি ঠিক ভাবে না মেলে, তা হলে সেগুলি চালানোর অর্থ কী?”
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ড ধরলে পুর স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে মোট ১৪৪টি ‘ইউপিএইচসি’ বা ‘আর্বান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার’ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীদের থাকার কথা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথাই বলছে। চিকিৎসকের অভাবে গত দেড় বছরের করোনাকালে নাজেহাল হতে হয়েছে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাঁদের কথায়, “জ্বর, সর্দি-কাশির লক্ষণ নিয়ে পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।” যেমন, গার্ডেনরিচের ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। কোনও কারণে তিনি না এলে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা জোটে না রোগীদের। বেহালা এবং জোকার একাধিক পুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও একই হাল। করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য অবশ্য কয়েকটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নার্সদের পাঠিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
চিকিৎসকের অভাবের কথা মানছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী সদস্য অতীন ঘোষ। তাঁর কথায়, “চিকিৎসক-সঙ্কট গোটা রাজ্যেরই সমস্যা। বাম আমলে নতুন কোনও মেডিক্যাল কলেজ তৈরি না হওয়ায় আসনের সংখ্যা বাড়েনি। চিকিৎসক নিয়োগের জন্য প্রায় প্রতি মাসেই ইন্টারভিউ নিচ্ছি। চেষ্টা করা হচ্ছে ঘাটতি মেটানোর।”
পুরসভা সূত্রের খবর, চিকিৎসক মিললেও তাঁরা কয়েক মাস চাকরি করেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
ফলে বার বারই চিকিৎসকের অভাব তৈরি হচ্ছে। একই ভাবে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না পুরসভার বক্ষরোগের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির জন্যও। নিয়ম অনুযায়ী, ওই সমস্ত ক্লিনিকে বক্ষরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের থাকার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্লিনিকেই সাধারণ এমবিবিএস-দের দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরি করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনীহা প্রসঙ্গে পুরসভারই এক আধিকারিক বললেন, ‘‘রাজ্য সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তা মেলে না। ফলে কয়েক মাস চাকরি করার পরে অনেকেই ছেড়ে চলে যান।’’
পুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের একাংশের অভিযোগের তালিকায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভুয়ো প্রতিষেধক-কাণ্ড। সকলের চোখের সামনেই ওই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার নজরদারি নিয়েও। যদিও পুরকর্তাদের দাবি, “নাম ভাঁড়িয়ে কেউ কিছু করলে তার দায় পুরসভার নয়।”
পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতোই বেহাল দশা মাতৃসদনগুলির। ৫৭ বছরের পুরনো, পূর্ব কলকাতার চম্পামণি মেটারনিটি হোম তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে প্রায় চার বিঘা জমি জুড়ে থাকা তিনতলা মাতৃসদনটি এখন পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত। গার্ডেনরিচ ও উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়া মাতৃসদনে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও শেষ দু’বছরে সেখানে কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও সেগুলি চালানোর কর্মী নেই। ঘাটতি রয়েছে চিকিৎসক, নার্সেরও। তাই প্রসূতিরা এলেই তাঁদের ‘রেফার’ করা হয় সরকারি হাসপাতালে। অতীনবাবু বলেন, “হাসপাতাল চালানো পুরসভার কাজ নয়। মেটারনিটি হোমগুলি দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে বলে আমরা সেগুলির দেখাশোনা করি। চম্পামণি মেটারনিটি হোমটি ইউপিএইচসি-তে রূপান্তরিত করা হবে।”
পুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দায়িত্ব পুরোপুরি কলকাতা পুরসভার নিজস্ব, এমনটাই জানাচ্ছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তবে ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (সুডা) বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দেয়। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “কলকাতা পুরসভা চিরকালই নিজস্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিজেরা পরিচালনা করে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ থেকে পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়েও পুর কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেন। তবে অতিরিক্ত কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা স্বাস্থ্য দফতর দিয়ে থাকে।”
ওই কর্তা আরও জানান, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়, যেমন করোনা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ও আন্ত্রিকের মতো পরিস্থিতিতে পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা করে স্বাস্থ্য দফতর। যেমন, করোনার প্রতিষেধক প্রদানে নার্সদের পাঠিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। অন্য সময়ে ওষুধও দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy