Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Police

শহরে পাশ করবে পুলিশ? পরীক্ষা শুরু কয়েক ঘণ্টায়

মুদির দোকানেও ‘কোড’ নামে বাজি বিক্রির অভিযোগ. শহরতলির বেশ কিছু জায়গায় আবার দেদার শব্দবাজি তৈরির ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।

—ফাইল ছবি

—ফাইল ছবি

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫২
Share: Save:

মোট গ্রেফতার ১১৯০ জন। বিপজ্জনক ভাবে বাজি ফাটানোর অভিযোগে গ্রেফতার ৭৫৮। নিষিদ্ধ বাজি ফেটে মৃত্যু দু’জনের! শুক্রবার, কালীপুজোর আগের রাতে দক্ষিণের ডেপুটি কমিশনারের (ডিসি) অফিসে বসা পুলিশ আধিকারিক গত বছরের কালীপুজোর রাতের পরিসংখ্যান দিয়ে বলছিলেন, “এক রাতেই অত গ্রেফতার, ভাবুন! রাত সাড়ে আটটাতেও যেখানে গ্রেফতারির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৯, সেটাই রাত ১০টায় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬৯! রাত ১২টায় তা ৮০০ ছাড়িয়ে যায়। সভা-সমাবেশ, অন্য উৎসব, এমনকি দুর্গাপুজোও নেহাত প্রস্তুতি ম্যাচ। পুলিশের আসল পরীক্ষা তো কালীপুজোয়!’’

অন্যান্য বার মাত্রাতিরিক্ত শব্দের বাজি ফাটানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতে দু’ঘণ্টা আতশবাজি পোড়ানোয় ছাড় থাকত। কিন্তু এ বছর সব ধরনের বাজি পোড়ানো এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে আদালত। একই রায় দিয়েছে পরিবেশ আদালতও। রাজ্য সরকারও সেই নির্দেশ মেনে বাজিহীন কালীপুজো করার নির্দেশ জারি করেছে। ফলে এই রায় বলবৎ করতে এ বার কড়া অবস্থান নিতে হবে পুলিশকেও। তবে গত দু’দিন ধরেই শহরের বাজি ফাটানোর জন্য কুখ্যাত এলাকাগুলি থেকে বিনা বাধায় বাজি ফাটানোর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আজ, কালীপুজো এবং আগামী কাল দীপাবলির রাতের রাশ পুলিশ নিজেদের হাতে রাখতে পারবে তো? আলো বিক্রির দোকানের আড়ালে, এমনকি মুদির দোকানেও ‘কোড’ নামে বাজি বিক্রির অভিযোগ আসায় আশঙ্কা আরও বেড়েছে। শহরতলির বেশ কিছু জায়গায় আবার দেদার শব্দবাজি তৈরির ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।

তবে বহুতলগুলির ছাদে বাজি ফাটানো হলে কী ভাবে রোখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় বাহিনীর বড় অংশ। গড়িয়াহাট থানার এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, “ভবানীপুর, লেক, গিরিশ পার্ক, লোহাপট্টির মতো শহরের বহু এলাকায় দীপাবলিতে বহুতলের ছাদে বাজি ফাটানো আটকানো কঠিন হবে। প্রভাব খাটিয়ে, রীতির দোহাই দিয়ে অনেকেই বাজি ফাটানোর চেষ্টা করবেন।” বৌবাজার থানার এক পুলিশ আধিকারিকের আবার দাবি, “দু’দিন আগেই এক ব্যবসায়ী থানায় চিঠি দিয়ে পারিবারিক রীতি মানতে আতশবাজি ফাটানোর অনুমতি চাইতে এসেছিলেন। বারণ করে দিলেও কেউ বাড়ির ছাদে বাজি ফাটালে নজরে রাখা কঠিন হবে।”

আরও পড়ুন: এক কোটি কেজি ধূলিকণায় কালো হয়ে যাচ্ছে ফুসফুস!

বাইপাসের ধারের এক থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বলেন, “বহুতলে বাজি ফাটানো আটকাতে গিয়ে বালিতে বৃহস্পতিবারই ন’জন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন শুনলাম। আমাদেরও তেমন কিছুর মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি প্রবল।” বেলেঘাটা থানার পুলিশকর্মীর আবার প্রশ্ন, “করোনার জেরে কর্মীর অভাব রয়েছে। ছাদ তো দূর, প্রতি রাস্তা, প্রতি গলিতে ঢুকে নজরদারি চালানোর লোক কোথায়?”

কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও বললেন, “সব প্রতিকূলতা মাথায় রেখেই বিধি বলবৎ করার সব রকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যে কোনও আইনবিরুদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। মনে রাখতে হবে, বাজিকে বর্জন করে সকলে বিধি মানার জন্য সচেষ্ট হলে তবেই করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা সম্ভব।”

আরও পড়ুন: বাজি কেনাবেচায় তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের নিদান

এ প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে গত এপ্রিলে ন’মিনিটের ‘অকাল দীপাবলি’র কথা। প্রধানমন্ত্রীর প্রদীপ, মোমবাতি, টর্চ জ্বালানোর আহ্বান শুনে অনেকেই দেদার শব্দবাজি ফাটাতে শুরু করেছিলেন। তড়িঘড়ি ৯১ জনকে গ্রেফতার করতে হয় পুলিশকে। তাদের প্রশ্ন, লকডাউনের মধ্যে ওই ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন উৎসব-যাপন হলে আসল উৎসবের রাতে মানুষের সংযম থাকবে তো?
উৎসব না করোনা রোধ, শহর গুরুত্ব দিচ্ছে কিসে, তারও উত্তর মিলবে আগামী দু’দিনেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Firecrackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy