পম্পা দাস (প্রামাণিক)। —নিজস্ব চিত্র।
কাদম্বিনী মরে প্রমাণ করেছিল যে, সে মরেনি। কাকদ্বীপের অ্যাসিড-দগ্ধ গৃহবধূ পম্পা দাস (প্রামাণিক) বুঝে উঠতে পারছেন না, তিনি যে অ্যাসিডেই জ্বলছেন, সেটা প্রমাণ করবেন কী ভাবে!
এসএসকেএম হাসপাতালের নথিতে অ্যাসিড-হামলার কথাই লেখা আছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, অ্যাসিড নয়। ‘গরম জল-টল’ পড়ে থাকতে পারে! দেড় বছর আগের এক দুপুরে স্টোভে রান্নার সময় স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িরা গরম তরল পম্পার চোখেমুখে ঢেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। অথচ এসএসকেএম ঘুরে গ্রামে ফিরলে উল্টে পুলিশের তোপের মুখে পড়তে হয় সেই বধূকেই!
২২ বছরের গৃহবধূ পম্পা যে অ্যাসিড-হানার শিকার, তা মানতেই চায়নি কাকদ্বীপের প্রান্তে হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার পুলিশ। অনেক আবেদন-নিবেদনের পরে আগুনে পোড়ার মামলা লেখা হলেও তদন্তকারীরা নড়ে বসেননি। ডান চোখে সামান্য দৃষ্টি নিয়ে টিকে থাকা পম্পা গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন বাবদ প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের কানাকড়িটিও জোটেনি এখনও। এমনকি পাননি প্রতিবন্ধীর শংসাপত্রও। উল্টে পম্পাই ভুল বোঝাচ্ছেন বলে কার্যত অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বার তিনেক অস্ত্রোপচারে মুখ, চোখের পাতার আদল ফিরলেও মুখ তুলে কথা বলতে গেলে দলা পাকানো গলার কাছটা চড়চড় করে এখনও। ভারী খাবার খেতে গেলে গলায় লাগে। স্বামী অরিন্দম প্রামাণিকের ‘গুণপনা’র ফিরিস্তি দিতে গিয়ে এখনও চোখে জল আসে পম্পার। বরের মারধর, অন্য মহিলা-সংসর্গের কথা ২০১৭-র গোড়ায় এক বার থানায় জানিয়েছিলেন পম্পা। অশান্তি মেটাতে পঞ্চায়েতের মাথারা সালিশি করেন। ক্ষতবিক্ষত পম্পা কাঁদেন, ‘‘বাবা-দাদারা বাপের বাড়ি ফেরাতে চাইলে আমিই বলেছিলাম, সংসার করব। কী যে ভুল করেছি!’’
উপকূল থানার অফিসার জাফর আলম ফোনে বললেন, ‘‘মেয়েটির মৃগী ছিল। মুখে গরম জল-টল পড়তে পারে। কেউ অ্যাসিড ছোড়েনি।’’ আর পম্পার ননদ মনীষার দাবি, নিছকই দুর্ঘটনা। পম্পা জানান, ২০১৭-র ২৩ অক্টোবর দুপুরে স্বামী ছাড়াও শ্বশুর বেণীমাধব প্রামাণিক, শাশুড়ি মমতা প্রামাণিক, ননদ মনীষা মণ্ডল, ননদাই জগবন্ধু মণ্ডল, তুতো ভাশুর তরুণ প্রামাণিক, জা রঞ্জিতা প্রামাণিক একসঙ্গে হামলা চালান তাঁর উপরে। ‘‘অরিন্দম, জগবন্ধুদারা ঘিরে ধরেছিল। তার পরে একটা বোতল থেকে কী ছুড়ে দিল,’’ বলেন পম্পা।
ওই গৃহবধূর ননদাই এলাকায় প্রভাবশালী। শ্বশুর বেণীমাধববাবু স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক। তবু ২০১৩-র জুনে বিয়ের এক বছরের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে কাকদ্বীপের সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ে বিএ পড়া বন্ধ হয়ে যায় পম্পার। একটি মানবাধিকার সংস্থার যোগসূত্রে পম্পার হয়ে মামলা লড়ছেন ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটিকে আগেও বালিশ চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে। সব জেনেও পুলিশের বসে থাকাটা অদ্ভুত!’’ অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পম্পার প্রাপ্য বলে মনে করেন তিনি।
‘‘অ্যাসিড-হানাকে লঘু করতে আগুনে পোড়ার ঘটনা বলে চালানোর নমুনা আরও রয়েছে। অন্তত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য ১৫ দিনেই। দিল্লি, হরিয়ানা এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় ঢের তৎপর,’’ বললেন গোটা দেশে অ্যাসিড-হানার প্রতিকারে সক্রিয় অ্যাসিড-হামলার শিকার শাহিন মালিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy