আরও একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে শহরে বাড়ির নকশা অনুমোদনেও অনিয়মের নানা অভিযোগ বারবার উঠেছে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে। আঙুল উঠেছে বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল, দুই বোর্ডের আমলেই। গত পাঁচ বছর ত্রিফলা থেকে লেক মল কেলেঙ্কারি বিদ্ধ করেছে শাসক তৃণমূল বোর্ডকে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগও। ফের নতুন করে বোর্ডে এসে পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দিতেই এ বার কিছুটা ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা নিতে চায় তৃণমূল বোর্ড। তারই প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার মেয়র পারিষদের বৈঠকের এক সিদ্ধান্তে। ঠিক হয়েছে, অনলাইনে বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হবে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরভোটে প্রতিশ্রুতি ছিল নির্মাণকাজের আবেদন অনলাইনে করার ব্যবস্থা হবে। সেই মতোই এই সিদ্ধান্ত। মূলত, এক শ্রেণির দালালচক্র রুখতেই ওই ব্যবস্থা বলে জানান মেয়র।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য অনলাইন পদ্ধতিতে বাড়ির নকশা অনুমোদন করার বিষয়টি ভাল বলেই মনে করছেন। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের আমলেই ওই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল। অন্য রাজ্যের যেখানে ওই ব্যবস্থা রয়েছে, তা-ও দেখা হয়েছিল।’’ তিনি জানান, বামফ্রন্ট হেরে যাওয়ায় আর সেই কাজ শেষ করা যায়নি। সেটাই করতে তৃণমূল বোর্ডের পাঁচ বছর লেগে গেল।
এই পদ্ধতির সুফল জানাতে গিয়ে বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আবেদনের পরে অনুমোদন দিতে কত সময় লাগছে, তা-ও জানা যাবে। পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের গাফিলতি থাকলে তা-ও ধরা পড়বে।’’ তিনি অবশ্য এ-ও বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে বেআইনি নির্মাণ রোখা যাবে না। তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নজরদারি বাড়ানো দরকার।’’
বিল্ডিং দফতর সূত্রে খবর, সরকারি বি়জ্ঞপ্তি জারির পরে ৭ নম্বর বরোয় প্রথম এই কাজ হবে। ২৫ মে থেকে সেখানে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এর মধ্যে বিজ্ঞপ্তি বেরোতে হবে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, অনলাইনের পাশাপাশি বর্তমান পদ্ধতিও বজায় থাকবে। অনলাইন পদ্ধতি ভাল ভাবে রপ্ত হয়ে যাওয়ার পরে পুরনো নিয়ম বদলাবে।
প্রচলিত নিয়মে বাড়ি-বহুতল থেকে শুরু করে ছোটখাটো নির্মাণ, সব কাজের জন্যই সংশ্লিষ্ট বরোয় আবেদন করতে হয়। তা জমা দেওয়া নিয়ে অযথা হয়রান হতে হচ্ছে শহরবাসীকে। শুধুমাত্র ফর্ম জমা দিতেই নাজেহাল অবস্থা হয়েছে অনেকের। আর সেই সুযোগে ঢুকে পড়েন এক শ্রেণির দালাল। আবেদন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বিল্ডিং প্লানের অনুমোদন বার করে দেওয়া, সবটাই তাঁরা করে দেবেন বলে টোপও দেন আবেদনকারীকে।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, দালালচক্র এতটাই সক্রিয় যে, কেউ নিজে হাতে আবেদন জমা দিলে তা আটকানোর ব্যবস্থাও আছে। আর এর জন্য তাঁরা মদত পায় বিল্ডিং দফতরের কিছু ‘অসৎ’ কর্মীর। প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ে পুরসভায়।
মেয়র বলেন, ‘‘মানুষের হয়রানির কথা ভেবেই অনলাইনে আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ পুর-প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতেই এই উদ্যোগ বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, ৭ নম্বর বরো দিয়ে শুরু হলেও পরে শহরের সবক’টি বরোতেই ওই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
বিল্ডিং দফতরের আধিকারিক জানান, অনলাইনে আবেদনের পরে ওই আবেদনপত্র পরীক্ষা করা হবে। এর জন্য কী কী প্রমাণপত্র লাগবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে অনলাইনে। কিন্তু সে সব দিতে হবে বরো অফিসে গিয়ে। তবে আবেদনের অগ্রগতি সময় জানিয়ে দেওয়া হবে অনলাইনে। যেমনটা হয় পাসপোর্ট অফিসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy