সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছবি: সারমিন বেগম।
মঙ্গলবার ‘স্বাস্থ্য অভিযান’-এর ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে মিছিল করে স্বাস্থ্য ভবনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের ১০০ মিটার দূরেই তা আটকে দেওয়া হয়। সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটতে থাকে। নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে অবস্থান চালিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়ে নবান্নে ডেকেছিলেন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ইমেল পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই ইমেলের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে নবান্ন ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে টানা ধর্না চালাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁদের দাবি মানা না পর্যন্ত অবস্থান চলবে। সেই অবস্থান ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। এখনও প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক উত্তর মেলেনি বলে দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। বুধবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা জানান, বুধবার ভোরে মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল পাঠিয়েছেন। সেই ইমেলে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, আলোচনা করতে তাঁরা প্রস্তুত। তাঁদের ৩০ জনের প্রতিনিধি দলকে বৈঠকে থাকার অনুমতি দিতে হবে। বৈঠকের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সরাসরি সম্প্রচারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে ইমেল পাঠানো হয়েছিল, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কোনও উল্লেখ ছিল না। বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা আজ ভোর ৩টে ৫০ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল করেছিলাম। আমাদের কিছু দাবি ছিল। সেই দাবিই ইমেল করে জানিয়েছিলাম। তবে সেই ইমেলের কোনও উত্তর এখনও পাইনি।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে প্রশাসনের যে ইমেল চালাচালি হয়েছে, তার বয়ান পড়ে শোনানো হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিবের পাঠানো ইমেলে শুধু ‘স্যর’ লেখা নিয়ে আবারও আপত্তি তুললেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, এই আন্দোলনে প্রচুর সংখ্যক মেয়ে রাতের পর রাত জাগচ্ছেন। আন্দোলনে পা মেলাচ্ছেন। সেখানে শুধু ‘স্যর’ লিখে তাঁদের ‘অপমান’ করা হয়েছে বলে জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা।
২৩ ঘণ্টা পার। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এখনও নিজেদের দাবিতে অনড় তাঁরা।
লালবাজারের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান উঠেছিল ২২ ঘণ্টা পর। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের সামনে তাঁদের ধর্না সেই সময়ও পেরিয়ে গেল। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
বুধবার দুপুরে আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে পৌঁছতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাঁকে দেখেই অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারেরা‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিলেন। যদিও অগ্নিমিত্রার দাবি, তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগাতে আসেননি। দলীয় কার্যালয়ে কাজে এসেছেন।
ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা পেরিয়েছে। তবে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসা জুনিয়র ডাক্তারেরা অনড় নিজেদের দাবিতে। তাঁদের স্পষ্ট কথা, ‘‘দাবি না মিটলে অবস্থান চলবে।’’
মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে ইমেল পাঠিয়ে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নবান্নে আলোচনায় বসতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ইমেলের ভাষা নিয়ে আপত্তি ছিল আন্দোলনকারীদের। রাত পেরিয়ে সকাল হলেও এখনও জট কাটেনি। তবে আন্দোলনকারীরা জানালেন, তাঁরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে ১০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে দেখা করতে। কিন্তু আমাদের দাবি, অন্তত ২৫ জন যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, আলোচনায় বসলেই যে অবস্থান তুলে নেওয়া হবে তা নয়। দাবি পূরণের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা দেখার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। সকাল সকালই অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন তাঁরা। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের অভিভাবকেরা এসেছেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন খাবার। সেই খাবারই আন্দোলনকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। অন্য দিকে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য।
দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থানেই বসে থাকবেন তাঁরা, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের কথায়, সরকারের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করলে, তবেই অবস্থান তুলবেন। সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনকারীদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিল। সোমবার আরজি কর মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা কাজে ফিরুন।’’ বেঁধে দেন সময়সীমাও। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি। সেই সময় পেরিয়ে গেলেও নিজেদের দাবিতে অনড় জুনিয়র ডাক্তারেরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে এসেছেন সিনিয়রেরাও। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তাঁরা।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারা রাত স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাতে তাঁদের অবস্থান মঞ্চে এসেছিল নির্যাতিতার পরিবার। সেই মঞ্চ থেকে আবারও সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তারা। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘আশা করছি প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আশা করছি, আমরা বিচার পাব।” নির্যাতিতার মা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলছেন, আমার কাছে এটাই উৎসব।” নির্যাতিতার দাদা, কাকিমার গলাতেও প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ।
পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মঙ্গলবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও এক দফা। মোট ছ’দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীকে দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থ, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চম, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। এ ছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফাও চেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে ছ’দফা দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাত পেরিয়ে সকাল, কিন্তু অবস্থান তুলতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসন সদর্থক ভূমিকা দেখাচ্ছে না। আন্দোলনের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা নেই। দাবি না মিটলে পথেই থাকবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy