Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
kolkata municipal corporation

ফিতে দিয়ে মাপা হল ফুটপাত, নিয়ম মানবেন হকারেরা?

নতুন করে শুরু হওয়া হকার-সমীক্ষার প্রথম দিনে এমনই ছবি দেখা গেল গড়িয়াহাটে। সেখানে পুরসভা এবং পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বুধবার দুপুর ১টা থেকে এই সমীক্ষা শুরু হয়।

তৎপর: পুরসভা এবং পুলিশের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া হকার সমীক্ষায় চলছে মাপজোকের কাজ। বুধবার, গড়িয়াহাটের ফুটপাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তৎপর: পুরসভা এবং পুলিশের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া হকার সমীক্ষায় চলছে মাপজোকের কাজ। বুধবার, গড়িয়াহাটের ফুটপাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৮
Share: Save:

ফিতে ফেলে মাপা হল গড়িয়াহাটের ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা। চক দিয়ে দাগ টেনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল সেই জায়গার সীমানা। হকারদের সাফ বলা হল, ওইটুকু জায়গার মধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসতে না পারলে উঠে যেতে হবে! যে হকারেরা ফুটপাতের ওই এক-তৃতীয়াংশ জায়গার মধ্যেই রয়েছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বরও লিখে নিয়েছে পুরসভা। আর যে সমস্ত হকারদের নাম চাওয়া হল না, তাঁদের অনেকেই তদ্বির করে চললেন দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু দিনের শেষে তেমন লাভ হল না।

নতুন করে শুরু হওয়া হকার-সমীক্ষার প্রথম দিনে এমনই ছবি দেখা গেল গড়িয়াহাটে। সেখানে পুরসভা এবং পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বুধবার দুপুর ১টা থেকে এই সমীক্ষা শুরু হয়। ফিতে হাতে দেখা যায় পুরকর্মীদের। মাইক হাতে ছিলেন গড়িয়াহাট থানার পুলিশকর্মীরা। তাঁদের মাইকে ঘোষণা করতে শোনা‌ যায় যে, নতুন করে হকার-সমীক্ষা শুরু হতে চলেছে। আগে যাঁরা হকার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন, তাঁরা তো থাকছেনই, সেই সঙ্গে নতুন করে তালিকায় নাম তোলানো যাবে।

তবে এর সঙ্গে আরও ঘোষণা করা হয় যে, গড়িয়াহাটের ফুটপাতে পসরা নিয়ে বসতে হলে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে হকারদের। যেমন, কোনও ভাবেই ফুটপাতের দখল নেওয়া যাবে না। ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা অবশ্যই পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখতে হবে। প্লাস্টিক বা অন্য কোনও কাঠামো নয়, হকারদের মাথা ঢাকতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। ফুটপাতের কোনও দোকানের মুখ রাস্তার দিকে থাকবে না। ‘ব্ল্যাক টপ’ কোনও ভাবেই আটকানো যাবে না। অর্থাৎ, ফুটপাতে বসে রাস্তার অংশ দখল করে রাখা চলবে না।

পুরসভা সূত্রের খবর, পরবর্তী কালে কার্যকর করা হবে আরও বেশ কয়েকটি নিয়ম। গড়িয়াহাটের পরে হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেটেও এই সমীক্ষা করা হবে। সমীক্ষা শেষ করার সময়সীমা ধার্য হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর। হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথাও চিন্তা করা হবে বলে জানানো হয়েছে পুরসভার তরফে।

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর আগেই টালা সেতুর উদ্বোধনে গিয়ে হকারদের ব্যাজ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ধীরে ধীরে ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন, স্থানীয় নেতারা সব জানে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয় না। সবটাই দখল হয়ে গেলে আমি হাঁটব কোথা দিয়ে?’’ এর পরেই এ নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। সম্প্রতি টাউন ভেন্ডিং কমিটি বা টিভিসি-র বৈঠক হয়। সেখানেই গড়িয়াহাট দিয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা ঠিক হয়।

কিন্তু হকার-সমীক্ষার প্রথম দিনেই এ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ জায়গার বাইরে যে সমস্ত হকারেরা রয়েছেন, তাঁদের রাতারাতি সরানো যাবে কি? ফুটপাতে চক দিয়ে দাগ দেওয়া হলেও তা হকারেরা মানবেন তো? হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার বিষয়টিও কতটা বাস্তবায়িত করা যাবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ২০১৫ সালে শহরে নথিভুক্ত হকারের সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার। তা এত বছরে বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। হকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরাই জানাচ্ছেন, এই মূহূর্তে শহরে হকারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ছ’লক্ষ মানুষ। এত জনকে পুনর্বাসন দেওয়ার মতো জায়গা কোথায়?

তবে হকার সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দাস বললেন, ‘‘টাউন ভেন্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই চেষ্টার সুফল মিলবেই। কিছু নাকরার থেকে ধীরে ধীরে শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করার এইউদ্যোগ ভাল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy